এল আর বাদল: পাঁচই অগাস্ট পতনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা। একইসাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলা করে দলীয় কর্মকা- এগিয়ে নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতির ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান সংকটে নেতা-কর্মীদের কী করা দরকার তা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন তারা। একইসাথে ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে তাদের কর্মসূচি রয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে, বিএনপির দাবি, শেখ হাসিনা একটা পলিটিক্যাল স্পেস পাওয়ার চেষ্টা করছে। এসব বক্তব্যে তার রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার কিছু নেই। পলাতক আসামি হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রিত থেকে তার জনসম্মুখে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনসভায় শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়, অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে জামায়াতে ইসলামী। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী কথা বলে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। যা দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য সহায়ক না।
দলের ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ-
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। রোববার, ৮ অগাস্ট, লন্ডনে আরেকটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। ভার্চুয়ালি দেয়া এ বক্তব্যে শেখ হাসিনা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
১৫ই জুলাই থেকে যেসব হত্যাকা- হয়েছে সেগুলোর পূর্ণ তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের বিচার দাবি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাইদ ও মুগ্ধসহ সব হত্যাকা-ের জন্য আন্দোলনের মাস্টার-মাইন্ডরা দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না- গত ১৪ অক্টোবর এমন তথ্য জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, যাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে এই দায়মুক্তি দেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। এটা দিয়ে প্রমাণ হয়েছে তারা অপরাধী। যারা অপরাধ করেছে তাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বাংলাদেশের জনগণই তাদের বিচার করবে।
আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন শেখ হাসিনার বক্তব্যে দলের নেতা-কর্মীরা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে, সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করা ও যোগাযোগ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি। দেশের এই যে সংকট, সেই সংকটে দেশের মানুষ, দলের নেতা-কর্মীদের কী করা দরকার, কী হওয়া উচিত সেই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। অবশ্যই দেশের মানুষ, দলের নেতা-কর্মীরা তার এই কথায় উজ্জীবিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতি তারা অ্যানালাইসিস করতে পারবে এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে," বলেন মি. চৌধুরী।
প্রতিটি দলেরই নিজস্ব পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল থাকে জানিয়ে মি. চৌধুরী বলেন, আমাদের দলের কর্মকা- চলমান আছে। এটা থেমে নাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ভবিষ্যতে কী করতে হবে না হবে তার রূপরেখা আমাদের আছে। আমরা সেইভাবে কাজ করতেছি। যেহেতু সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অর্থ হলো মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে নিষিদ্ধ করতে চায়। এর মধ্যেও আমরা কাজ করতেছি," যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এই যে জালিম দখলদার জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। অসভ্যতার একটা সমাজ তৈরি করা হইছে, যেই সমাজে কোনো মানুষের সম্মান নাই সে সমাজ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে একটা সভ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সেই জায়গাটায় আমরা কাজ করতেছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।
দেশকে একটা অন্ধকার আদিম যুগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মি. চৌধুরী বলেন, এর দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। বিচার তো তাদের হবে। যারা এ কাজটা করছে ভবিষ্যতে তাদেরই বিচার হবে। এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে বলে জানান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবে। ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার যা বলছে-
অন্তর্বতী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী কথা, মিথ্যা অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সহায়ক হচ্ছে না।
জুলাইয়ে যেসব হত্যাকা- হয়েছে শেখ হাসিনা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই সেসব হত্যাকা-ের দায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপর চাপানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান মি. হোসেন।
এটা অত্যন্ত একটা জঘন্য কাজ তিনি করছেন। এটা তিনি নির্দ্বিধায় কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়া করতে পারছেন। আমরা চাইব যে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের স্বার্থে তাকে রিস্ট্রেইন করা প্রয়োজন এবং সেটা ভারত সরকারকেই করতে হবে," বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সূত্র- বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :