স্পোর্টস ডেস্ক : আইসিসির আসরগুলোতে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা। ২০১৭ সালে এই টুর্নামেন্টের সবশেষ আসরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে শেষ চারে পৌঁছেছিল মাশরাফি বিন মোর্তজার দল। প্রায় আট বছর পর আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘মিনি বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই টুর্নামেন্ট। মাঠের লড়াই শুরুর আগে দেখে নেওয়া যাক চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সগুলো। - অলআউট স্পোর্টস
এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। খেলেছে মোট ১২টি ম্যাচ, যার মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র দুটিতে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সবশেষ আসরে সেমি-ফাইনালে উঠলেও সেখানে আছে বৃষ্টির সহায়তাও।
আইসিসি নকআউট ট্রফি নাম নিয়ে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো মাঠে গড়ায় এই টুর্নামেন্ট। উদ্বোধনী আসরের স্বাগতিক হলেও খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথমবারের এই টুর্নামেন্টে তারা অংশ নেয় ২০০০ সালে। সেবার আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
১১ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত নকআউট পর্বের এই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রাক-কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। কেনিয়ার নাইরোবিতে আগে ব্যাট করে জাভেদ ওমর বেলিমের অপরাজিত ৬৩ ও অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ৪৬ রানের ওপর ভর করে ৮ উইকেটে ২৩২ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল তারা। জবাবে অ্যালেক স্টুয়ার্ট ও নাসের হুসেইনের জোড়া ফিফটিতে বাংলাদেশকে উড়িয়ে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় ইংলিশরা।
২০০২ সালের পরের আসরে নকআউট ট্রফি বদলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নাম হিসেবে পরিচিতি পায় এই টুর্নামেন্ট। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সেই আসরে এক নম্বর পুলে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও টুর্নামেন্টের তখনকার শিরোপাধারী নিউ জিল্যান্ড।
প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট হয়ে তারা ম্যাচ হেরেছিল ৯ উইকেটে। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আরও বাজে অবস্থা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে যায় তারা।
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৪ সালের আসরেও একই চিত্র ছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের। সেবার ‘বি’ গ্রুপে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এবারও দলের সঙ্গী ছিল হতশ্রী ব্যাটিং। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাত্র ৯৩ রানে অলআউট হয়ে দল ম্যাচ হারে ৯ উইকেটে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ২৭০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৩১ রানে।
২০০৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আসরে নিজেদের প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হাবিবুল বাশারের দল জয় পায় ১০১ রানে। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে শাহরিয়ার নাফিসের অপরাজিত ১২৩ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ২৩১ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। জবাবে তিন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, আবদুর রাজ্জাক ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে ১৩০ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩৭ রানে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হারায় পরের রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটের মধ্যে থাকতে না পারায় ২০০৯ ও ২০১৩ সালের আসরে খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। তবে ২০১৭ সালের আসরে ফিরেই টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স করে তারা।
মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডেতে নিজেদের সেরা সময় পার করা দল সেবার ‘এ’ গ্রুপে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডকে। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবালের ১২৮ রানের ওপর ভর করে ৬ উইকেটে ৩০৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তবে বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ে ৮ উইকেটের জয় পায় ইংলিশরা।
নিজেদের পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের সামনে যেন মুখ থুবড়ে পড়ে টাইগার ব্যাটিং-অর্ডার। তবে তামিমের ৯৫ রানের সুবাদে ১৮২ রানের সংগ্রহ পায় তারা। জবাবে ডেভিড ওয়ার্নারের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে জয়ের পথেই ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ১৬ ওভারের পর বৃষ্টি নামায় শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় ম্যাচ। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে অজিদের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৮৩ রান থাকা।
এর আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচটিও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। ফলে নিজেদের শেষ ম্যাচে জিতে শেষ চারের ওঠার সমীকরণ মেলাতে খেলতে নামে সাকিব-তামিমরা। কিউইদের ২৬৫ রানে আটকে রেখে সে আশা আরও বাড়িয়ে দেন বোলাররা।
তবে রান তাড়ায় ৩৩ রানের ভেতর প্রথম চার ব্যাটারকে হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঐতিহাসিক ২২৪ রানের জুটির সুবাদে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। সাকিব করেন ১১৪ রান। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে।
ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দলকে আবারও হতাশ করেন বোলাররা। আগে ব্যাট করে তামিম-মুশফিকের জোড়া ফিফটিতে ৭ উইকেটে ২৬৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি ও বিরাট কোহলির অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংসে হেসেখেলে ৯ উইকেটের জয় পায় ভারত।
প্রায় আট বছর পর আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি এই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ওয়ানডেতে একদমই ছন্দে নেই দল। নিজেদের খেলা সবশেষ ৬ ম্যাচের ৫টিতে হেরেছে তারা। তামিম-সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাও নেই এবারের দলে। ফলে তুলনামূলক তরুণ দল নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নবম আসরে নাজমুল হোসেন শান্তর দল কী করে তা দেখার অপেক্ষায় আছে কোটি সমর্থক।
আপনার মতামত লিখুন :