মহসিন কবির: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট টানা সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের অবসান ঘটে। শুরু হয় নতুন পথা চল। নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে ছাত্র-জনতা ও রাজনীতিবিদরা মাঠে নেমেছেন। রাজনীতিবিদরা চাচ্ছেন দ্রুত নির্বাচন আর দল গঠনের সংকল্প নিয়ে এগুচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।
‘সংস্কার নাকি নির্বাচন’- এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক শক্তি এবং দেশের সব মানুষ ও রাজনৈতিক দল স্রেফ অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কূটতর্ক হিসেবে বিবেচনা করে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থা সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে গণতন্ত্রকে টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোটের অধিকার প্রয়োগের যে সুযোগ পায়, তা রাষ্ট্র এবং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইমলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে পরপর গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয় নি। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছি। কিন্তু সহনশীলতার মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে চর্চা করে আমরা যদি এগিয়ে যেতে পারি তাহলেই আমরা সত্যিকারের গণতন্ত্র অর্জন করতে পারবো।
১ জানুয়ারি তিনি বলেছেন, নির্বাচন দেওয়াই বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে দেশের মানুষকে এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে হবে। জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে। অতীতে বিএনপিকে ভাঙার অপচেষ্টা বহুবার হয়েছে, কিন্তু ভাঙতে পারেনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার যে প্রবণতা সেটি আমার কাছে সুখকর বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ, দল গড়ার চেষ্টা করছে। স্বাগত জানাচ্ছি। তারা অধিকাংশ আসনে জিতে আসল স্বাগত জানাব। কিন্তু জনগণকে পছন্দের সুযোগটা দিতে হবে। জনগণ জানে কীভাবে ভোট দিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যত বেশি বিলম্বিত হবে ততবেশি রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিন হবে। সংস্কারটা হবে সংষদে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ যাবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতাকে শ্বশুরবাড়ির নিয়ামত ভাববেন না। এটা জনগণের ও রাষ্ট্রের আমানত। এই আমানতের খেয়ানত করবেন না। শুক্রবার নাটোর জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, এতো মানুষ জীবন দিয়েছে কেন? তারা চেয়েছে বৈষম্যহীন সমাজ। তারা বলেছে, আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। ১০ মাসের সন্তান থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধরা জুলাই আন্দোলনে নেমেছিল। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দলের দেশ প্রেমিক নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। নির্বাচন তাদের জন্য, যারা দেশের মাটিকে আমানত মনে করে। আমরা চাই অতিদ্রুত সংস্কার করে দেশে একটি নির্বাচন দিক। আশা করি তারা সেই দিকেই যাবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের যে নতুন পরিস্থিতি হয়েছে তার জন্য দেশের হাজারের অধিক মানুষ নিহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। যেই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা দেখছি, তারা অগোছালোভাবে দেশ পরিচালনা করছে। এই অগোছালোভাবে দেশ পরিচালনার সুযোগ নিয়ে অনেকে যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন করছে তা দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না।
আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা।সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাজার ব্যবস্থায় এখনো হাতে দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। পতিত সৈরাচার অপশক্তি থেকে আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। ভারত বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। তাই তারা তাদের লোক ক্ষমতায় বসাতে চায়। বাম দলগুলোকে এক হয়ে দেশকে রক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
প্রিন্স বলেন, অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে যেন না পারে সেজন্য দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাই।