স্পোর্টস ডেস্ক : বেন ডাকেটের রেকর্ড গড়া শতকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু জশ ইংলিসের ব্যাটিং তা-বে সেই রেকর্ড স্থায়ী হলো প্রায় চার ঘণ্টা। ডানহাতি এই ব্যাটারের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে আইসিসির যে কোনো ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) লাহোরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের প্রথম অংশটা ছিল ডাকেটময়। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ১৬৫ রানের ওপর ভর করে ৮ উইকেটে ৩৫১ রানের সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। জবাবে পঞ্চম উইকেটে অ্যালেক্স ক্যারিকে নিয়ে ১৪৬ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়েন ইংলিস। ১৫ বল হাতে রেখে তিনি জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে।
এর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার। ২০১৭ সালের সবশেষ আসরে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেট হাতে রেখে ৩২২ রান তাড়া করেছিল তারা।
: এদিন দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার পর হারের লজ্জার রেকর্ড সঙ্গী হলো জশ বাটলারের দলের। তাদের দেয়া ৩৫২ রানের লক্ষ্য ১৫ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে টপকে গেছে (৩৫৬ রান) অজিরা। যেখানে ডাকেটের সেঞ্চুরির জবাব দিয়েছেন জশ ইংলিস। এই অজি ব্যাটার ৮৬ বলে অপরাজিত ১২০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি ছক্কা ও ৮ চারে।
এই জয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্বরেকর্ড দেখেছে ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার ৩৫৬ রান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ। রান তাড়ায়ও সর্বোচ্চ। এই জয়ের মাধ্যমে আইসিসির ওয়ানডে প্রতিযোগিতায় (বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও নিজেদের নামে লেখালো অজিরা। শুধু বিশ্বরেকর্ড নয়, এর বাইরেও কিছু দলীয় রেকর্ড গড়েছে অজিরা।
এই ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগের রেকর্ড ৩৫৬ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সর্বোচ্চ রান তাড়া করে কোনো দলের জয়ের রেকর্ড এটি। এর বাইরে, পাকিস্তানের মাটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও হয়েছে এই ম্যাচে।
ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। পাওয়ার প্লে-তে সাজঘরে ফিরে যান ‘ডেঞ্জারম্যান’ ট্রাভিস হেড ও স্টিভেন স্মিথ। হেড যখন সাজঘরে ফেরেন (৬ রানে) তখন অজিদের সংগ্রহ মাত্র ২১। স্মিথ ফেরার সময় দলীয় রান ২৭।
এরপর ওপেনার ম্যাথু শর্ট ও লাবুশানে জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে অজিরা। ব্যক্তিগত অর্ধশতক থেকে ৩ রান দূরে থাকতে লাবুশানেকে সাজঘরে ফিরিয়ে ৯৫ রানের এই জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ। এই জুটি ভাঙার পর অর্ধশতক পাওয়া ওপেনার শর্টও বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি। তিনি ব্যক্তিগত ৬৩ রানে লিভিংস্টোনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তখন অস্ট্রেলিয়ার রান ১৩৬, জয় থেকে ২১৬ রান দূরে। এমন পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছিল, সহজ জয়ই পাবে ইংলিশরা। তবে এরপরই ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে ম্যাচের দৃশ্যপট।
উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি রান রেটের চাপ সামলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জশ ইংলিস ও অ্যালেক্স ক্যারি। ধীরে ধীরে হাত খুলে মারতে থাকেন এই দুই ব্যাটার। তাদের ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটিতে জয়ের স্বপ্ন টিকে থাকে অজিদের।
ব্যক্তিগত ৬৯ রানে ক্যাচ দিয়ে ক্যারি সাজঘরে ফিরলে আবারও কিছুটা ভয় তৈরি হয় অজি শিবিরে। তবে শেষ দিকে ম্যাক্সওয়েল ও ইংলিসের ঝড়ে ১৫ বল বাকি থাকতেই রেকর্ড জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। ৩৬ বেল ৭৪ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকে ইংলিস-ম্যাক্সওয়েল জুটি। ম্যাক্সি ১৫ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে।
ইংলিসের ১২০ রানের ইনিংসটি তার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। এমন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসের সুবাদে অবধারিতভাবেই তার হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। এর আগে, লাহোরে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বেন ডাকেটের ১৬৫ ও জো রুটের ৬৮ রানের ইনিংসে ভর করে ৩৫১ রানের বড় সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।
আপনার মতামত লিখুন :