শিরোনাম
◈ কোথাও দাম না পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙারির দোকানে বিক্রি ◈ সম্পদের হিসাব জমা না দিলে সরকারি চাকরিজীবীদের যেসব শাস্তি হতে পারে ◈ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যেসব দেশ নিরাপদ থাকবে ◈ কারও স্ত্রী চলে গেছে, কারও চাকরি: যেমন আছেন জুলাই আন্দোলনের আহতরা ◈ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়ার গ্রাফিতিতে কালো রং, এরপর যা যা হলো ◈ হ্যারি কেইনের রেকর্ড গড়া হ্যাটট্রিকে বায়ার্ন মিউনিখের দারুণ জয় ◈ ভারত ও পাকিস্তানের কাছ থেকে আয়োজক স্বত্ব আইসিসির কেড়ে নেয়া উচিত: রশিদ লতিফ ◈ অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম দিনটি দারুণ কাটোলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ  ◈ যে কারণে বাংলাদেশকে লাখ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হচ্ছে ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা, বেশির ভাগই ভারতে অবস্থান করছেন

প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৩০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সংস্কার করে নির্বাচন না সংস্কার ছাড়া নির্বাচন, নানা মন্তব্য

মহসিন কবির: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার যত দ্রুত হবে, নির্বাচনও তত দ্রুত হবে। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে যে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো। দ্য ডেইলি স্টারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন সম্পূর্ণই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের বিষয়, কারণ দেশের জনগণের প্রত্যক্ষ মতামত নিতে হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।

রাষ্ট্রসংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ না অভিহিত করে দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে আবারও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, এই সরকার এখনো স্ট্যাবল হতে পারেনি ওই সব (সংস্কারসহ রাষ্ট্র পরিচালানায় নীতিনির্ধারণ) দিক থেকে। আমরা যেটি বারবার বলে আসছি, এসব (সংস্কার) আপনাদের কাজ না। আপনারা তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেন। রাজনীতিবিদরা তাদের কাজ করুক। আমরা তো সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছি। ওখানে দেখেন কোনটা কোনটা আপনারা নেবেন, কোনটা কোনটা নেবেন না। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপিপন্থি সংগঠন ‘সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ’ এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ১৯ নভেম্বর 'অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড আজ তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’ এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন- এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সারা পৃথিবী থেকে সমর্থন পেয়েছে যা এখনো অব্যাহত আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেয়ারটেকার সরকার নয়, এটি বিপ্লবী সরকার তাই শুধুমাত্র নির্বাচন দেওয়াই এই সরকারের কাজ নয়। ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে কমনওয়েলথের সহকারী মহাসচিব প্রফেসর লুইস ফ্রান্সেচির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অন্যতম। এসব পদক্ষেপ ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সহায়ক হবে। তবে এক্ষেত্রে সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কতটা দক্ষতা দেখাতে পারে, সেটিই বিবেচ্য বিষয়।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেছেন, শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়নি। হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করলে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল চেতনা বাস্তবায়নে ঝুঁকি থেকে যাবে। 

নির্বাচন নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, এ আলোচনাটা এখনো আমাদের ক্যাবিনেটে হয়নি। এটা নিয়ে চেইন অব মিটিং চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। এ ভাবনাটা এখনো আলোচনার মধ্যে আছে।

আপনাদের এখন অগ্রাধিকার কী সংস্কার, নাকি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া- এ বিষয়ে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আরে নির্বাচনের দিকে যাবে কীভাবে সংস্কার ছাড়া, একি অদ্ভুত প্রশ্ন! সংস্কার হবে না, নির্বাচন হবে? সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নিতে পারবেন তো?

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা হলো বিপ্লবে আহতদের সুচিকিৎসা এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে না পারা। এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করলে দেশে অরাজকতা তৈরি হবে।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে প্রফেসর কে আলী ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ : অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০দিন-সফলতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

এসময় উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা করে তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করেও সরকার পতন ঘটাতে পারতে না যদি সেনাবাহিনী সহায়তা না করতে। বিগত ১৫ বছরে দুর্নীতির শেকড় মাটির অনেক গভীরে চলে গেছে। মাত্র ১০০ দিনে সব সমস্যার সমাধান করা সরকারের পক্ষে কঠিন। ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে সবাই গণতন্ত্রের নামে ভণ্ডামি করেছে।

বক্তারা আরও বলেন, বিপ্লবের নিরাপত্তা, সরকারের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। না হলে বিপ্লব ব্যর্থ হতে পারে। যেসব সরকারি কর্মকর্তা দিনের ভোটকে রাতে করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনে এই সংস্কার জরুরি।

শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু সংস্কার করে নির্বাচন দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির এ নেতা বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; তবে সামগ্রিক সংস্কার শেষে নির্বাচন, এরপর ক্ষমতা হস্তান্তর হবে এটা যুক্তিসঙ্গত নয়।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযোগী কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অতি দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে গণফোরাম। ১৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে আর কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে সংবিধানসহ রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলোর বিষয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের দলটি লিখিত প্রস্তাব দেবে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। ১১ সেপ্টম্বর রাজধানীর রমনায় এক শিক্ষক সম্মেলনে তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশে নানা সংকট তৈরি হতে পারে। 

এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন হতে পারে সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটি জানান।

এই সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে সেনাপ্রধান আরও জানান, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তাছাড়া, তিনি নিজেও সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে চান বলে জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়