শিরোনাম
◈ জাল সনদে কর্মসংস্থান আর নয়, কুয়েত সরকারের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু ◈ মেসির রেকর্ড ছোঁয়া গোলেও জয় পে‌লো না ইন্টার মায়া‌মি ◈ ওয়ান‌ডে বিশ্বকা‌পের বাছাই প‌র্বের প্রস্তুতি ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ ◈ পৃথিবীর প্রথম স্থায়ী সাগরতল গবেষণাগার নির্মাণ করছে চীন ◈ এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, কমেছে তেলের দাম ◈ মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা ◈ দুর্ঘটনায় জামায়াতের শিক্ষাসফরের দুই বাস, ৩ কর্মী নিহত, আহত ৩০ ◈ থাইল্যান্ডে ও‌পেন সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পর এবার রৌপ‌্য পদক জিত‌লেন বাংলাদেশের রাফি ◈ ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে একজোট হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো ◈ ম্যানচেস্টার ইউনাই‌টে‌ডের বিরু‌দ্ধে ড্র কর‌লো ম‌্যান‌চেস্টার সি‌টি 

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৫২ দুপুর
আপডেট : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলার তদন্ত শেষ পার্যায়ে, দুই মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিল 

মহসিন কবির: জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগে নেতাদের নামে মামলা তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে চায় পুলিশ।  

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ১৪৯৯টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে ৫৯৯টি আর অন্যান্য মামলা হয়েছে ৯০০টি। ৫৯৯টি হত্যা মামলার মধ্যে ৬০ ভাগ মামলার তদন্ত শেষের দিকে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে যাচ্ছে পুলিশ। 

এসব মামলার চার্জশিটে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে হত্যাকা-ে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবং কারাগারে থাকা ও বিদেশে পলাতক বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত হচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রের তথ্য বলছে, হত্যা মামলার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) থানাগুলোয় সর্বাধিক ৩৩৩টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জে ১৪৮টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ২০টি, রাজশাহী রেঞ্জে ২২টি, সিলেট রেঞ্জে ১৫টি, জিএমপিতে ১৬টি, সিএমপিতে ১০টি, এসএমপিতে ৩টি, খুলনা রেঞ্জে ১০টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, আরএমপিতে ৫টি এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৭টি মামলা রুজু হয়েছে।

জুলাই-আগস্টের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে  পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বাহারুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্ত দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য নানাভাবে আমরা মামলাগুলোর তদন্ত তদারকি করছি। ইতোমধ্যে হত্যা মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করছি, এপ্রিলের শেষ দিকে কিছু মামলা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা যাবে। মে মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলার তদন্ত শেষ হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশপ্রধান বলেন, বেশকিছু হত্যা মামলায় পতিত সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ আনা হচ্ছে। নিরীহ কেউ যাতে মামলার চার্জশিটে আসামি না হয় সে জন্য আমরা তদন্ত কর্মকর্তা এবং তদারকি কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টের ঘটনায় রুজু করা মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিবিড় তদারকি করা হচ্ছে। আইজিপি বাহারুল আলম সশরীরে এবং অনলাইনে মামলাগুলোর তদন্তের হালনাগাদ তথ্য জানছেন। মামলার ত্রুটি-বিচ্যুতি ঠিক করে দিচ্ছেন।

মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত তদারকি করতে সারাদেশে প্রত্যেকটি রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন সমন্বিত এলাকার জন্য একজন করে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সভাপতি করে ১০টি মেন্টর (পরামর্শক) কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স্বয়ং আইজিপির উপস্থিতিতে প্রতিদিন বিভিন্ন মেন্টর কমিটির সঙ্গে নিয়মিত সভা করে মামলার তদন্তকাজে নিবিড় মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র আরও বলেছে, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতার বিষয়টি সার্বিক তদন্তের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলেছিল, যা বিগত চার মাসে ধারাবাহিকভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

এ ছাড়া মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আইজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিতে স্থানীয় রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটনের তদন্ত কর্মকর্তা, পিপি, বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিচারকদের সমন্বয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও মামলার সার্বিক তদন্তে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক আইনগত পরামর্শ দেওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ আইন বিশারদকে অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাডভাইজার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

৫ আগস্টের পর যে ৫৯৯টি হত্যা মামলা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশেই শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সালমান এফ রহমান, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনর রশীদসহ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপিরা আসামি। অধিকাংশ হত্যা মামলায় সর্বনিম্ন একশন করে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলায় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, আমলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বাদীরা প্রভাবিত হওয়ার কারণে অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও মামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয় বলে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। যে কারণে আদালতে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়- এমন নিরপরাধ লোকজনকে আসামি না করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশের থানাগুলোতে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

যেসব মামলার এজাহারে ঢালাওভাবে আসামি রয়েছে, তাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে অযথা হয়রানি না করতেও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন কার্যালয়ে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে থাকছেন শেখ হাসিনা। সরকারের এসব আদেশ বাস্তবায়নকারী হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। এ দুই আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে এবং সাবেক আইজিপি মামুন কারাগারে আছেন। 

শুক্রবার ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতে পলাতক শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়