জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা একঝাঁক তরুণ জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সঙ্গে যুক্ত হবেন অভিজ্ঞ রাজনীতিকেরাও। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে গঠিত হবে নতুন রাজনৈতিক দল। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রত্যয়ে আগামী মাসেই নতুন এই দল আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাকটিভিস্ট ও সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। সদস্যসচিব হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এ ছাড়া সারজিস আলম মুখ্য সংগঠক এবং সামান্তা শারমিন মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা হতে পারে। নতুন রাজনৈতিক দলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের বদলে বহু ব্যক্তির নেতৃত্বকে প্রমোট করতে চাই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, এমন তরুণেরাই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসবেন।’
নতুন রাজনৈতিক দলে কীভাবে সদস্য করা হবে জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির যে থানা কমিটিগুলো দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার অধিকাংশ লোকজন নতুন রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশাবাদী। নাগরিক কমিটি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল হবে না, নাগরিক কমিটি যে রাজনৈতিক ভাষা নির্মাণ করছে, তার আলোকে বৃহৎ পরিসরে নতুন রাজনৈতিক দল হবে।’
নতুন দল গঠনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক কমিটি সারা দেশে ১২০টি থানা কমিটি দিয়েছে। গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৬১ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকায় সাংগঠনিক বিস্তৃতি শুরু হয়। গত ১২ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৩৬ সদস্যের এবং মধুপুর উপজেলায় ৫৫ সদস্যের কমিটি করে ঢাকার বাইরে কার্যক্রম শুরু করে নাগরিক কমিটি। কমিটিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইতিমধ্যে ঢাকার ২৮টি উপজেলা এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। কমিটিগুলোর আকার সর্বনিম্ন ৩৩ থেকে থেকে সর্বোচ্চ ৪৭০ জনের। সর্বনিম্ন ৩৩ সদস্যের কমিটি হয়েছে উত্তরা পূর্ব থানায় এবং সবচেয়ে বড় ৪৭০ সদস্যের কমিটি হয়েছে আশুলিয়া থানায়।
নাগরিক কমিটির থানা ও বিভিন্ন কমিটিগুলো বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার ৯২টি থানা ও উপজেলায় কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এসব কমিটির আকার ৩৫ থেকে ৪২০ জন পর্যন্ত। ৩৫ সদস্যের কমিটি হয়েছে বরিশালের বাকেরগঞ্জে এবং ৪২০ সদস্যের কমিটি রংপুরের কোতোয়ালি থানায়।
এদিকে ৩৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিও করেছে সংগঠনটি। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যসংখ্যা ১৪৭ জন। তাঁদের মধ্যে আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজন যুগ্ম সদস্যসচিব, পাঁচজন সহমুখপাত্র, চারজন যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এবং ১৪ জন সংগঠক। এই ৩৯ জন ছাড়াও বাকি ১০৮ জন জাতীয় নাগরিক কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। দুই অংশ থেকে ৩৬ জনকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও ঢাকা ও তার বাইরে কমিটি করছে। দেশের ১৯টি জেলা, ৩টি মহানগর, ১টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি কলেজ ও ১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি করেছে তারা। সর্বশেষ গত রোববার ঢাকা কলেজ শাখার কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের তরুণ ও অভিজ্ঞ লোকদের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হবে বলে জানান নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মনিরা শারমিন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে এটাকে ধারণ করে তরুণ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠিত হবে। দল গঠনকে সামনে রেখে এখনো নির্দিষ্ট নাম ও নেতা নির্বাচন করা হয়নি। তবে এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য রাফে সালমান রিফাত। তিনি বলেন, ‘আমরা জনমানুষের কাছে দলের নামের প্রস্তাব চেয়েছি, অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে পারিনি। একইভাবে কে বা কারা নেতৃত্বে আসবে, সেটাও চূড়ান্ত হয়নি, এসব প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশবাসীকে আমরা নতুন রাজনৈতিক দল উপহার দিতে পারব বলে আশা রাখছি।’ উৎস: আজকের পত্রিকা।
আপনার মতামত লিখুন :