শিরোনাম
◈ চাকরির লোভ দেখিয়ে রাশিয়ায় পাচার: ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত ◈ ‌‌‘বিতর্কিত নন, কিন্তু জনসম্পৃক্ততা আছে—এমন একজনকে খুঁজছেন শেখ হাসিনা’ ◈ ফরিদপুরের দুই যুবককে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় গুলি করে হত্যা ◈ আ.লীগের লিফলেট বিলি : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হকারদের প্রতি নির্দেশনা ◈ বিএনপি নেতার গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে আলোচনার ঝড় ◈ পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে গত পাঁচ মাসে ১২টি দলের আত্মপ্রকাশ ◈ লোকজনের রঙ বেরঙের ঠাট্টা মস্করা আমার কিন্তু একদম ভালো লাগছে না : গোলাম মাওলা রনি ◈ ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ◈ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু মেডিক্যাল কিলিং কি না জানাতে হবে: মিজানুর রহমান আজহারি ◈ সারজিসের স্ত্রী কুরআনে হাফেজা, শ্বশুর পেশায় একজন ব্যারিস্টার

প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৩৭ রাত
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে গত পাঁচ মাসে ১২টি দলের আত্মপ্রকাশ

মানবজমিনের প্রতিবেদন।। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে ১২টি ‘দল’ আত্মপ্রকাশ করেছে। পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে রাজনীতির মাঠে আসা এসব দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদিও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। এমনকি মাঠেও চোখে  পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম নেই। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও নেই এসব দলের। এ কারণে এসব দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

গণ-অভ্যুত্থানের পরে আত্মপ্রকাশ হওয়া এসব দল রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। এ বিষয়ে তিনি মানবজমিনকে বলেন, সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করা খুব একটা সহজ হবে না। তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্য থেকে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে তখন তার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হবে। ৫ই আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে, তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশ এতে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে হয়তো গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব নেতৃবৃন্দ আছেন, তাদের দল গঠনের বিষয়ে শোনা যাচ্ছে। তারা বলেছে- যদি তারা নির্বাচন করে তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে নিবে। এটার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। একটা সংগঠনের জনভিত্তি তৈরি করতে যে সময় লাগে সেটা তো তারা পায়নি। নাগরিক কমিটি যেটা করবে তাতে হয়তো সংসদ নির্বাচনে কিছু পকেটে তারা উঠে আসতে পারবে। 

বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের যেমন রাজনৈতিক ভিত্তি আছে, অন্যান্য দলের জন্য সেই জনভিত্তি অর্জন করা কঠিন হবে বলে জানান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। 

এদিকে রাজনীতির সুষ্ঠু ব্যাখ্যা ছাড়া একটা দল কীভাবে দাঁড়াবে বলে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে নতুন কোনো ন্যারেটিভ তৈরি হয়নি। তাদের কেবল ভারত আর আওয়ামী বিরোধী ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। এই দেশের অর্থনীতি, সমাজ, কালচার মিলিয়ে কি অর্জন করতে চাই সেটা বলতে হবে। সেরকম কিছু করেনি তারা। একটা ন্যারেটিভ ছাড়া তো পার্টি দাঁড়াতে পারবে না। 

যেসব রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করলো: দলের নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে গণঅধিকার পরিষদের মশিউজ্জামান ও ফারুকের নেতৃত্বাধীন অংশ। পরিবর্তিত নাম হয়েছে ‘আমজনতার দল’। ভুল বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব এড়াতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। ২৮শে জানুয়ারি পুরানা পল্টনে নিজেদের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের নতুন নাম ঘোষণা করেন এই অংশের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান। ২০২১ সালের ২৬শে অক্টোবর ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দলটি বিভক্ত হয়ে যায়।

সর্বশেষ আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘দেশ জনতা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের। ৪ঠা জানুয়ারি ঢাকার কাওরান বাজারে ইডিবি ট্রেড সেন্টারে আত্মপ্রকাশের পর দলটির তরফ থেকে ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা করেন দলের প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট ইকবাল কবির। মো. নূর হাকিমকে দলটির চেয়ারম্যান ও ইদ্রিস আলী নান্টুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। 

১৬ই ডিসেম্বর মুসলিম জাতীয়তাবাদী নতুন ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। আত্মপ্রকাশের পর জুলাই গণহত্যায় শহীদ নাইমা আক্তারের মা আইনুন নাহার ও দলটির সাংগঠনিক প্রধান মোহাম্মদ শফিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। দলটির নেতাকর্মীরা জানান, ফ্যাসিবাদ বিলোপের দাবি পূরণ না হলে ২০২৫ সালে নতুন করে গণ-অভ্যুত্থান করা হবে।

৩০শে নভেম্বর গোপালগঞ্জের চাপাইলের মধুমতি পার্কের সম্মেলনকক্ষে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)’ নামে রাজনৈতিক দলের। সংগঠনের আহ্বায়ক করা হয় সাইফুর রশিদ চৌধুরীকে। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওইদিন নতুন আরও উপস্থিত ছিলেন তিন যুগ্ম আহ্বায়ক জুলিয়াছ খান ঠাকুর, শেখ ফরিদ আহমেদ ও মো. ইয়ার আলী।

২৮শে নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি’। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের রক্ত ঋণ শোধ করার অদম্য আগ্রহ, সুস্থধারার রাজনীতি ও সত্যের প্রতি অবিচল-নিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে জাগ্রত পার্টি। পরে কণ্ঠভোটে প্রকৌশলী ইকরামুল খান চেয়ারম্যান ও আবুল কালাম আজাদ মহাসচিব নির্বাচিত হন। দলটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ইসরাফিল খান এবং অশোক কুমার ঘোষকে নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। 

১৬ই নভেম্বর গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছাত্রলীগের আবরণে গোপনীয়তার সঙ্গে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে দলটির উন্মোচন ঘটে। সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় আল রিয়াদ-আদনান অন্তর, মহাসচিবের পদ দেয়া হয় খলিলুল্লাহ গাজীকে। এ ছাড়া হুমায়ুন কবিরকে দলটির মুখপাত্র করা হয়। সংগঠনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধান, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সুরক্ষিত এবং মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানকে সমুন্নত রাখা।

১৫ই নভেম্বর বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি) নামে আরও একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। অনুষ্ঠানে দলটি ৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক করা হয় লন্ডন প্রবাসী মো. সোহেল রানাকে।

২৭শে সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ‘সার্বভৌমত্ব আন্দোলন’। রাজনৈতিক দলটির প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ জনকে উপদেষ্টা করা হয়। তারা হলেন- কর্নেল (অব.) মশিউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, হেলাল উদ্দিন, ফজলুল সাত্তার, ড. মেজর (অব.) সিদ্দিক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফায়েল এবং এআইজি (অব.) মালেক খসরু। এ ছাড়া ১০ জনকে সংগঠক ও ৮৩ জনকে সহ-সংগঠক করা হয়। নির্বাচন বা ক্ষমতার জন্য নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, রাষ্ট্র বিনির্মাণে ও দেশ পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে দলটির তরফ থেকে জানানো হয়।

২৩শে সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি’ (বিপিপি)। গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে দলটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মো. সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন মো. বকুল হোসেন হৃদয়। কমিটিতে ১৫ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া দলটির ২০ জন সদস্য রয়েছেন।
২০শে সেপ্টেম্বর ‘সমতা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। ওইদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে হানিফ বাংলাদেশিকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে দলটি। 

১৯শে সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে দলটি। হাফেজ মাওলানা মাহমুদ আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাফেজ মাওলানা ইলিয়াস হোসাইনকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

৮ই সেপ্টেম্বর ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ঢাকার একটি হোটেলে দলের চেয়ারম্যান এস এম শাহাদাত নতুন এই দলের ঘোষণা দেন। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটিতে সাইফুল আলমকে মহাসচিব এবং মীর আমির হোসেন আমুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তারা জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) থেকে বের হয়ে এসে নতুন এই রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এস এম শাহাদাত জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক, সাইফুল আলম যুগ্ম সম্পাদক এবং মীর আমু যুব জাগপা’র সভাপতি ছিলেন।

২৩শে আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আত্মপ্রকাশ করে ‘নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ’ (এনপিবি) নামে রাজনৈতিক দল। বৈষম্যমুক্ত ও নিরাপদ বসবাসযোগ্য রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সিদ্দিক হোসাইন। সদস্য সচিব করা হয় ক্রিমিনোলজিস্ট এসএসডি জিদানকে। এ ছাড়া ২৩শে আগস্ট প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখার আহমেদ খানকে দলটির মুখপাত্র করা হয়। এই দলটির সদস্য সংখ্যা ৩ জন।

রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও এসময়ে দু’টি রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। ৩১শে আগস্ট ‘জাতীয় জনতার জোট’ নামে একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ করে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৬টি দল মিলে নতুন এই জোটের ঘোষণা দেয়। 
১৫ই নভেম্বর ৫টি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘বিপ্লবী গণজোট’। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকার শিশু কল্যাণ পরিষদে এই জোট গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়