শিরোনাম
◈ আরাকান আর্মির কাছে জিম্মি ২৬ জেলেকে ফেরত আনল বিজিবি ◈ ঈদের চাঁদ দেখা যাবে কবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর ◈ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে : সিপিডি ◈ শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ◈ প্রবল বৃষ্টিতে রক্তের মতো লাল সমুদ্র সৈকত, ভিডিও ভাইরাল ◈ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে: জাতিসংঘ মহাসচিব ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ ◈ জাতীয় ঐক্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে: জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির ◈ কী ঘটেছিল সেদিন আছিয়াদের বাড়িতে, জানালেন সারজিস ◈ গণপরিষদের মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৫ মার্চ, ২০২৫, ১২:৪১ দুপুর
আপডেট : ১৫ মার্চ, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাতি নেতায় অস্বস্তিতে বিএনপি!

সুজানগরে বিএনপির পাতি নেতাদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ডাকাতি, দখল, চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, একসময় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত সন্ত্রাসীদেরও শেল্টার দিচ্ছে বিএনপি। তাদের অপকর্মের কারণে বিএনপির তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতারাও বিব্রতবোধ করছেন। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এদের শাস্তির দাবি উঠেছে। 

সূত্রমতে, প্রায় ৫ মাস আগে প্রকাশ্য দিনের বেলায় সোনার দোকানে ডাকাতি করেন সুজানগর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু খাঁ এবং বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মানিক খাঁসহ তাদের কয়েক সহযোগী। এদের প্রভাব এবং শক্তি এতটাই বেশি যে, ভয়ে ডাকাতির শিকার দোকান মালিক থানায় মামলা করারও সাহস পাননি। 

সম্প্রতি সিসি টিভিতে ধারণ করা ওই ডাকাতির একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপরও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাবু-মানিকদের মতো আরও প্রায় এক ডজন বিএনপি নেতাকর্মী রয়েছেন, যারা একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে সুজানগর বিএনপির কপালে কলঙ্কের কালিমা লেপন করে চলেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন যারা দলে অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিড। তাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। 

সর্বশেষ বাবু, মানিক, মজিবুর খাঁ (২), বাঁশিসহ তাদের অনুসারীদের হাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কক্ষে উপজেলা জামায়াতের চার নেতা মারধরের শিকার হন। ঘটনাটি সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সুজানগর থানায় মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে মজিবুর (২), বাবু, মানিক, বাঁশি এবং আরিফ শেখকে।

সূত্রমতে, সুজানগর উপজেলা বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। তবে দীর্ঘদিন হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ এলাকায় আওয়ামী লীগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মূলত সভাপতি আব্দুল ওহাব এবং সম্পাদক শাহীনুজামান শাহীন গ্রুপে বিভক্ত। গ্রুপ পলিটিক্সের কারণে সুজানগরে আওয়ামী লীগের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। সেময়ে সুজানগরে অবৈধ বালু ব্যবসায় নেতৃত্ব দেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন। হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে যান এবং অপরাধ রাজ্যের হাল ধরেন বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাইব্রিড নেতাও রয়েছেন, যারা একসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে থেকে নানা অপরাধ করতেন। পটপরিবর্তনের পর এখন বিএনপির হয়ে ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ বালু বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রমতে, সুজানগরের তাঁতিবন্দ ইউপির সাবেক সদস্য বিএনপি নেতা মজিবর খাঁ (১), উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মজিবর খাঁ (২), বিএনপি নেতা কামাল শেখ, সুজানগর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু খাঁ, বিএনপি নেতা মানিক খাঁ এবং লেবু খাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপকর্মের বিস্তর অভিযোগ। এদের মধ্যে পৌর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবু খাঁ এবং বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মানিক খাঁর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রকাশ্যে অস্ত্রের মুখে সুজানগর বাজারে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মালিক ভয়ে আজও থানায় মামলা করার সাহস পাননি। যদিও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে হাতুড়ি দিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পেটাচ্ছে বাবু ও মানিক।

অন্যদিকে বিএনপি নেতা মজিবর খাঁর (১) প্রধান কাজ চাঁদাবাজি ও জমি দখল। চাঁদা না পেয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুরেরও নজির আছে তার। একাধিকবার চাঁদার টাকা ফেরতেরও রেকর্ড রয়েছে তার। গত মাসে সুজন নামের এক ওয়ার্কশপ মালিকের কাছ থেকে চাঁদাবাজির লাখ টাকা ওসির চাপে ফেরত দেন মজিবুর খাঁ (১)। বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া দুর্ধর্ষ ক্যাডার মানিক খাঁর প্রধান কাজ চাঁদাবাজি। 

অভিযোগ আছে, বাবু খাঁ এবং মানিক খাঁ একসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলে অপকর্ম করতেন। পটপরিবর্তনের পর এসব সন্ত্রাসী স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন নেতার শেল্টার পাচ্ছেন। এদের মধ্যে যুবদল নেতা বাবু খাঁ ও আব্দুল বাসেত বাঁশি সুজানগর পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন বিশ্বাসের অনুসারী। কামাল হোসেন বিশ্বাস কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের অনুসারি। মজিবর খাঁ (২) এবং মানিক খাঁ সাবেক উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম সাজ্জাদের অনুসারী।

এদিকে বিএনপি নেতা কামাল শেখের বিরুদ্ধেও রয়েছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং জমি দখলের অভিযোগ। কামাল শেখ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য পাবনা ২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট একেএম সেলিম রেজা হাবিবের অনুসারী পরিচিত। এছাড়া পৌরসভা এলাকার চরভবানীপুর গ্রামের লেবু খাঁ একেক সময় একেক নেতার ছত্রছায়ায় থাকেন। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এসব ক্যাডার তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের গায়ে হাত তুলতেও ছাড়েন না।

দলীয় পরিচয়ে কতিপয় নেতাকর্মীর এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিব্রত বিএনপির শীর্ষ নেতারা। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবিএম তৌফিক হাসান আলহাজ বলেন, এসব ব্যক্তির কর্মকাণ্ডে তারা বিব্রত। এদের শাস্তি হওয়া দরকার। 

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জায়গা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এরা একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত। স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির বিষয়ে সুজানগর থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ওই ঘটনা ছিল রাজনৈতিক। মালিক হিন্দু এবং তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। এজন্য তারা ওইসময় হামলা করে। কোনো স্বর্ণ বা টাকা-পয়সা নেয়নি। তবে মারধরের ঘটনা সত্য। 

বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান (২) বলেন, তিনি ইউএনও অফিসে ওইদিন মারামারি ঠেকাতে গিয়েছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগ মিথ্যা। মজিবুর রহমান (১) বলেন, তার সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি একটি দল করেন। তাই এসব অপপ্রচার। 

কামাল সেখ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রয়োজন হলে এসে দেখে যান। এছাড়া বাবু, মানিক, লেবু ও বাঁশির মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। সূত্র: ‍যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়