জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি। এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরূদ একসঙ্গে করা হয় তাও হাসিনার সমান হবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যারা গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে তাদেরকে পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমার-আপনার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগরের আয়োজনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীরা- ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাচতে চাই’; ‘বিচার বিচার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলো তাকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এরপর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে, পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয় আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র কাঠামোর বাইরে রেখে। আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ এদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। আপনারা যদি বিচার করতে পারেন আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না। এনসিপি যতদিন আছে আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না, তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ। ৫ আগস্টের পর ভারতের হাতে থাকা আওয়ামী লীগের সুতা আমরা কেটে দিয়েছি।
কিছু প্রশ্ন তুলে হাসনাত বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে রেখে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেন তাদের আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ২০১৪ সালে যখন ৫৩ আসনে ভোট হয়নি তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছিলো তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? ২০২৪ এ ডামি নির্বাচন হলো তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? যেই দেশে ২ হাজার মানুষের রক্তের দাগ শুকায়নি, সেই দেশে আওয়ামী লীগকে ফিরতে দেওয়া যাবে না। যে বাংলাদেশে শাপলা, পিলখানা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিচার, আবরার হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার হয় নাই সেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের সঙ্গে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ইনস্টিটিউটের বিপক্ষে না। আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দেবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেন তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আমরা এখনো কিছুই পাইনি। আপনারা এখনো আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে পারেননি। আপনারা অতি দ্রুত বিচার কাজ শুরু করুন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন।
বিক্ষোভ সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম আইনি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। উৎস: ঢাকা পোষ্ট ও এখন টিভি।