শিরোনাম
◈ তৌহিদী জনতাকে হুমকি নয়, সতর্ক করেছি: উপদেষ্টা মাহফুজ ◈ ছাত্রীর হাতে লাঞ্ছিত শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল ◈ সুন্দরবনে ক্যামেরার সামনে বনকর্মীকে কামড়ে নিয়ে গেল বাঘ, এরপর যা ঘটল (ভিডিও) ◈ রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১৭ এপ্রিল ◈ আকাশপথের ভাড়া নিয়ে পরিপত্র জারি: প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ভাড়ার নির্দেশ, ‘শ্রমিক ভাড়া’ আবার চালু ◈ বাংলাদেশে শত্রুভাবাপন্ন সরকার ক্ষমতায় গেলে হুমকিতে পড়বে ভারত: শশী থারুর ◈ বৈষম্য শুধু প্রাণের বিনিময়ে দূর হবে না: আলী রিয়াজ ◈ ভ্যাট নিবন্ধনে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ◈ সংকট মোকাবেলায় ভোলার গ্যাস ঘিরে নতুন আশা সরকারের ◈ 'অপারেশন ডেভিল হান্ট': ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার আরও ৬০৭

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:১৫ দুপুর
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

মহসিন কবির: এ বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। পতিত আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় বিএনপি ও জামায়াত এখন একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। বিপ্লবী ছাত্ররাও নতুন দল গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

ত্রয়োদশ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। জনশক্তির মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা ও জনগণের সঙ্গে তাদের সংযোগ ঘটাতে ৩১ দফাকে নিয়ে সারা দেশে কর্মশালা চলছে। 

এরই মধ্যে ৬৪ জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে সূচিও প্রকাশ করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। সমাবেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলার বিষয় অগ্রাধিকার পাবে।

অন্যদিকে ত্রয়োদশ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে তরুণ, অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের সমন্বয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সাজানো হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব দল ও জোট অংশ নিয়েছে, তাদের নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা রয়েছে বিএনপির। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রাথমিকভাবে সমমনা শরিক জোটের ছয় নেতাকে নিজ এলাকায় জনসংযোগে সহযোগিতা করার জন্য দলের সংশ্লিষ্ট ছয় জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ‘অতীব জরুরি’ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় দলটি। তবে এ চিঠির ঘটনায় তৃণমূলে ভুল বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতে পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই চিঠি ধানের শীষের চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি দেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম জনসম্মুখে তুলে ধরবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করলেও নির্বাচনের মাঠে অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছে তারা। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী তালিকা তৈরিতে ১৬ বছরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হবেন। সে সঙ্গে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়া জনপ্রিয় প্রার্থীদের মূল্যায়নও করা হবে বলে জানা গেছে। 

রাজনীতির মাঠে নির্বাচনের উত্তেজনার মধ্যে গত  রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএম নাসিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে বর্তমান কমিশন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটুকু নিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান জানান, নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কমিশন তাদের প্রস্তুতি জানালে বিএনপি তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।  

নির্বাচনের মাঠে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময় থেকে প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও দলীয় ফোরামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে যাচ্ছেন—আসছে নির্বাচন বিএনপির জন্য সহজ হবে না; দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। এমন বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে দলের ভেতরে শক্তভাবে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি সারছে বিএনপি। 

এদিকে দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জেলা কমিটি করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে সব জেলায় চলছে কাউন্সিল। এছাড়া সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে নামছেন বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

দলটির নেতাদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর ধারাবাহিকতায় কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অভিযুক্ত নেতার পদবি স্থগিত করা, পদাবনতি ঘটানো, এমনকি বহিষ্কারের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিতে দেখা গেছে। দলটি ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর গত ছয় মাসে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭০০’র বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। দলটির দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে আরও প্রায় ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারেক রহমানের হাতে। 
 
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রস্তুতি যতটাই হোক না কেন, আমরা চাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি তো আছেই। নতুন করে প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন নেই। শিডিউল ঘোষণা হোক, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার দেশকে বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। দলটির রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন পরিচালনা করে নির্বাচন করার জন্য। ফলে নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই। 

প্রার্থী বিবেচনায় বিএনপির কৌশল সম্পর্কে সালেহ এমরান প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। সে ক্ষেত্রে অনেকে প্রার্থী হতে চান। এ ক্ষেত্রে দল প্রথমে যেসব প্রার্থীর জনগণের সঙ্গে বেশি সম্পর্ক থাকবে, তাকে মূল্যায়ন করবে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে ভূমিকা, দলের দুর্দিনে ত্যাগ ও দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে— এমন ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করবে। একইসঙ্গে যাদের মধ্যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিচক্ষণতা আছে, তাদের বিবেচনা করবে দল। 

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার গণমাধ্যমকে বলেছেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী জেলখানায় ও ফেরারি জীবন পার করেছেন। এমন দুঃসময়েও আমরা প্রতিনিয়ত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। এমনকি জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য। ফলে আমরা সব সময় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। 

এদিকে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে চায় দেশের প্রধান ইসলামি দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি এরই মধ্যে ৭৯ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

তবে আগামী নির্বাচনে ইসলামি ও অন্য ছোট দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি সমঝোতা করে ভোটের লড়াইয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে জামায়াতের। এমনকি ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে প্রয়োজনে সব দলকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনেরও চিন্তা রয়েছে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থীর সংখ্যাও পরিবর্তন হতে পারে। 

দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চায় জামায়াত। এজন্য সব আসনে নিজেদের প্রার্থী প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। এ পর্যন্ত তারা ৭৯ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রের গাইডলাইন অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবেও বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে কর্মিসম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতারা সারা দেশ সফর করছেন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির মুখপাত্র, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ গণমাধ্যমকে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই স্পষ্ট করেছে যে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচন চাই। তার আগে অপরিহার্য কিছু বিষয়ে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে তা অর্থবহ হবে না; এটা আগের নির্বাচনি কর্মকাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। 

তিনি বলেন, জামায়াত চায় নির্বাচনবিহীন যে সংস্কৃতি ফ্যাসিস্টরা তৈরি করেছিল এবং ভোটারদের ছাড়াই নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা দখলের যে দৃশ্যের অবতারণা করেছিল, তা যেন আর কেউ চর্চা করতে না পারে। সেজন্য নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার, প্রশাসনের কিছু অংশ এবং বিচার বিভাগের সংস্কার করতে হবে। এ সংস্কারগুলো হলেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে- এটাই হলো জামায়াতের চাওয়া।

ভোটের জন্য দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে জামায়াতের এই নেতা বলেন, প্রথমত জামায়াত ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সঙ্গে এটাও বিবেচনায় নিয়েছে যে, অতীতে যেহেতু জামায়াত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছে, এবারও যাতে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। তবে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত  নেওয়া হবে। ঐক্য বজায় রাখতে বর্তমানে বিএনপিসহ সব দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ এবং সম্পর্ক বহাল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়