শিরোনাম
◈ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্কাইপ ◈ ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্ব ছাড়লেন জস বাটলার ◈ ভোটে সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়: তারেক রহমান (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে মাঝ আকাশে অক্সিজেন স্বল্পতা, জরুরি অবতরণ ◈ বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ◈ অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরকে যে নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ ◈ ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ◈ শিল্পকলার মহাপরিচালক জামিল আহমেদের পদত্যাগ ◈ সৌদি আরবে দেখা গেছে চাঁদ, শনিবার প্রথম রোজা ◈ রাজনীতিতে যে কেউ নেতৃত্ব দিতে পারবে, যেখানে তার ব্যক্তিগত পরিচয় মুখ্য হবে না: তাসনিম জারা (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:৩৩ দুপুর
আপডেট : ০১ মার্চ, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কতটা গভীর, কীভাবে ঐক্য ধরে রাখবে এই নতুন দল?

বিবিসি বাংলা :ছাত্রদের বহুল আলোচিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার এই নাম প্রকাশ্যে আসে। তবে নতুন এই দলের অভ্যুদয়ের আগে থেকেই দলটি নিয়ে নানা আলোচনা, বিতর্ক, আগ্রহ, কৌতূহল। এটি কি বড় কোনো দল হতে পারবে, দলের মার্কা কী, নেতৃত্বে কারা থাকছেন -এমন সব প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে সবখানে। আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে দল, মিলবে সব প্রশ্নের উত্তর।

তবে নানা আলোচনার মধ্যেই দলটির ভেতরে যে এক ধরনের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আছে, সেটাও প্রকাশ্যে এসেছে বিভিন্ন সময়। নেতৃত্ব নিয়ে দফায় দফায় সমঝোতা, মনোমালিন্য, সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই দেখা গেছে।

কাঙ্ক্ষিত পদ পাচ্ছেন না এমনটা স্পষ্ট হওয়ার পর ভেতরের দ্বন্দ্ব বাইরে এসে আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।

এর মধ্যেই উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনিই হচ্ছেন নতুন দলের আহ্বায়ক। বাকি শীর্ষ পদগুলোতেও স্থান পেয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া পরিচিত মুখগুলোই স্থান পেয়েছে।

কিন্তু এমন একটা দল যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আদর্শের লোকেরা একত্রিত হয়েছেন, এই দলের পক্ষে শেষ পর্যন্ত ঐক্য ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন অনেকে।

নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কতটা গভীর?

ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যে নতুন রাজনৈতিক দল আনছেন, সেটার জন্য বেশ বড় আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ঢাকার সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, অন্তত দুই লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে নতুন দল এবং শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি দুই লাখের মতো লোক সমাগম করতে। ঢাকার ভেতর থেকে যেমন অনেকে অংশ নেবেন, তেমনি ঢাকার বাইরে থেকেও নেতা-কর্মী-সমর্থকরা আসবেন। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কিন্তু নতুন দলের নেতা কারা হবেন?

এক্ষেত্রে শীর্ষ পদগুলোতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা প্রায় সবাই আন্দোলনের পরিচিত মুখ। কিন্তু আন্দোলনে থাকলেও ব্যাপক পরিচিতি পাননি বা সেভাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেননি এমন নেতাদের নিয়ে আলোচনা কম। নেতৃত্ব নির্বাচন কি ‘ফেসভ্যালু’ দেখে ঠিক করা হচ্ছে, নাকি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখে ঠিক করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।

প্রক্রিয়াগত এসব জটিলতা সামনে এনে নতুন দলটিতে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক শিবির নেতা আলী আহসান জোনায়েদ। একইরকম ঘোষণা দিয়েছেন আরও দুই নেতা।

দল গঠনের আগমুহূর্তে দলটিতে নেতৃত্ব নিয়ে যে একটা দ্বন্দ্ব আছে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব কতটা প্রশমিত হয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই বলেই মনে করেন তারা।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটাকে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব মনে করি না। বরং আমরা দেখেছি কে কোন জায়গায় পরিশ্রম করেছে, কে কোন জায়গা ডিজার্ভ করে, কেন ডিজার্ভ করে। এগুলো নিয়ে প্রত্যেকই তার জায়গা থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আমরা এভাবেই নেতৃত্বের জায়গাগুলো ঠিক করছি।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যে সিদ্ধান্ত আসবে, ধরেই নিলাম সেখানে পাঁচজন সন্তুষ্ট না। খুব স্বাভাবিকভাবে আমরা তখন প্রস্তুত বাকি পঁচানব্বই জন ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগুতে।

কিন্তু নেতা ঠিক করতে গিয়ে মতপার্থক্য কেন হচ্ছে? এমন প্রশ্নে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, মতপার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অনেক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। সেই নেতৃত্বের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিযোগিতার বিষয় আছে। সেটাকে কোনোভাবেই আমরা মনে করি না যে সামনের দিনে এটা আমাদেরকে বড়ভাবে প্রভাবিত করবে। আমরা একত্রিত আছি এবং একতার ভিত্তিতেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।

দলে ভিন্ন আদর্শের লোক, সমাধান কীভাবে হবে?

ছাত্রদের নতুন দলে শীর্ষ পদে বসছেন উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলাম। এর বাইরে পুরো দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় নানা মত, পথ ও রাজনৈতিক আদর্শের অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন।

জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে ধর্মীয়, এমনকি রাজনীতিতে ধর্ম চান না এমন আদর্শের তরুণরাও আছেন এর মধ্যে।

বাংলাদেশে আদর্শভিত্তিক আলাদা আলাদা দল থাকলেও একই দলে সব আদর্শের সম্মিলন সেভাবে দেখা যায় না।

আবার রাজনীতিতে দলগুলোর আদর্শিক বৈরিতাও প্রবল।

ফলে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব বড় কোনো বিভক্তির কারণ হবে না– নেতারা এমনটা বললেও আদর্শিক বিভক্তির সমাধান তারা কীভাবে করে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে আদর্শিক বিভাজন এড়াতে সেক্যুলারিজম, ধর্ম বা জাতীয়তাবাদ- এরকম কোনো আদর্শিক ধারার মধ্যেই ঢুকতে চায় না ছাত্ররা।

সারজিস আলম বলেন, আমাদের এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্ম হচ্ছে, এখানে থাকবে মধ্যপন্থার রাজনীতি। এখানে থাকবে বাংলাদেশপন্থা। এখানে নাগরিক পরিচয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে বাঙালি বলা হয়েছে, বাংলাদেশি বলা হয়েছে। এই সামগ্রিক বিষয়গুলোর মধ্যে আমাদের আসলে নাগরিক হয়ে ওঠা হয়নি। আমাদের মধ্যে এইযে বিভাজন বিভিন্ন ঘরানা, আদর্শের মধ্যে, আমরা সেটা সামনেই আনতে চাই না।

বোঝা যাচ্ছে, সম্ভাব্য নতুন দলটি প্রচলিত আদর্শিক তত্ত্ব কিংবা দ্বন্দ্বে ঢুকতে চায় না। বরং এটা থেকে দূরে থাকার কৌশল নিয়েছে। যার মূল কারণ ধর্মীয় বা অন্য কোনো ‘আদর্শিক বিভাজনের চক্রে’ না আটকানো।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, এখানে বাম-ডানের বিভক্তি আছে। ধর্মীয় বিভক্তি আছে। এগুলো দিয়ে তো আমরা বাংলাদেশের মানুষকে একত্রিত করতে পারবো না। বাংলাদেশের মানুষকে একত্রিত করতে হলে বাংলাদেশের জন্য যেসব কাজ আবশ্যক সেগুলোতে একমত হওয়া। সেটার জন্য আসলে কোনো দলীয় মতাদর্শ বা ব্যক্তি মতাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ না।

তিনি বলেন, অ্যাজ এ স্টেট যদি এটাকে ডেভেলপ করতে হয় তাহলে কোনো মতাদর্শ জরুরি না। জরুরি হচ্ছে ক্রাইসিস বুঝতে পারা, মানুষের অধিকার বুঝতে পারা এবং সে অধিকারের জন্য যুদ্ধ করা।

নতুন দলে শিবির, বাম ও অন্যান্য দলের প্রভাব থাকবে?

ছাত্রদের নতুন দলে মূলত তরুণ-যুবকরা অংশ নিচ্ছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেমন সব মত-পথ ও দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন, সেই নেতা-কর্মীদের একটা অংশই যুক্ত হচ্ছেন নতুন দলে।

ফলে এই প্রক্রিয়ায় সাবেক ছাত্রশিবির, বাম কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক ধারা থেকে আসা ব্যক্তিরা যুক্ত হয়েছেন নতুন দলে।

তবে অনেকেই মনে করেন ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের লোকজন এক দলে আসার পর সেটা নতুন দ্বন্দ্বের কারণ তৈরি করতে পারে।

রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, দল গঠনের পর যখন মাঠের রাজনীতি শুরু হবে তখন এই দ্বন্দ্ব নতুন চেহারায় হাজির হতে পারে।

তিনি বলেন, এখানে যারা বিভিন্ন দলের ছাত্রসংগঠন করে আসা, তারা তাদের আগের দলগত আদর্শ বা দলীয় কর্তৃত্ব নতুন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়া দলটি যখন আস্তে আস্তে বড় হবে বা কর্মসূচি দেবে তখন কিন্তু অন্য দলগুলো থেকে তাদের ভাবাদর্শিক লোকদের মাধ্যমে নতুন দলকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকলেও থাকতে পারে। এই আশঙ্কা কখনই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ফলে এটা তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে আসতে পারে।

তবে বিভিন্ন দল কিংবা মতের সম্মিলনকে সমস্যা নয়, বরং সুযোগ হিসেবেই দেখছেন নাগরিক কমিটির অনেকেই।

সারজিস আলম বলেন, বিভিন্ন দল-মতের লোক যুক্ত থাকায় এটা বরং দলকেই সমৃদ্ধ করবে। আমাদের আলোচনায় ডানপন্থী যেমন, তেমনি বামপন্থী বা অন্যান্য ধারার চিন্তা-ভাবনাগুলো আসে। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে এরকম বহুচিন্তা নেই। তারা একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেদিক থেকে দেখলে আমাদের এখানে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা আরও সমৃদ্ধ করে। সেখান থেকে যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই তখন সবাই সেটা সমর্থন করে। সুতরাং এটা কোনো সমস্যা না।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামন্তা শারমিনও মনে করেন অন্য দল থেকে কেউ আসলে সেটা সমস্যার কারণ হবে না।

তিনি বলেন, দেখেন যারা সাবেক কোনো দলের, তিনি তো আসলে সাবেক। ওই দল যদি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারতো তাহলে তো তিনি ওই দল ছেড়ে নতুন কোথাও আসতেন না। তাহলে আমরা ধরে নিচ্ছি যে, তারা পূর্বের অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন একটা ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।

নতুন দলের সংগঠকরা আশাবাদী জুলাইয়ের আন্দোলনের ভেতর দিয়ে যে ঐক্য এসেছে তা ধরে রাখার ব্যাপারে। এরজন্য একক নেতৃত্বের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে চান তারা।

কিন্তু আত্মপ্রকাশের আগেই আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন এবং দ্বন্দ্ব, সেই দ্বন্দ্বে আবার নাগরিক কমিটির অন্তত তিনজন নেতার নতুন দলে না থাকার ঘোষণা শুরুর আগেই এক ধরনের সংশয় তৈরি করেছে।

এর মধ্যেই সাবেক সমন্বয়কদের ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘিরে যে বিভক্তি আর হাতাহাতি, সেটার পরে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘিরেও যে বাড়তি কৌতূহল থাকবে অনেকের তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়