ইউএনপিএফআইআইয়ের ২৪তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনটি আগামী ২ মে শেষ হবে।
পুনর্বাসিত বাঙালিদের পার্বত্য এলাকার বাইরে সম্মানজনকভাবে প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ জাতিসঙ্ঘে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন সন্তু লারমার নাতনি অগাস্টিনা চাকমা।
জাতিসঙ্ঘের আদিবাসী ইস্যু-বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (ইউএনপিএফআইআই) ২৪তম অধিবেশনে আদিবাসী নারীর অধিকার-বিষয়ক আন্তঃআঞ্চলিক, আন্তঃপ্রজন্মগত ও বৈশ্বিক সংলাপ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি ও সন্তু লারমার নাতনি অগাস্টিনা চাকমা এ দাবি জানান।
সোমবার (২১ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে ইউএনপিএফআইআইয়ের ২৪তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনটি আগামী ২ মে শেষ হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী অধিকার, সংখ্যালঘু ও নারী বিষয়ক-ইস্যু ও মানবাধিকারের জন্য অনলাইন সংবাদমাধ্যম হিল ভয়েস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অধিবেশনে পিসিজেএসএসের তিনজন প্রতিনিধি চঞ্চনা চাকমা, অগাস্টিনা চাকমা ও মনোজিত চাকমা অংশগ্রহণ করেছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের আদিবাসীদের পক্ষে কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, আদিবাসী অধিকার-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থার (ইএমআরআইপি) বিনোতা ময় ধামাই ও টনি চিরান অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।
অধিবেশনে অগাস্টিনা চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (সিএইচটি চুক্তি) বাস্তবায়নের সাথে আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সিএইচটি চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন এখনো অর্জন থেকে অনেক দূরে।
বিশেষ করে, অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে বাঙালী বসতি স্থাপনকারীদের স্থানান্তর, আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ইত্যাদি কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালে মুসলিম বসতি স্থাপনকারীদের জুম্ম নারী ও মেয়েদের উপর ১২টি যৌন সহিংসতার রেকর্ড রয়েছে এবং এই ঘটনাগুলোতে ১৬ জন জুম্ম নারী ও মেয়ে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যদিও কিছু অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু দুর্বল অভিযোগ ও পুলিশের দুর্বল ভূমিকার কারণে অভিযুক্তদের কয়েকদিন পরেই জেল থেকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনায় জড়িত কোনো ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়নি এবং সেই অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হয়নি। বিচারিক ব্যবস্থা থেকে অব্যাহতির সংস্কৃতির কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে জুম্ম নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
সন্তু লারমার নাতনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে স্থায়ী ফোরামকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং তা করার জন্য স্থায়ী ফোরামকে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়নের স্বার্থে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজি করাতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারকে আদিবাসী নারীদের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করতে হবে।