মহসিন কবির: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ক্রমে জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হাসান ও গাজীপুরে নিহত ও গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে নিহত আবুল কাশেম হত্যার প্রতিবাদ এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে কফিন মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হাসানের জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে, জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল বের করেছে ছাত্র-জনতা।শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাদ জুমআ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জানাজা শেষে একটি মিছিল বের হয়। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এসময় তারা- ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’; ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘আমার ভাই কফিনে, খুনি কেন বাহিরে’; ছাত্র-জনতার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, খুনি হাসিনা গেলি কই’; ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শহীদ হাসানের বাবা বলেন, আমার ছেলে গত ৫ আগস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। আমি সারাদিন খোঁজ নিয়েও তার কোনো সন্ধান পাইনি। এরপর দিন থেকে আমি ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে শুরু করে ঢাকার প্রতিটি মর্গ, হাসপাতাল এবং কবরস্থানে খোঁজ নিয়েছি কিন্তু আমি আমার ছেলের সন্ধান পাইনি। এরপর ঢাকা মেডিকেলের মর্গে হাসান ইনাম ভাই এবং নাফিসা সাকাফি আপু আমার ছেলের লাশ শনাক্ত করে। পরে আমরা ডিএনএ টেস্ট দিয়ে ১ মাস ১ দিন পরে আজকে আমার ছেলের লাশ বুঝে পাই। ৫ আগস্ট যারা আমার ছেলেসহ হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই। একজন একজন করে ধরে সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, হাসিনা দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদের ধারা বজায় রাখতে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে গণহত্যা করেছে। তাই, এই মাটিতে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে নিহত আবুল কাশেম হত্যার প্রতিবাদ এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে কফিন মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা। আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এর আগে শহীদ মিনার চত্বরে নিহত কাশেমের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় তারা ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আওয়ামীলীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান’, 'ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা', ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালোসহ নানা স্লোগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জোবায়ের বলেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা কাশেম ভাইকে হত্যা করেছে। ৫ তারিখে আওয়ামী লীগ পালানোর পর থেকে আমার ভাইদের গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। আমরা এখনো ঘরে ফিরে যাইনি। স্পষ্টভাবে আমরা বলতে চাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদর প্রতিনিধি ওসমান গণী রাসেল বলেন, আমাদের কাশেম ভাইকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমরা, ফেনীবাসী, এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির অন্যান্য প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের সময় হামলায় আহত আবুল কাশেম (২০) বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মৃত্যুবরণ করেন।
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, গণহত্যায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাদের বিচার ও দলটি নিষিদ্ধ না হলে রাজপথ ছাড়ব না। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত মোহাম্মদ হাসানের জানাজা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো তথ্য-প্রমাণসহ উঠে এসেছে। হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে তার আজ্ঞাবাহী বাহিনীর সদস্যরা গুম-খুনে ও নির্যাতনে নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়েছে।’
তারা আরও বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, ৫ মে ও চব্বিশের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ একদণ্ডও শান্তিতে থাকতে দেবে না এ দেশের সরকার ও জনগণকে।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা–কর্মী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন শুরু করেছেন তাঁরা।
অনশনে বসা দুই শিক্ষার্থীর একজন ঢাবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (ইইই) ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া ও ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক। অপরজন দর্শন বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. আবু সাঈদ। ওমর ফারুক ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আবু সায়েদ সংগঠনের কর্মী।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে ফরিদপুরে খাটিয়া মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে লাশ বহনকারী খাটিয়া নিয়ে মিছিল বের করা হয়। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়।
মিছিলটি মুজিব সড়ক হয়ে আলীপুর ইমাম উদ্দিন স্কায়ারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অন্যতম সমন্বয়ক সোহেল রানা, তামান্না বিনতে তাফসির, সাইফ খান, মেহেদী ইবনে ইলিয়াস, ফারহান নায়েব, আবু নাইম ব্রিহন, রাতুল, রাকিবুল ইসলাম, কাইয়ুম প্রমূখ।
আপনার মতামত লিখুন :