শিরোনাম
◈ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মিথ্যা তথ্য পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রে: মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্স  ◈ স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৫ হাজার ◈ দেড় ঘন্টার বেশি সময় পর ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ সমাপ্ত ◈ হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা ◈ অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ◈ মুস্তাকিমের অনন্য রেকর্ড, ৫০টি চার ও ২২ ছক্কায় করেছেন ৪০০ রান, দল জিতেছে ৭৩৮ রানে ◈ ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহমিদুলকে জাতীয় দলে নেওয়ার দাবিতে লং মার্চের ডাক ◈ ঈদের আগে মার্চ মাসের বেতন পাচ্ছেন না ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ◈ অসহায় গ্রামবাসীদের পাশে ফুটবলার হামজা চৌধুরী ◈ নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা দুই ম্যাচ হেরে গেলো পাকিস্তান

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০৯:৩১ সকাল
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১১:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বড় দলগুলো মতামত জানায়নি, মৌলিক সংস্কার প্রসঙ্গে দ্বিমত

নয়া দিগন্ত; আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাদের আলোচনা শুরু করবে। এর পর স্বাধীনতা দিবস ও ঈদসহসহ ১০ দিন ছুটির জন্য আলোচনা মুলতবি থাকবে। ছুটির পর সিরিজ আলোচনা চালাবে ঐকমত্য কমিশন।

রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বড় দলগুলো এখনো তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেয়নি। তবে বিএনপি ও জামায়াতসহ সব বড় দল এটি নিয়ে কাজ করছে। তারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে তাদের মতামত জানাবে। এর মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাদের আলোচনা শুরু করবে। এর পর স্বাধীনতা দিবস ও ঈদসহসহ ১০ দিন ছুটির জন্য আলোচনা মুলতবি থাকবে। ছুটির পর সিরিজ আলোচনা চালাবে ঐকমত্য কমিশন। ঈদের আগেই বিএনপি জামায়াত ও সিটিজেন পার্টিসহ বড় দলগুলোর মতামত পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিএনপি : ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’, দলীয় এমন অবস্থানের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া প্রস্তাবনাগুলোর জবাব প্রস্তুত করছে বিএনপি। সংবিধান, জনপ্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই টানা বৈঠক করছে দলটি।

জানা গেছে, বিএনপি তিন বছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল, তার আলোকেই ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রে দলীয় অবস্থান তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলোতেই মূল ফোকাস করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে দলটি তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশনে জমা দিতে পারে।

জানা গেছে, বিএনপি সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের দেয়া প্রস্তাবনাগুলোর ওপর দলের মতামত প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার থাকার বিষয়ে দলটি তাদের ঐকমত্যের কথা জানাবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে দলটি ইতিবাচক মতামত দেবে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই টার্মে সীমিত করার বিষয়ে দলটি একমত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে টানা দু’বার না থাকার পক্ষে মত ব্যক্ত করা হবে। আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাবে দলটি একমত নয়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, যার একটি নি¤œকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং একটি উচ্চকক্ষ, এটিতে দলটির দ্বিমত নেই । তবে উচ্চকক্ষের সদস্য নি¤œকক্ষে প্রাপ্ত আসনের আনুপাতিক ভিত্তিতে নির্বাচনের পক্ষে মত জানাবে দলটি। প্রাদেশিক সরকারের ফর্মুলায় রাজি নয় বিএনপি। সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিষয়েও দলটির আপত্তি থাকবে।

জানা গেছে, সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনের বিধান করা এবং জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রভাবিত করে এমন কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে আইনসভার উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন নেয়ার বিষয়ে দলটি ইতিবাচক মতামত দেবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কার্যাবলিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন করা এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (জুডিশিয়াল আপয়েন্টমেন্টস কমিশন গঠন করার বিষয়ে দলটি একমত পোষণ করে মতামত দেবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেছেন, ‘কমিশনের রিপোর্টগুলো নিয়ে আমরা অনুশীলন-বিশ্লেষণ করছি, কাজ করছি; বিশ্লেষণ শেষে আমরা মতামত দিব। ¯েপ্রডশিটের মতামতকে আমরা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ, এখানে আমরা সব জিনিসকে ইন-ডিটেইল (বিস্তারিত) বর্ণনা করতে পারব না। আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের ওপর বিস্তারিত মতামত তুলে ধরব। সাথে স্প্রেডশিটটাও থাকবে।

বিএনপি ইতোমধ্যে সংস্কারবিষয়ক কয়েকটি ইসুতে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করেছে। ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না তারা। দলটি মনে করছে, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর একটি সংবিধান রয়েছে। এই সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। যে সময়ে দেশে কোনো সংবিধান রচিত থাকে না, মানে একটা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, তখন গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। দলটি মনে করে, বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে একে দলীয়করণ করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে এবং নিজেদের পক্ষে সাজিয়েছিলেন। এ কারণে সংবিধানে যে ব্যত্যয় বা বিচ্যুতি হয়েছে, সেজন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক মতৈক্যে সে সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ।

রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক মতামত পাঠাতে গত ৬ মার্চ দেশের ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে চিঠি দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে দলগুলোকে স্প্রেডশিটে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিক ভাবে একমত’ এই তিনটি অপশনের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, সংস্কারের প্রস্তাবনাগুলোতে বিএনপি ও তার মিত্ররা একই কিংবা কাছাকাছি মতামত তুলে ধরবে। ঐকমত্য কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার পর এটা নিয়ে যুগপতের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন থেকে গত ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত পাঠাতে বলা হলেও একটু সময় নিয়ে কাজটি শেষ করতে চায় বিএনপি। মিত্রদের সাথে আরো আলোচনা এবং দল ও দলের বাইরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করা হচ্ছে। টিক চিহ্নের পাশাপাশি কেন দলটির এমন অবস্থান তা লিখিত আকারেও তুলে ধরবে দলটি। আগামী সপ্তাহে দলটির তাদের মতামত জানাতে পারে।

জামায়াত : দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী দলের বিভিন্ন ফোরামে ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সুপারিশের জন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

যতদূর জানা গেছে, জামায়াত সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের ব্যাপারে একমত। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন নি¤œকক্ষ নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে ১০০ আসন নির্ধারণের ব্যাপারেও দলের মত ইতিবাচক। ১০৫ আসনের উচ্চকক্ষে বাকি পাঁচটি রাষ্ট্রপতির মনোনয়নের কথা বলা আছে সংস্কার কমিনর সুপারিশে।

সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করা এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবেও জামায়াত মোটমুটি একমত। দু’বারের বেশি একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিষয়েও জামায়াত এক মত হবে বলে জানা গেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং সে সরকারের অধীনে সংসদ ও স্থানীয় উভয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জামায়াত একমত পোষণ করবে বলেও একটি সূত্র উল্লেখ করেছে। তবে জামায়াত সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রাদেশিক ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে সেটির সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কথা বলতে পারে।

বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম নয়া দিগন্তকে বলেন, সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে আমাদের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। আমরা আমাদের মতামতের বিষয়টি ঠিক করছি। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এজন্য আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছ থেকে সময় নিয়েছি। আশা করি এ সপ্তাহের শেষের দিকে আমরা আমাদের মতামত জমা দিতে পারবো।

নাগরিক পার্টি : নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব (দফতর) সালেহ উদ্দিন সিফাত নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা ঐকমত্য কমিশনের কাছে এখনো আমাদের সুপারিশগুলো জমা দেইনি। আমাদের এটি নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি দুই-তিন দিনের মধ্যে আমরা মতামত জমা দিতে পারব।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, নাগরিক পার্টি সংস্কার কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করবে।

১০৮টি প্রস্তাবে একমত এবি পার্টি : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১০৮টি প্রস্তাবে একমত, ৩২টিতে দ্বিমত এবং ২৬টিতে আংশিক একমত পোষণ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে লিখিত মতামত দিয়েছে এবি পার্টি। সেখানে দলটির পক্ষ থেকে কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে এমন মতামত জানানো হয়েছে।

পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক ও ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলির সমন্বয়ে একটি টিম গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এই লিখিত মতামত জমা দেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে মতামত গ্রহণ করেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আলী রীয়াজ, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

গত ৬ মার্চ সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেই প্রেক্ষিতে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কার্যালয়ে কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক পূরণকৃত স্প্রেডশিট জমা দেয় এবি পার্টি। এবি পার্টি তাদের মতামতে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে ছয়টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। এতে সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে আপত্তি, প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার দ্বিমত, সংবিধানের সংশোধনী উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন ও গণভোটের বিধানকে সমর্থন এবং প্রার্থীর বয়সসীমা ২১-এর পক্ষে লিখিত মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে।

এখানে সর্বমোট ছয়টি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রস্তাবনা হলো- নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে। এ উপায়ে সংবিধান সংশোধন বর্তমান সংবিধানের আলোকে অগ্রহণযোগ্য। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৩ (১)(খ) এর বিধান মোতাবেক রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতার মাধ্যমে সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তন বা রহিত করা যায় না। তাই বর্তমান সংবিধান স্থগিত বা বাতিল না করে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা বর্তমান সংবিধান সাপেক্ষে বেআইনি। তবে, বর্তমান সংবিধান স্থগিত করে জুলাই রেভুল্যুশনের স্পিরিটের আলোকে প্রস্তাবিত সাংবিধানিক বিধানসমূহ পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করে নতুন সংবিধান পুনর্লিখন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আপিল বিভাগের কাছে সরকার অধিকতর সাংবিধানিক ব্যাখ্যা চাইতে পারেন।

অন্য দিকে, অবশিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাবনা সার্বিক বিবেচনায় দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ বলে মনে করে এবি পার্টি। এমন পরিস্থিতিতে এবি পার্টি স্প্রেডশিটসমূহে উল্লিøখিত সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে আইনি সম্ভাব্য জটিলতা থাকা সত্ত্বেও প্রথম প্রস্তাবনাকেই (নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে) বেছে নিয়েছে। তা ছাড়া, যেসব প্রস্তাবনায় সংবিধান সংশোধনের সম্ভাব্য উপাদান নেই সেসব ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাবনাটিই (নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে) সবচেয়ে সহজসাধ্য বলে এবি পার্টির বিশ্বাস।

জানা গেছে, মতামত পাওয়ার পর সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, সংস্কার ইস্যুতে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকার চাইলে অধ্যাদেশ জারি করতে পারবে।

টিক চিহ্নসংবলিত স্প্রেডশিট দেয়ার আগে ঐকমত্য কমিশন থেকে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনের হার্ড কপি পর্যালোচনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছিল।

কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সাথে আলোচনা করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বাকি কমিশনগুলোর প্রধানরাও ঐকমত্য কমিশনের সদস্য। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নিয়োগ করা হয়েছে সাংবাদিক মনির হায়দারকে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দলগুলোর সাথে পৃথকভাবে আলোচনার কথা প্রথম বৈঠকে জানানো হয়েছিল। দলগুলোর সাথে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে একটি সনদ (জুলাই সনদ) তৈরি করা হবে। এই জুলাই সনদের ভিত্তিতে হবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, মোট ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশমালা ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ৬ মার্চ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আলী রীয়াজ বলেন, প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো- সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো- ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই প্রধান বলেন, দ্বিতীয়টি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়। এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো- ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোকে ‘মন্তব্য’ দেয়ার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়