শিরোনাম
◈ ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম পরিবর্তন ◈ হাসান আরিফের মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক ◈ গত ১৫ বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে তাঁবেদারি করেছে : প্রেস সচিব  ◈ উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন চিকিৎসকরা ◈ রাজধানীর যেসব সড়ক কাল বন্ধ থাকবে, বিকল্প পথে চলার পরামর্শ ◈ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গাদের ফেরাতে যে কৌশলের কথা জানালেন ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি নিয়ে যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর (ভিডিও) ◈ রাখাইন রাজ্যের মিলিটারি সদরদপ্তর আরাকান আর্মির দখলে, সতর্ক উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ◈ লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ কোটি টাকা পাচার : হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:২২ রাত
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দোসরের দোষ জাপার কাঁধে, রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে কী?

মহসিন কবির : আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত ১৫ বছর থাকলেও তেমন শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি জাতীয় পার্টি। বরং রাজনীতির মাঠে দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। সারা দেশে তেমন সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তৃণমূল থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত সব স্তরেই দলটির জনপ্রতিনিধির সংখ্যা একবারেই হাতেগোনা। আগামীতে নির্বাচন করতে পারলেও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মত নেতা নেই। 

দোসরের দোষ নিয়ে এবার বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে জাতীয় পার্টি। ফলে  রাজনীতিতে জাপা টিকে থাকবে পারবে, নাকি না নেই প্রশ্ন দেখো দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্বাসযোগ্যতা হারানো, দফায় দফায় ভাঙন, একক নেতৃত্বে দল পরিচালনা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকাই জাপার দুর্গতির মূল কারণ। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে এইচ এম এরশাদের সরকারের পতনের পরও তার দল জাতীয় পার্টি (জাপা) বেশিরভাগ সময় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেই ছিল। এর পরও ক্রমশ দলটি এতটাই দুর্বল হয়েছে যে, এককভাবে নির্বাচন করার সামর্থ্যও এখন হারিয়েছে। ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থীও দিতে পারে না দলটি।

আওয়ামী লীগের সব অপকর্মের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দোষারোপ করেছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতা’। যার জন্য গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এর প্রতিবাদে শনিবার (২ নভেম্বর) বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছিল জাতীয় পার্টি। পরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতা’। দুইপক্ষের উত্তেজনার পর, পিছুহটে জাতীয় পার্টি, প্রত্যাহার করের নেয় কর্মসূচি। কিন্তু তাদের খুলনা বিভাগ কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, আমরা যতটুকু জানি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান।

জাতীয় পার্টির অফিসে হামলার ঘটনাটি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত কোনো সিদ্ধান্ত নয়’ বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। মুখপাত্র বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চায় দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসুক এবং সরকার সেটা নিশ্চিত করুক।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রংপুরে লাঠি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ থেকে হামলার ইন্ধনদাতা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন ছাত্রের নোংরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানানো হয়।

খুলনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে অবস্থিত জাপার মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা বলেছেন, শনিবার বিকেলে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শহিদ হাদিস পার্কের দিকে যাওয়ার পথে ডাকবাংলো মোড়ে জাপা কার্যালয়ের সামনে এসে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মিছিল থেকে কয়েকজন জাপা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে।

পরবর্তী সময়ে তারা কার্যালয়ের ভেতর প্রবেশ করে চেয়ার এবং টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র বাইরে এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা জাপার  বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

জাতীয় পার্টি ঘিরে এই পরিস্থিতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে অযথা এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা? জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি গণমাধ্যমকে বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব বা ছাত্রদের নাম যুক্ত হওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। ফ্যাসিবাদী এবং তাদের সহযোগীদের রাজনৈতিকভাবেই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।

শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম তাদের ফেসবুকে অভিন্ন পোস্ট দেন। তারা লিখেছেন, ‘যেই পথে গেছে আপা, সেই পথে যাবে জাপা।’ অর্থাৎ শেখ হাসিনা যে পথে গেছেন, জাতীয় পার্টিও সে পথে যাবে। তাদের এই অবস্থান জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি থেকে মূলোৎপাটনের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন,গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শুরুতে সেনাবাহিনী ও পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপে ডাক পাওয়া জাপার জন্য গুডলাক ছিল। কিন্তু দলটির নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে তারা রাজনীতি থেকে ছিটকে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা জাপাকে ডাকেননি। জবাবে দলটি দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে অবাঞ্চিত করে। জাপার এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ছিল। জাপার এখন কোনোভাবেই দ্বন্ধে জড়ানো উচিত হবে না। এই পরিস্থিতিতে দলটির উচিৎ সরকার ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির পথ খুঁজে বের করা। রংপুরে জুলাই আগস্টের গণআন্দোলনে জাপার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সেটা কাজে লাগাতে হবে। না হলে জাপা চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ক্রমেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে জাপার। এ সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরত্ব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়