শিরোনাম
◈ আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন ◈ কুয়েট ভিসির অপসারণের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয় ◈ পারভেজ হত্যা: ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে পুলিশ ◈ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: এবার নতুন তথ্য দিলেন ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা ◈ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডিসি নাজমুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ◈ এএইচএফ কাপ হ‌কি‌তে থাইল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনা‌লে বাংলাদেশ ◈ দোহায় বাংলাদেশের চার নারী ক্রীড়াবিদকে অ‌তি‌থি‌দের স‌ঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. ইউনূস ◈ সমালোচনার মুখে ডিএনসিসি প্রশাসকের উপদেষ্টা পদ ছাড়লেন এস্তোনীয় নাগরিক ড. আমিনুল ইসলাম ◈ গুলিস্তানে অবৈধ হকার ও যানবাহনের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান 

প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:১২ বিকাল
আপডেট : ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় কারা জড়িত? নানা মন্তব্য

মহসিন কবির: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় কারা জড়িত, কিভাবে বন্ধের দিন আগুন লাগলো। দুর্নীতির নথি চাওয়ার জন্যই কি আগুন লাগানো হয়েছে, যাতে কোন প্রমাণ না থাকে। ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন অনেকই। এসব প্রশ্ন রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাত খাচ্ছে।  

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ওই ভবনের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুড়ে গেছে অনেক নথি। 

সচিবালয়ের আগুনে একজনের মৃত্যু ও কয়েজনের আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘটনায় হতাহতদের জন্য শোক ও সহানুভুতি প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর ভবনে ভয়াবহ আগুন এবং আগুনে একজনের মৃত্যু ও ২/৩ জন আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির জোর দাবি করছি। নিহতের পরিবারসহ আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জোর আহবান জানাচ্ছি।

সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সবকিছু পুরে ছাই হয়ে বিপুল ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে এই ঘটনায় বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে দলটি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সবকিছু পুরে ছাই হয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। দেশের সকল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সেখানে কিভাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। 

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সাবেক মুখ্য সচিব জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে মোট পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে গেছে। মন্ত্রণালয়গুলো হলো: যুব ও ক্রীড়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, স্থানীয় সরকার এবং সড়ক ও পরিবহন। সম্প্রতি এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, পুড়ে যাওয়া পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি অনলাইনে থাকার কারণে সেটি রিকভার (সংরক্ষণ) করা যাবে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র সংরক্ষণ পুরোটাই অ্যানালগ পদ্ধতিতে হয়। এই মন্ত্রণালয়ের যে শাখাগুলোর নথি পুড়ে গেছে সেগুলোর কতটুকু রিকভার করা যাবে তা নিরূপণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিন দিন পার হলেও এখনো কেন সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার কারণ জানা যায়নি-- সরকারের কাছে এর ব্যাখা চান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। অবিলম্বে আগুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম প্রকাশেরও দাবি জানান তিনি। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের গ্রেফতারের দাবিতে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক আশঙ্কা করে বলেন, সচিবালয় থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের না সরালে শুধু আগুন নয়, আরও খেলা খেলতে পারে ষড়যন্ত্রকারীরা। তারা সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধান শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ঘিরে রাখা ৭ নম্বর ভবনে অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন তারা। তদন্ত কমিটির পাশপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও অনুসন্ধান করছেন।

শুক্রবার সকালে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আট সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও প্রবেশ করেন। শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় কমিটি তাদের সভার কাজ শুরু করে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, সচিবালয়ে কোনও গাডি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের ঊচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকেও মূল প্রবেশপথের বাইরে গাড়ি রেখে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

সচিবালয়ের আগুনে পোড়া কুকুরের মরদেহ বলে দেয় এটি একটি ষড়যন্ত্র উল্লেখ্য করে  মন্তব্য করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।  বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব হলরুমে জাতীয় নাগরিক কমিটির 'ঠাকুরগাঁও রাইজিং' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ 

সচিবালয়ের আগুন নিয়ে সারজিস বলেন, আগুন শুধুমাত্র আমাদের দুই সহযোদ্ধা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামের রুমে লাগানো হয়েছে। সেখানে কুকুরের মরদেহ প্রমাণ করে এটি ষড়যন্ত্র। গণঅভ্যুত্থানের আগে কিছু আমলা নামক দাস ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান দিয়েছে হাসিনার পক্ষে। তারা এখনো সচিবালয়ে চাকরি করে, তাহলে সচিবালয় কিভাবে নিরাপদ থাকবে। তাদের চেয়ারে বসিয়ে রাখলে তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পাওয়া সম্ভব না৷ সে কারনে এখন অপকর্ম হচ্ছে, দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‌'সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পতিত শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের অর্থ পাচারের ফাইলসহ অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির ফাইলপত্র নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।'

শনিবার (২৮ডিসেম্বর) সকালে রংপুরের মিঠাপুকুরের আটপুনিয়া গ্রামের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে, তিনি সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার শোয়ানুর জামান নয়নের বাড়িতে গিয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নেন।

রুহুল কবির রেজভীর বলেন, সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, নিঃসন্দেহে এটা চক্রান্তের অংশ। পতিত শেখ হাসিনার একজন প্রধান আমলা, মুখ্য সচিব প্রচুর টাকা পাচার করেছেন। তার সেই অর্থ প্রাচারের ফাইলগুলো ছিল পুড়ে যাওয়া ফাইলগুলোর মধ্যে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে।

বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থবিরোধী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী গোষ্ঠী পালালেও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই।’

বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের ১৫ বছর পূর্তিতে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এক যুব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মামুনুল হক এসব কথা বলেন।

মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত- এক ভাগে ভিনদেশি দালাল, আরেক দিকে দেশপ্রেমিক জনতা। ভিনদেশি চক্র ১৫ বছর বাংলাদেশকে জিম্মি করে রেখেছিল।’ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা বাংলাদেশের কাগজ পুড়িয়ে ফেলতে পার, কিন্তু মানুষের মনে তোমাদের বিষয়ে যে ঘৃণা জন্মেছে, তা মুছে ফেলতে পারবে না।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেছেন, কিছু লোক সরকারকে কঠোর হতে বলে আবার সামান্যতম কঠোর হলে গেল গেল রব তোলে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ হওয়া জরুরি। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা নিয়ে যথারীতি এই দ্বিচারিতা আবার শুরু হয়েছে। প্রবেশাধিকার সীমিত করার এই সিদ্ধান্তটি খুবই সাময়িক। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব আইডিতে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়