শিরোনাম
◈ ফের সংঘর্ষে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়ার তথ্যটি সঠিক নয়: অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ◈ পারভেজ হত্যায় আলোচিত সেই দুই ছাত্রী সাময়িক বহিষ্কার ◈ সাগর-রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে: হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ ◈ মানুষের জীবন বিপন্ন করে দাবি আদায়ের শিক্ষা কে দিয়েছে ডাক্তারদের: সেনাবাহিনীর মেজর মেজবাহ উদ্দিন (ভিডিও) ◈ বিচার বিভাগসহ চার ইস্যুতে বিএনপি-জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফা বৈঠক ◈ বিরলে কৃষক ভবেশের মৃত্যুর ৪ দিন পর থানায় হত্যা মামলা ◈ ফ্লোরিডায় উড্ডয়নের আগেই প্লেনে আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ২৮২ যাত্রী (ভিডিও) ◈ পরীক্ষাকেন্দ্রে হট্টগোল, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ১২ শিক্ষককে অব্যাহতি! ◈ বিশ্বজুড়ে বিরাট সাইবার অপরাধের আশঙ্কা: জাতিসংঘ

প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ০৪:৪৬ দুপুর
আপডেট : ০৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের প্রভাব : ডয়চে ভেলে প্রতিবেদন

স্বাধীনভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কি কমে যাচ্ছে? সরকারের উপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রভাব কি বাড়ছে? সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন আলোচনা শুরু হয়েছে। 

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিষয়টি নিয়ে সংবাদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে। 

প্রদিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীর ব্যানারে হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের পর বিচারকদের ছুটিতে পাঠানো, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের' তরফ থেকে দাবি ওঠার পর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা - এমন অনেক বিষয়েই সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রদের প্রত্যক্ষ প্রভাব সুস্পষ্ট। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপির বিরোধিতায় ছাত্রদের দাবির বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। ফলে ছাত্রদের চাপে সরকার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কিনা তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ দ্বৈত শাসনের কথাও বলছেন।

তবে বিষয়গুলোকে এভাবে দেখতে রাজি নন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে, সেক্ষেত্রে দাবি শুধু ছাত্ররাই করেনি, অন্য জায়গা থেকেও এসেছে। সরকার নিজেদের মতো করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন ধরেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি। ছাত্রদের দাবির পর কিন্তু সরকার অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ছাত্ররা রাস্তায় যে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে, সেটা তারা করতে পারেন। এই সরকার এসেছে তিন মাসও হয়নি। ছাত্ররাও নিশ্চয় সবসময় রাস্তায় সমাবেশ করবে না। তাদেরও বিষয়টি বুঝে নিতে সময় দিতে হবে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এখনই এগুলো নিয়ে বিতর্ক তৈরির কোনো সুযোগ নেই। 

গত ১৬ অক্টোবর ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের' পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দুপুরে তারা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। তাদের স্লোগান, অবস্থান কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। এদের ৬ জন আমন্ত্রণে যান, পরে ১২ জনকেই ছুটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে বর্তমান সরকারের শুরুতে আদালতে মিছিল নিয়ে গিয়ে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির অপসারণ চাওয়া হয়েছিল। তাদের চাওয়া অনুযায়ী তখন বিচারপতিদের সরে যেতে হয়েছিল। একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়ার কথা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তার ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। এক পর্যায়ে তাকে সরিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলো।

এরপর গত ২২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সভা থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে মিথ্যাচার করে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয় ওই সমাবেশ থেকে। পেররদিন, অর্থাৎ ২৩ অক্টোবরই সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশে সরকার দুইটা কিনা সেটাই প্রশ্ন! ছাত্ররাও সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, আবার যারা শপথ নিয়েছেন তারাও চালাচ্ছেন। ছাত্রদের চাওয়াতেও পরিবর্তন হচ্ছে। প্রত্যাশা করেছিলাম, পরিবর্তন আশা করেছিলাম, সেটা হয়নি। আশাটা পূরণ যে হবে সেটার লক্ষণ দেখছি না। এই বিষয়গুলো খুবই হতাশাজনক।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষনে একাধিকবার বলেন, ছাত্ররাই আমাদের নিয়োগকর্তা। এই বক্তব্যের ফলে ছাত্ররা আরো বেশি উৎসাহিত হয়েছেন কিনা, আর দাবি করলেই সেটা মেনে নিতে হবে- বিষয়টি এমন কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ছাত্ররা দাবি করলো আর তাতেই পরিবর্তন করতে হবে সেটা ঠিক না। আন্দোলনের নেতৃত্বে হয়ত ছাত্ররাই ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি, দাবি আসতেই পারে, সেগুলো নিয়ে ছাত্রদের যেমন মতামত থাকবে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

তবে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ছাত্রদের দাবি পূরণ হয়নি। বিএনপি বিরোধিতা করায় সরকারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে কিছুটা সরে এসেছে। এরপরই ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, তারা সরকারের কাছে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটা কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দেবেন। সেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কে কোন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি হবেন, তা তারাই আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন। এই কয়েক দিনের আলোচনায় আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, তা হচ্ছে এই রাষ্ট্রপতিকে যেতেই হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। 

রাষ্ট্রপতির অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছয় দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ছয়টি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট হোক সেটা তারা চায় না।

ছাত্ররা দাবি করলেই যে, সরকার মেনে নিচ্ছে বিষয়টি বিএনপি কিভাবে দেখছে? জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমরা চাই না দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক। আমাদের দাবি খুবই পরিস্কার, একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো দ্রুত করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। এখন কে কোন জায়গা থেকে কি দাবি করছে, সেটা আমাদের কাছে মূখ্য নয়। আমরা সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে বিষয়গুলো জানিয়ে দিয়েছি।

ছাত্রদের আন্দোলনের ফলেই তো বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে। ফলে রাস্তায় দাবি না জানিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে দাবিগুলো জানালে ভালো হতো কিনা জানতে চাইলে অন্যতম সমন্বয়ক বাকের মজুমদার বলেন, এই সরকারের সব উপদেষ্টা কিন্তু ছাত্ররা পছন্দ করে আনেননি। আমাদের দুই জন প্রতিনিধি আছে। এর বাইরে যারা আছেন, তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসেছেন। আমরা চেয়েছি পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের নিয়েই সরকার গঠন হোক। এখন আমরা যে দাবিগুলো করেছি, এর কোনোটি কি অযৌক্তিক? তাহলে আমাদের দাবি জানাতে সমস্যা কী? দাবি যৌক্তিক হলে সরকার তো মানবেই। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের আন্দোলনের দুইটা বিষয়। 

প্রথমত, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ। এবং দ্বিতীয় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এই দাবিতে আমরা তো আন্দোলন করবোই। আমরা পরিস্কার বলতে চাই, সরকারের ভালো কাজের প্রসংশা যেমন আমরা করবো, তেমনি প্রয়োজন মনে করলে কোনো কাজের গঠনমূলক সমালোচনাও করব। যে বিষয়গুলো আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হবে, সেই দাবি আমরা জানাবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়