শিরোনাম
◈ শৈলকুপায় মসজিদে জুতা চুরি নিয়ে সংঘর্ষে ১০ জন আহত ◈ এ বছর নির্বাচন আয়োজন কঠিন হতে পারে: রয়টার্সকে নাহিদ ◈ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো অভিযান চালানোর কারও এখতিয়ার নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ পাকিস্তান কাশ্মীরের একাংশ ‘চুরি করেছে’, ফেরাতে চায় ভারত! ◈ চলতি বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন যারা ◈ হিযবুত তাহরীর সভা-সমাবেশ করলে ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি ◈ এনআইডি ইসিতে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে : সিইসি ◈ যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঢাকা মেডিক্যালে আটক অর্ধশতাধিক (ভিডিও) ◈ ভারতে শেখ হাসিনার ৭ মাস, যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জনগণ ◈ যে কারণে সামরিক ফ্লাইট স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন

প্রকাশিত : ০৬ মার্চ, ২০২৫, ০২:৪৯ দুপুর
আপডেট : ০৬ মার্চ, ২০২৫, ০৬:৪৭ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতে শেখ হাসিনার ৭ মাস, যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জনগণ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসার সাত মাস পূর্ণ হলো। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে তাকে (ও তার বোন শেখ রেহানাকে) নিয়ে দিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি একটানা ভারতেই রয়েছেন। মাঝে তার তৃতীয় কোনও দেশে যাওয়ার জল্পনা শোনা গেলেও তা আদৌ বাস্তবায়িত হয়নি এবং গত সাত মাস ধরে ভারতই এখন তার ঠিকানা। খবর: বাংলা ট্রিবিউন।

শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার যেরকম কঠোর গোপনীয়তা ও সুরক্ষা বলয়ে ঘিরে রেখেছে, তা প্রায় নজিরবিহীন। লক্ষ্যণীয় হলো, তিনি ঠিক কোথায় আছেন বা কীভাবে আছেন, তা নিয়ে দিল্লির পক্ষ থেকে এখনও একটি শব্দও জানানো হয়নি। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে এর মাঝে নানা জল্পনার খবর প্রকাশিত হলেও তার একটিও কিন্তু নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটা তীব্র রহস্যের ঘেরাটোপ। 

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে ঘিরে বাংলাদেশে যেমন, তেমনই তার আশ্রয়দাতা দেশ ভারতেও আগ্রহ কিন্তু তুঙ্গে। বাংলাদেশে তো বটেই, ভারতেও গত বেশ কয়েক মাস ধরেই ‘শেখ হাসিনা’ নিয়মিতভাবে গুগলের টপ সার্চগুলোতে বা সোশ্যাল মিডিয়ার টপ ট্রেন্ডিংয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। শেখ হাসিনার খবর জানার জন্য ঔৎসুক্যে এখনও এতটুকুও ভাটা পড়েনি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ঘিরে এই মুহূর্তে যেসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তার কতটুকু উত্তর আমাদের জানা– এই প্রতিবেদনে সে দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার ছবি বা ভিডিও কবে দেখতে পাওয়া যাবে? : সাত মাস আগে ভারতে পা দেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনার কোনও ছবি বা ভিডিও প্রকাশ্যে আসেনি। সরকারিভাবে তো নয়ই, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও নয়। অর্থাৎ সাংবাদিক বা ভারতের সাধারণ নাগরিক, কেউই এক ঝলকের জন্যও তার নাগাল পাননি। 

তবে এর মাঝে তিনি বেশ কয়েকবার ফেসবুকে এসে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে লাইভ ভাষণ দিয়েছেন এবং সেগুলো রীতিমতো আগেভাগে ঘোষণা করেই করা হয়েছে। তবে এসব ভাষণই ছিল অডিও আকারে, ফেসবুকে কোনও লাইভ ভিডিও তিনি এখনও দেননি। এছাড়া তার বহু কল রেকর্ডের অডিও-ও ফাঁস হয়েছে।

যদিও এসব ভাষণের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে ভারত সরকার দাবি করেছে। দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা সবাই একমত যে, ভারত ‘অনুমতি’ দিয়েছে বলেই তার পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এসব ভাষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। হোস্ট কান্ট্রি ভারত না চাইলে শেখ হাসিনা কখনোই এভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারতেন না।

এরকমই একজন বিশ্লেষক বলছিলেন, ‘ভারতে বসেও যে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় আছেন এবং দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, এই বার্তাটা দিতেই শেখ হাসিনার স্পিচ বা টেলিফোন কলগুলো অ্যালাউ করা হচ্ছে। তবে ভারত মনে করছে— এর জন্য আপাতত লাইভ অডিওটুকুই যথেষ্ঠ, ছবি বা ভিডিও-র কোনও প্রয়োজন নেই।’

‘তবে কিছুদিন বাদে যদি ভারত মনে করে, তিনি লাইভ ভিডিওতে ভাষণ দিলেও কোনও অসুবিধা নেই এবং তাকে সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে সরাসরি দেখতে পাই, তাহলে আমি অন্তত অবাক হবো না’, বলছিলেন তিনি।   

শেখ হাসিনাকে ভারতের ঠিক কোথায় রাখা হয়েছে?: ভারতে শেখ হাসিনার ‘লোকেশন’ কী, তা নিয়ে গুজব ও জল্পনার যেন কোনও শেষ নেই।

হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে এসে নামার পর তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে ভারতের কোনও আধাসামরিক বাহিনীর ‘সেফ হাউস’ বা গোপন অতিথি নিবাসে রাখা হয় বলেই জানা গিয়েছিল।

এরপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার অবস্থান নিয়ে নানা রকম রিপোর্ট বেরিয়েছে। ভারতের ‘দ্য প্রিন্ট’ পোর্টাল যেমন জানিয়েছে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ল্যুটিয়েন্স দিল্লির কোনও বাংলোতেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও আবার লেখা হয়েছে— তিনি রয়েছেন মীরাট ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কোনও অতিথি নিবাসে।

শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতেই কর্মরত, একটা সময় এমনও জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে, মা ও মেয়ে বোধহয় এক শহরে এক সঙ্গেই রয়েছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব নয় একাধিক কারণে।

ভারত সরকার তাদের অতিথির ‘লোকেশন’ নিয়ে আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছুই জানায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অবশ্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ওনার সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে যে জায়গাটি উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে, সেখানেই তাকে রাখা হচ্ছে।’

‘হতে পারে তাকে বেশিদিন এক জায়গায় রাখা হচ্ছে না, আবার হতে পারে প্রথম থেকেই তিনি একটি ঠিকানাতেই আছেন। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় সঙ্গ কারণেই’, জানান তিনি।

শেখ হাসিনাকে কি ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে?: অতীতে ভারত তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা কিংবা আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লার পরিবারের সদস্যরা-সহ বিদেশের অনেককেই রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দিয়েছে এবং তারা বছরের পর বছর ধরে ভারতেই রয়ে গেছেন।

শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নে যদিও এদেশে একটা সার্বিক রাজনৈতিক ঐকমত্য আছে, অর্থাৎ শাসক ও বিরোধীপক্ষ উভয়েই এই প্রশ্নে সহমত। তারপরেও কিন্তু তাকে এখনই রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার কথা ভাবা হয়নি। এর সহজ কারণ, ভারত মনে করছে— তাকে এখনই অ্যাসাইলাম দেওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়েনি।

সাউথ ব্লকের একটি সূত্রের কথায়, ‘তিনি ভারতের সম্মানিত অতিথি হিসেবে এ দেশে আছেন এবং সেভাবেই তিনি যতদিন খুশি এদেশে থেকে যেতে পারেন – তাতে অসুবিধার বিন্দুমাত্র কিছু নেই। তা ছাড়া তিনি কিন্তু অ্যাসাইলামের জন্য কোনও আবেদনও করেননি।’

ভারতে বিশ্লেষকরা কেউ কেউ মনে করছেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’ দিলে এমন একটা ধারণা তৈরি হতে পারে যে, শেখ হাসিনা হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে পাকাপাকিভাবে ভারতেই থিতু হচ্ছেন। এমন কোনও ধারণা ভারত তৈরি করতে চায় না বলেই সম্ভবত অ্যাসাইলাম দেওয়ার কথা এখন ভাবাও হচ্ছে না। 

তবে পরে পরিস্থিতিতে কোনও পরিবর্তন হলে অ্যাসাইলাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্তও দেরি লাগবে না, সেটাও তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধে ভারত কি সাড়া দেবে?: এই জটিল প্রশ্নটির এক কথায় খুব সহজ ও সংক্ষিপ্ত উত্তর হল – না।

শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য যাতে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ একটি নোট ভার্বালের আকারে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দিল্লির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল প্রায় আড়াই মাস আগে। সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হলেও ভারত কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনও জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি।

ভারতের সাবেক কূটনীতিকদের কারও কারও মতে, বাংলাদেশের অনুরোধেও ‘সিরিয়াসনেসে’র বেশ অভাব আছে। মানে তারা বলতে চাইছেন, যথেষ্ট আঁটঘাট বেঁধে ও সদিচ্ছা নিয়ে অনুরোধটি জানানো হয়নি। 

ভারতের কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, যেসব অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ ফেরত চাইছে, সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। তা ছাড়া শেখ হাসিনাকে যদি বিচারের জন্য ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তিনি সে দেশে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পাবেন, এটাও বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারেনি বলে ভারত মনে করছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এমন বেশ কিছু বিধান আছে, যেগুলোর ভিত্তিতে উপরোক্ত যুক্তিগুলোর আলোকে কাউকে ফেরানোর অনুরোধ অনায়াসে নাকচ করা যেতে পারে।

শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও ভারত একই পথে হাঁটবে বলেই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অথবা নানা অজুহাতে দিনের পর দিন বাংলাদেশের অনুরোধ ফেলে রাখা হবে, কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হবে না!     

এই দফায় ভারতে কিভাবে দিন কাটছে শেখ হাসিনার? : ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তার কন্যা শেখ হাসিনাকে যখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে সপরিবার আশ্রয় দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে এবারের পরিস্থিতির কিন্তু অনেক ফারাক আছে।

সেবার ’৭৫ থেকে ’৮১  প্রায় সাড়ে ৫ বছর ভারতে কাটিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবার। কিন্তু তার গতিবিধির ওপর তখন তেমন কোনও বিধিনিষেধ ছিল না, এমনকি সে সময় শেখ হাসিনা দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রীয় রেডিও সংস্থা ‘আকাশবাণী’র বাংলা বিভাগে কাজও করতেন। তার স্বামী বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়াও সাময়িকভাবে যুক্ত ছিলেন ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনে।

তবে সে সময় তিনি ছিলেন শুধুই শেখ মুজিবের কন্যা– আর এখন তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাও প্রায় দীর্ঘ ২১ বছরের। তিনি শুধু ভিভিআইপি-ই নন, তার জীবনের ওপরও ঝুঁকি থাকতে পারে বলে ভারত মনে করছে। ফলে তার এবারের ভারতবাস নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয়েছে, প্রতিটি পদক্ষেপ ঘিরে থাকছে চরম গোপনীয়তা। বাইরে স্বাভাবিকভাবে বেরোনো বা সামাজিক মেলামেশার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

এছাড়া ভারতে কোনও বিদেশি নেতানেত্রী অতিথি হয়ে থাকতে এলে তাদের জন্য যে রকম ‘ডিব্রিফিং সেসন’ করা হয়, শেখ হাসিনাকেও সেরকম রুটিনের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এরকম কয়েকটি সেসনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল নিজে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যাচ্ছে।

এছাড়া তিনি দিল্লিতে আগে থেকে চিনতেন বা যাদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধুত্ব আছে, এমন হাতেগোনা কারও কারও সঙ্গেও তার দেখা করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে। এটার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, যাতে বিদেশ-বিভূঁইয়ে এসেও তিনি মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতে পারেন এবং স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে হালকা হতে পারেন।                 

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে?  : তবে এই মুহূর্তে কোটি টাকার প্রশ্ন– বা ইংরেজিতে যাকে বলে ‘বিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন’, তা হলো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী?

এটা ঠিকই যে শেখ হাসিনা বারেবারেই আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া তার ভাষণে বলছেন যে, তিনি অবশ্যই একদিন দেশে ফিরবেন এবং তার নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন হচ্ছে, সেসবের প্রতিকার করবেন। তবে ভারতের পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই কাজটা কঠিন শুধু নয়– খুবই কঠিন।

তারা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রথমত শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৭ পেরিয়ে ৭৮ এর পথে। এই বয়সে এরকম একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে রাজনৈতিক কামব্যাক করার নজির বিশ্বে খুব কমই আছে। তা ছাড়া তিনি নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নটাও এতকাল অস্পষ্ট করে রেখেছেন। ফলে তার পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হাল কে বা কারা ধরবেন, সেটারও কোনও উত্তর জানা নেই।

সবচেয়ে বড় কথা, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশজুড়ে আওয়ামী লীগের ওপর যে ধরনের হামলা, অত্যাচার হয়েছে এবং জনরোষ তাদের ওপর যেভাবে আছড়ে পড়েছে— দলীয় সংগঠন তা থেকে এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। দেশে পরবর্তী নির্বাচন যখনই হোক তাতে আওয়ামী লীগ আদৌ লড়ার সুযোগ পাবে কিনা, সে বিষয়টিরও এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা বা রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হওয়া খুব মুশকিল বলেই মনে হচ্ছে।

তবে ভারতে বিশ্লেষক ও নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে ‘অসম্ভব’ বলে কিছু নেই,  ফলে তারা এখনই শেখ হাসিনার ‘পলিটিক্যাল অবিচুয়ারি’ লিখে ফেলতে রাজি নন। ভারত সরকারও অধীর আগ্রহ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে নজর রাখছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি কোন পথে এগোয়, সম্ভবত তার ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে এই হাই-প্রোফাইল অতিথিকে নিয়ে ভারতই-বা শেষ পর্যন্ত কী করতে চায়!

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়