শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা জোরদার করছে ভারত, নেপথ্যে যে কারণ  ◈ বিদেশি নাগরিকদের ভিসা বৈধকরণের হিড়িক, অবৈধ নাগরিককে প্রতিদিন গুনতে হবে ৩ হাজার টাকা জরিমানা ◈ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নতুন বিতর্ক, বাড়ছে বিভেদ ◈ মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতে আসছেন, আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশও ◈ ১৪ বছর পর হদিস মিললো 'মোস্ট ওয়ান্টেড' মেজর জিয়ার, মামলা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন (ভিডিও) ◈ ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে জবি ছাত্রীর এই ছবি, সত্যতায় যা জানা গেল ◈ লিওনেল মেসি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পাচ্ছেন, পুরস্কার তুলে দেবেন জো বাইডেন ◈ মা-বাবা নিয়ে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার সুবিধা বন্ধ, বিপাকে বাংলাদেশিরা ◈ দেশে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ আদাবরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত অর্ধশতাধিক

প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:২৩ রাত
আপডেট : ০৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ক্ষমতার রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত দূরত্ব বাড়ছে 

মহসিন কবির: রাজনীতির ময়দানে দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে পরিচিত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে টানাপড়েন চলছে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ২৫ বছরের। কিন্ত সেই সম্পর্কে চিড় ধরা শুরু হয়েছে। উভয় দলের শীর্ষনেতারা একে অপরের প্রতি করছেন কটাক্ষ। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটির অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় এখন দেখার বিষয়।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত ছিল না। তবে আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন কিছুটা কমে আসে। দুই দলই আন্দোলনে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের বড় শক্তি হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছে। সেটিও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে।

জামায়াত চাচ্ছে সব সংস্কার শেষ আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। আর বিএনপি চাচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন। এদিকে জামায়াত এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করেছে, কয়েকটি ইসলামি দল নিয়ে নির্বাচনি মোর্চা গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিও নির্বাচন সামনে রেখে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে যাচ্ছে এখানেও নেই জামায়াত। 

৫ আগস্টের পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব প্রকাশ্যে আসতে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত এবং ছাত্রদল-শিবিরের সঙ্গে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায়ও ঘটেছে। জামায়াতের শীর্ষনেতারা সভা-সমাবেশ থেকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দখল বাণিজ্যসহ কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রেখে চলেছে। 

বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন জামায়াতও এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক কার্যক্রমের কড়া সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুটকারী এস আলমদের উত্তরসূরি হয়েছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। টেন্ডারবাজি, পাড়া-মহল্লায় টার্মিনালসহ নানা কিছু দখল করেছে একটি দল। পায়ের রগ কারা কাটে– তাদের চেনে জনগণ। 

জামায়াত নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে তো মোনাফেকি করা না। একটি দল নিজেরা মোনাফেকি করছে আর বিএনপিকে সবক দিচ্ছে; কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করে সেদিন আপনারা এরশাদ কুলাঙ্গারের নির্বাচনে যাননি? আপনাদের একাত্তরের অর্জন কী? আপনারা একাত্তরের বিরোধিতা করেছেন। রিজভীর অভিযোগ– ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য জামায়াত শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায়।

রিজভীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতি বলেছেন, রিজভীর বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জামায়াতের রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এ ভূমিকা জাতি গ্রহণ করেছে। এ কারণেই সম্ভবত রিজভীর গাত্রদাহ হয়েছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অপবাদের রাজনীতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনও করেনি। জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়েও রাজনীতি করে না। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্নমতের সঙ্গে জোট গড়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য বিএনপি করেছিল, তা কি জাতির সঙ্গে মোনাফেকি নয়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে— যারা মনে করবে নির্বাচন হলে ক্ষমতায় আসবে তারা দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাবে এবং যারা মনে করবে নির্বাচন হলে তাদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা কম, তারা নির্বাচন দেরিতে হোক এমনটাই চাইবে। উভয়টাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’

তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে জনগণ কী চায়, যেটা এখনো স্পষ্ট নয়। বর্তমানে বড় দুটি দলের মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে যে দূরত্ব তা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে পারে এবং জনগণও বিভক্ত হয়ে যেতে পারে।’

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামিক দলগুলোর দিক থেকে মনে হচ্ছে নির্বাচনের আগে তারা যত সময় পাবে, সেটা আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে। আর বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন আর সরকার গঠন এটুকু দূরত্বে তারা দাঁড়িয়ে আছে। সরকার চাইবে যত বেশি সময় নেওয়া যায়। তারা যে সংস্কার চাইছে, তার তো কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ইতিমধ্যে দেশের কিছু কিছু জায়গায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়