শিরোনাম
◈ আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন ◈ কুয়েট ভিসির অপসারণের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয় ◈ পারভেজ হত্যা: ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে পুলিশ ◈ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: এবার নতুন তথ্য দিলেন ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা ◈ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডিসি নাজমুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ◈ এএইচএফ কাপ হ‌কি‌তে থাইল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনা‌লে বাংলাদেশ ◈ দোহায় বাংলাদেশের চার নারী ক্রীড়াবিদকে অ‌তি‌থি‌দের স‌ঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. ইউনূস ◈ সমালোচনার মুখে ডিএনসিসি প্রশাসকের উপদেষ্টা পদ ছাড়লেন এস্তোনীয় নাগরিক ড. আমিনুল ইসলাম ◈ গুলিস্তানে অবৈধ হকার ও যানবাহনের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান 

প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:২৭ বিকাল
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে নানা জল্পনা, কি থাকছে ঘোষণা পত্রে?

মহসিন কবির: ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণা দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই ঘোষণাপত্রকে ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে সরকার। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের অনেকের এমন নানা পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে কী থাকছে কিংবা অভ্যুত্থানের এতদিন পরে কেন এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আগ্রহ তৈরি হয়েছে, বিরাজ করছে এক ধরনের উদ্দীপনা। বিভিন্ন মহলেও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তাই সবার দৃষ্টি এখন জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দিকে।

বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, আগামী ৩১ ডিসেম্বর ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুল্যুশন’ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তারা। এদিন বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণা দেবেন তারা। এ ঘোষণাপত্রে কী কী বিষয় থাকবে তা জানাতেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা চাই, মুজিববাদী সংবিধান ‘কবরস্থ’ ঘোষণা করা হবে। যেখান থেকে এক দফা (আওয়ামী লীগ সরকারের পতন) ঘোষণা করা হয়েছে, সেখান থেকে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা রাখছি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রটি ৫ আগস্টেই হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী পাড়াসহ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ২ হাজারের বেশি শহীদ ও ২০ হাজারের বেশি আহতের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এর বৈধতা (লেজিটিমেসি) নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। জুলাই

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষ ’৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে মানুষের বিপরীত অবস্থান, এটির একটি আইনগত নথি থাকা উচিত। সেই জায়গা থেকে আমরা ৩১ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে যে গণআকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করব।

তিনি আরো বলেন, এই প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুল্যুশনে পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা, অভিপ্রায়, লক্ষ্য এবং ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকবে। এটি কোনো দলের নয়, কোনো শ্রেণির নয়। আমাদের স্বপ্নগুলো ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্তরে বঞ্চিত হয়েছে, আমরা প্রতারিত হয়েছি। এই প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুল্যুশনের মধ্য দিয়ে আর যেন বঞ্চিত না থাকে। গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনের ইশতেহার জাতির সামনে ঘোষণা করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা বিপ্লবের একটিমাত্র ধাপ অতিক্রম করেছি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরো আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, এ ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করতে পারবে।

এরই মধ্যে ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, এই বিপ্লবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মত, ধর্ম ও বয়সের যে মানুষরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। এটি সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কোনোটিই রাজনৈতিক দল হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই বিপ্লবের ঐক্যের প্রতীক, ইউনিক একটা প্ল্যাটফর্ম, এটা আমাদের ইউনিটির সিম্বল হিসেবে থাকবে। কখনো রাজনৈতিক দল হবে না। নতুন রাজনৈতিক দল অবশ্যই অন্য কোনো নামে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করব। সেটা সংবিধানে যুক্ত করে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ করার দায়িত্ব সরকারের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের এই ঘোষণাপত্রে মোট ২৯টি ধারা থাকছে। শুরুর দিকের ধারাগুলো দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মূলকথা, ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার রূপ এবং শেষের ধারাগুলো দিয়ে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কারণ, যুক্তি ও ঘটনাপ্রবাহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শেষের ধারাটিতে ১৪টি পয়েন্ট রয়েছে।

আরও জানা গেছে, ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি, ভারতবর্ষ ভাগ, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য, স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতা-পরবর্তী গণতান্ত্রিক অবক্ষয়, সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক স্বার্থের নেতিবাচক প্রভাব, ওয়ান-ইলেভেন বন্দোবস্ত কর্তৃক মুজিববাদী দৃষ্টান্তকে স্থায়ীকরণ, শেখ পরিবারের প্রশ্নাতীত ক্ষমতা এবং আধিপত্য দৃঢ়করণ, একাত্তরের চেতনাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিগত সরকারের মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদকে জিইয়ে রাখা; সামরিক, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ; দুর্নীতি এবং দমনমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার হাতিয়ারকরণ; ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ ও বৈষম্য; রাজনৈতিক কারণে গুম, খুন, জেল-জুলুম, পিলখানা ষড়যন্ত্র, অর্থ পাচার, অত্যাচার, নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতন নিশ্চিত করার জন্য এবং বাংলাদেশের নতুন দ্বার উন্মোচন করার জন্য যে যেভাবে পেরেছে আন্দোলনের সময় যার যার অবস্থান থেকে কাজ করেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, সংবিধান হোক, আর যা–ই হোক, সিদ্ধান্ত হতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং জনগণের মাধ্যমে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, শেখ হাসিনারা বিরুদ্ধে বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর মানুষ জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষ তার মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। সুতরাং সাংবিধান হোক, আর যেটাই হোক, সিদ্ধান্ত হবে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদের মাধ্যমে। এর বাইরে কোনো গোষ্ঠী, দল বা কোনো গ্রুপের কিছু করার সুযোগ নেই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়