শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ চুক্তি নবায়ন করবে কাতার ◈ বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১০ ◈ আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন ◈ কুয়েট ভিসির অপসারণের দাবিতে দেড় ঘণ্টা অবরোধের পর কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়ল শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয় ◈ পারভেজ হত্যা: ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে পুলিশ ◈ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: এবার নতুন তথ্য দিলেন ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা ◈ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডিসি নাজমুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ◈ এএইচএফ কাপ হ‌কি‌তে থাইল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনা‌লে বাংলাদেশ ◈ দোহায় বাংলাদেশের চার নারী ক্রীড়াবিদকে অ‌তি‌থি‌দের স‌ঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:০৮ দুপুর
আপডেট : ০৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ছাত্র রাজনীতি কোন পথে?

মহসিন কবির: স্বাধীনতার পর ছাত্র রাজনীতির একটা সুমান ছিলো। আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররাই ছিলেন অগ্রভাগে। তাদের আন্দোলনের ফলেই এসেছে সফলতা। সেই রাজনীতি কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে অর্থ ও ক্ষমতার লড়াই। 

২০১৮ সালে ক্যাম্পাসগুলোতে প্রথম যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটি সংঘটিত হয়েছিল সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে। এখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো ভূমিকা তো ছিলই না, উল্টো ছাত্রলীগ সেই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করার জন্য বারবার সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। তার পরিণতি তারা ভোগ করছে।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির জন্য ছাত্ররাজনীতি সমালোচিত হয়েছে অনেকবার। অর্থলোভের রাজনীতি করে বেশি সমালোচিত হচ্ছে ছাত্ররা। জনপ্রিয়তাও কমছে দিন দিন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেই রাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রকাশ্যে, দাবি ওঠে নিষিদ্ধের। অবশেষে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্রলীগের রাজনীতি। তবে এখনও সেই পুরানো ছাত্র রাজনীতির চেহারা দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কমিটি গঠন নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃস্টি হচ্ছে। একে অপারের প্রতি দাপট দেখাচ্ছে। 

সম্প্রতি ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ফের অছাত্র এবং অভিযুক্তদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর এ ধরনের রাজনীতি আর দেখতে চান না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।   

ছাত্ররাজনীতিতে নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার আলোচনা বারবার এলেও ছাত্রদলের কমিটিতে ফের অছাত্রদের হাতেই উঠতে দেখা গেছে নেতৃত্ব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া মেহেদী হাসান হিমেল ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। ঢাকা কলেজের কমিটিতে বাংলা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের পিয়াল হাসানকে আহ্বায়ক এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মিল্লাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তিতুমীর কলজের কমিটিতে ২০০৯-১০ সেশনের ইমাম হোসেনকে আহ্বায়ক এবং ২০০৮-০৯ সেশনের সেলিম রেজাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তাদের কারোই ছাত্রত্ব নেই বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য কমিটিতেও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হাতে ওঠেনি নেতৃত্ব।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগরের চারটি শাখা এবং জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ আরও পাঁচটি কলেজে আহ্বায়ক ও আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পদবঞ্চিতদের আন্দোলন-বিক্ষোভ দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর উত্তরা বিএনএস টাওয়ার, তেজগাঁও কলেজ, বাঙলা কলেজসহ অন্তত সাতটি স্থানে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিতরা। এ সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থী এবং সড়কে চলাচল করা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত ১৫ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা কখনই ছিল না, এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি, অছাত্র, বিবাহিত এবং অপরিচিতদের নিয়ে আহ্বায়ক ও আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ছাত্রদলের দাবি, ত্যাগীদের দিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি সাময়িক কমিটি, আগামীতে নিয়মিত ছাত্রদের হাতেই দেওয়া হবে নেতৃত্ব।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পদবঞ্চিতদের মহড়ায় উত্তপ্ত ছিল ঢাকা কলেজ। সেদিন রাতেই কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। সদ্যঘোষিত কমিটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। নতুন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত এই কমিটির সদস্যরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন না বলে জানান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।

ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে ছাত্রলীগের কর্মীরা পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তারেক রহমানের নির্দেশে সাধারণ ছাত্রদের পাশে থেকে আমরা সায়েন্সল্যাব, ঝিগাতলা ও ঢাকা কলেজ এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে যাই। আর এখন দলের একটি খারাপ চক্রদের নিয়ে কমিটি হয়েছে। ৩৬ জনের এ কমিটিতে চার-পাঁচজন ছাত্রলীগের কর্মীও আছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় নবম এবং এগারোতম ব্যাচের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে নতুন কমিটি ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে। এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘পদবঞ্চিত’ নেতাকর্মীরা। পদবঞ্চিতরা অছাত্র, অনিয়মিত ও ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অবিলম্বে এই কমিটি বাতিলের দাবি জানান তারা। জবি ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস শুকুর আইমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। এই কমিটিতে বিগত দিনে যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকেছে, তাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব মাই ম্যান সেটআপ করতে সিন্ডিকেট করে পকেট কমিটি গঠন করেছে।’

এদিকে সংগঠনের কর্মসূচিতে অনিয়মিত এবং দলের দুঃসময়ে না থাকারা কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছেন অভিযোগে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ‘পদবঞ্চিত’ নেতাকর্মীরা বলেন, নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া অনেককেই চেনেন না সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতিসহ শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া বিবাহিত, অছাত্র ও মাদকাসক্তদের নিয়ে রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার অভিযোগ তুলেছেন ‘পদবঞ্চিতরা’।

এ দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা কলেজ শাখার আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাকিব বলেন, ‘দুদিন ধরে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও পদধারী দুই গ্রুপের কিছু নেতাকর্মী ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দুই হাজার শহীদের বিনিময়ে শেখ হাসিনাকে হটিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু এতদিন ছাত্রলীগ যে কাজটা করেছিল, ককটেল বিস্ফোরণ করে ছাত্রদলের ভাইয়েরা সেই কাজটিই করেছেন।’

ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে ছাত্রসমাজকে আহ্বান জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নাহিয়ান রেহমান রাহাত গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখেছি। তারা শুধু বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপরই হামলা পরিচালনা করেনি, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করেও নিজ সংগঠনের এক অংশ অন্য অংশের ওপর হামলা পরিচালনা করেছে। এমনকি হত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে যে নিরাপদ ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখেছে, তাতে আবার বাধা দেখা দিচ্ছে। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ নষ্ট করে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চলাফেরায় বাধা প্রদানের বিপক্ষে। অতীতে ছাত্রলীগের মতো ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীরা মানবে না। ছাত্রদলের কমিটি ঘিরে ক্যাম্পাসগুলোতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা বেশ উদ্বেগের। ।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির গণমাধ্যমকে বলে, ‘পদবঞ্চিত হলে বা যথাযথ মূল্যায়ন না হলে যদি কেউ ক্ষুব্ধ হয় তাহলে তার ক্ষোভের প্রকাশ অবশ্যই গণতান্ত্রিক রীতি এবং সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। কোনোভাবেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আমরাও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিরাপদ রাখতে ছাত্রদল অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো নেতাকর্মী এর ব্যত্যয় ঘটালে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। আর এই কমিটি ৪৫ দিনের জন্য করা হয়েছে। এরপর আমরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দেব। আর যেসব অভিযোগ আসছে, তা আমরা খতিয়ে দেখব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়