মহসিন কবির : জাতীয় পার্টি ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বিজয়নগরে পার্টির অফিসের সামনে সমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি। এ সমাবেশের প্রতিবাদে পাল্টা সমাবেশ করবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতা। ফলে রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণপ্রতিরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় এ কর্মসূচি পালিত হবে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় পার্টির ডাকা শনিবারের সমাবেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে পুনরুত্থানের পরিকল্পনার অংশ। এই অপতৎপরতা বন্ধের জন্যই ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টির সব কার্যালয়ের সামনে শনিবার বেলা ১১টায় গণপ্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা।
এদিকে দলের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শনিবার (২ নভেম্বর) সমাবেশ ডেকেছে জাতীয় পার্টি। ওইদিন দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে দলটি।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জি এম কাদের এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি বলেন, ‘দুই তারিখ আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি চলবে। আমাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে’।
সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, আমাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের দোসর, কীভাবে ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই শেখ হাসিনার সরকারে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তাই বলে আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগীদার হবো কেন? সেই সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী থাকাকালে হজযাত্রীদের খারাপ বিমানে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তার প্রতিবাদে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, তখন এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে আমি যে সঠিক ছিলাম তা উঠে এসেছিল। যার কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে দেয়নি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’ ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন দেওয়া হয়। দুই পক্ষই দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। সেই মিছিলটি শাহবাগ হয়ে বিজয়নগরে যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের’ প্রতিবাদে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতা’র ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল বের করেন। জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগরে যায় মিছিলকারীরা। সেখানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এর আগে ১৫ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান। রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক সভায় মোস্তাফিজার রহমান এ ঘোষণা দেন। জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির এই যৌথ সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রধান অতিথি ছিলেন। এ থেকে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :