লোকগান গেয়ে দেশের মানুষের মন জয় করেছেন সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারণে বিতর্কিতও হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন, এরপর দলটির মনোনয়ন পেয়ে সরাসরি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছেন, জিতেছেনও।
তবে আওয়ামী লীগের পতনের সঙ্গে সঙ্গে মমতাজও যেন উধাও। কোনো খোঁজখবর নেই, গানের কোনো অনুষ্ঠানেও দেখা যাচ্ছে না সাত মাস ধরে।
মমতাজের মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের বাড়িটি বর্তমানে একেবারেই নীরব, মানুষের কোনো আনাগোনা নেই। অথচ মাস সাতেক আগে বাড়িটিতে সবসময়ই কোলাহলে মশগুল থাকত। মমতাজের অনুপস্থিতে তার বাড়িটি যেন পতিত অবস্থায় রয়েছে।
মমতাজের খোঁজ জানেন না বাড়িটির নিরাপত্তাপ্রহরীও। তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন-কোনো খবর নেই তার কাছে। আশেপাশের বাড়ির লোকজন যারা একসময় মমতাজকে বাড়িতে ঢুকতে ও বের হতে দেখতেন, তাদের মতেও অনেক দিন দেখেন না মমতাজ বেগমের ব্যবহৃত গাড়িও। বাড়িতে গেলে তিনি আত্মীয়স্বজন ও কাছের মানুষদের নিয়ে মেতে থাকতেন। সেই আত্মীয়রাও মমতাজের কোনো খোঁজখবর জানেন না।
এদিকে ফোন নম্বর থেকে শুরু করে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। একটা সময় এসবে বেশ সক্রিয় থাকতেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ মমতাজ ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন। সেসময় মেয়ের সঙ্গে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। সেই ভিডিওতে মমতাজ তার মায়ের কথা বলে কেঁদেছেন।
মমতাজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত বছরের ১৩ অক্টোবর একটি গান পোস্ট করেন। গানটি গাওয়ার সময় মমতাজের অবস্থান কোথায় ছিল, তা আজও জানা যায়নি। এদিন মমতাজকে গাইতে দেখা গেছে, ‘আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি কেমনে/ আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি, পরান বান্ধিবি কেমনে’ গানটি। মমতাজের গাওয়া গানটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকের মন্তব্যের ঘরে নেটিজেনরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। মমতাজের গাওয়া সেই গানের ভিউ গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২ লাখ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য মনোনীত হন মমতাজ। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদের কাছে পরাজিত হন তিনি।
সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় দেখা যায়নি তাকে। তবে গানে ব্যস্ত ছিলেন মমতাজ। এর আগে সংসদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান পরিবেশন করে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন মমতাজ। এরপর আবার বিদ্যুৎ নিয়ে তার একটি বক্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং ট্রলের শিকার হন তিনি। সূত্র: যুগান্তর