শিরোনাম
◈ রাষ্ট্রপতির অপসারণে ফের রাজনৈতিক সংলাপ, এবার সমন্বয়করা ◈ অমিত শাহের পেট্রাপোল বন্দর পরিদর্শনে বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি ◈ আলোচিত সেই এডিসি সানজিদাকে বদলি ◈ 'যে কোন দিন আপনার বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়ে যেতে পারি', আইন উপদেষ্টার সামনেই হাসনাত বললেন (ভিডিও) ◈ তরুণীকে একা পেয়ে টানাহেঁচড়া করল ছিনতাইকারীরা (ভিডিও) ◈ একদিনের মাথায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিবের নিয়োগ বাতিল ◈ ফরিদপুরে ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালিকা ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ◈ লিভারপুলের ১৩২ বছরের ইতিহাসে অনন্য রেকর্ড গড়লেন আর্নে স্লট ◈ রোববার নারী সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ও ভুটান মুখোমুখি ◈ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলন চান অধ্যাপক ইউনূস

প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:৪১ দুপুর
আপডেট : ২৫ অক্টোবর, ২০২৪, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যত ষড়যন্ত্র

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একর পর এক মিথা অভিযোগ তুলে একটিও প্রমাণ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। যেমন ২০০৪ সালের প্রথমবারের দাবি করা হয়, তারেক রহমান দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। সেই বছরের জুলাইয়ে প্রথম এই দাবি করেন আওয়ামী লীগের সেই সময়কার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস। পরবর্তীতে আরেক তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, তারেক রহমান ২২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।

ফোর্বস বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা নয়, তারেক রহমানকে শীর্ষ ধনীর তকমা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ কাজটি করেছিল, দলটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘এই সময়’ অনলাইনে ২০২৩ সালের জুলাইয়েও দাবি করা হয় তারেক রহমান বাংলাদেশের চতুর্থ শীর্ষ ধনী। একই দাবি ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বরে সামহোয়্যারইন ব্লগে করা হয়।

মূলধারার গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর না থাকলেও, তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনের কথিত দুর্নীতি বক্তৃতায়, সামাজিক মাধ্যমে, প্রোপাগান্ডামূলক ওয়েবসাইট থেকে ছড়ানো হয়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সিআরআই এ প্রচার চালাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপাসরনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির আখড়া হিসেবে প্রচার করা হয়। অভিযোগ তোলা হয়, হাওয়া ভবনের প্রভাবের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন এবং পাচার করেছেন তারেক রহমান।

২০০৭ সালে তারেক রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদ বিবরণী জমা দেন। আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির প্রচার চালালেও, দুদক ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে লাগাতার অনুসন্ধান এবং তদন্তেও তারেক রহমানের দাখিল করা হিসাবের বাইরে সম্পদ খুঁজে পায়নি দুদক। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত তারেক-জোবায়দা দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা উল্লেখ করে সাজা দেয়।

যদিও তারেক রহমানের আইনজীবীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, রায়টি নীতিভ্রষ্ট। কারণ, যে তিনটি সম্পত্তিকে তারেক রহমানের অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে দেখিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তিনি কখনো দাবি করেননি, দখলও নেননি।

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে বসুন্ধরা-বারিধারা প্রকল্পে ১০৬৪ প্লটে ১০ কাঠা জমি তারেক রহমানের কন্যা জায়মা জারনাজ রহমানের নামে দেখানো হয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি টাকা। তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন, এ জমি তার কেনা নয়। এই প্লট কখনো ভোগদখল করেননি। জমিটিতে কখনো যাননি পর্যন্ত।

গাজীপুর সদর থানার ৩৭৫৮ দাগে ৬৬ শতাংশ এবং ৩১৮৪ দাগের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ জমিও তারেক রহমানের নামে কেনা হয়েছে। এই জমিও তিনি দাবি করেন না, দখলও চান না। কে বা কারা এই জমি তার নামে কিনেছে তা অস্পষ্ট। তারেক রহমানের আইনজীবী আজম খান বলেছন, জাতীয় পরিচয়ের (এনআইডি) প্রচলনের আগের জমি ক্রয় বিক্রয় এবং নামজারির সময়ে ক্রেতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল না। তাই কেউ যদি তারেক রহমানের নামে সম্পত্তি কিনে থাকে, সেটা কেন করেছে কী উদ্দেশ্যে করেছে সে-ই ভালো বলতে পারবে। 

কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা এবং সিআরআই এ বিষয়গুলো গোপন করে তারেক রহমান বিরোধী প্রচার চালায়। কিছু সংবাদমাধ্যম সেগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ করায়, তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবন বিতর্কিত হয়।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বলেন, বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০ হাজার কোটি দুর্নীতি করেছেন তারেক রহমান। এই বক্তব্য সব সংবাদমাধ্যমে যাচাই ছাড়া প্রকাশিত হয়।  

কিন্তু ২০০১-২০২২ অর্থবছর থেকে ২০০৬-২০০৭- এই ছয় অর্থ বছরের বাজেট, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি )দেখা গেছে, বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ জ্বালানী খাতে বরাদ্দই ২০ হাজার কোটি টাকা ছিল না। ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরের বাজেটে বিদ্যুৎখাতে ৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়সহ মোট বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ছয় অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকার কম। যা ব্যয় হয়েছে নতুন চার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ,  গ্যাস, কয়লা, জ্বালানী কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতায়।

আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে দায়মুক্তি আইন করে বিদ্যুৎ জ্বালানী খাতে ক্রয় প্রক্রিয়া চালিয়েছে, বিএনপি আমলে এ সুযোগ ছিল না। দলটি সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে বিএনপি আমলের কথিত দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি। একাদশ সংসদে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু দাবি করেছিলেন, স্পিকারের কাছে দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ দেবেন। যা তিনি কখনো দেননি।

একই দিন বিপু বলেন, ‘নাইকো কেলেঙ্কারিতে এফবিআইয়ের কাছে তারেক রহমানের বন্ধুর সাক্ষাৎকার, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাম্বাসহ বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বিএনপি আমলের দুর্নীতির প্রমাণ সরকারের কাছে আছে। সময় হলে সব দেখানো হবে। নির্বাচন সামনে আসছে, প্রস্তুত থাকুন। আমরা সব দেখাবো’। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারের তা হাজির করেননি বিপু বা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতা। 

হাওয়া ভবনের সত্য-মিথ্যা

আওয়ামী লীগ ও সিআরআইয়ের দাবি ছিল, বনানীর ১৩ নম্বর রোডের হাওয়া ভবনটি ছিল বিএনপি আমলের ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র। এই ভবন থেকেই বিএনপি সেই সময়কার সিনিয়র যুগ্ম মহাচিব তারেক রহমান সরকার পরিচালনা করতেন। হাওয়া ভবনের কারণে ২০০১ থেকে পরের পাঁচ বছর বাংলাদেশ টিআইবি ধারনা সূচকের দুর্নীতিতে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হয়।

টিআইবি ২০০১ সালের যে ধারনা সূচক প্রকাশ করে, সেই সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল ছিল মাত্র ২ মাস ২০ দিন। বাকি সময়ে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আগের সরকারের জেরে বিএনপি শাসনামলে দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন তকমা পেতে হয় বিএনপিকে।

পরের চার বছরে ক্রমাগত উন্নতি করে বাংলাদেশ। ২০০১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল শূন্য দশমিক ৪। বিএনপি যখন ২০০৬ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় ছাড়ে সেই সময়ে স্কোর ছিল ২ এবং শীর্ষ থেকে তৃতীয়স্থানে উন্নীত হয় বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০৬ সালের ধারণা সূচক পরের বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হওয়ায় বিএনপি সেই কৃতিত্ব পায়নি।

আওয়ামী লীগের বড় প্রচার ছিল সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি-পদায়ন  হতো হাওয়া ভবন থেকে।  সেই সময়কার জনপ্রশাসন সচিবের দায়িত্ব পালন করা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী স্পষ্ট করে বলেছেন, এই ধরনের চাপ কখনো ছিল না। তারেক রহমান কখনো কারো পদোন্নতি বদলির জন্য বলেননি।  

বিএনপি সরকারে মন্ত্রীত্ব না পেয়ে ক্ষুব্ধ নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ২০০৬ সালের এপ্রিলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলেন। মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালেও তিনি তারেক রহমানের এসব কর্মকাণ্ডের  ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তায় জানা যায়। এতে আরও বলা হয়, তারেক রহমান ‘বিপজ্জনক ও অপরিণত’।

আওয়ামী লীগ এই বক্তব্য লুফে নেয়। পরবর্তী সময়ে স্পষ্ট হয়, অলির বক্তব্য ছিল প্রতিহিংসা প্রসূত। তিনি ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে এলডিপি নামে দল গঠন করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটও করেন। যা টেকসই হয়নি। পরবর্তীতে এলডিপি বিএনপির জোটে যোগ দেয়। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তারেক রহমান ‘বিপজ্জনক’ হলে নিশ্চয় তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব মেনে পরবর্তী সময়ে রাজনীতি করতেন না। আওয়ামী লীগের প্রলোভন উপেক্ষা করে ২০১১ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে থাকতেন না। 

টাকা পাচারের অপপ্রচার 

হাওয়া ভবনের প্রভাব খাটিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলার ঘুষ, চাঁদাবাজি এবং পাচারের অভিযোগ তোলা হয়। বলা হয়, সিমেন্স থেকে তারেক রহমান এবং তার ভাই আরাফাত রহমান কোকো চুক্তি মূল্যের থেকে প্রায় ২ শতাংশ কমিশন নিয়েছিলেন। টঙ্গীতে একটি ৮০ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য চীনা কোম্পানি হারবিন তারেক রহমানকে সাড়ে সাত লাখ মার্কিন ডলার উৎকোচ দিয়েছিল। এই টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে যায়।

এই অভিযোগগুলো তুলেছিলেন বিএনপি সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির তালুকদার। যিনি ২০০৬ সালের ৩ অক্টোবর পদত্যাগ করেছিলেন। তিনিও যোগ দিয়েছিলেন এলডিপিতে। ২০০৯ সালে এলডিপি ছাড়েন। এরপর পর ২০২০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনো তিনি এ অভিযোগ করেননি।

২০০৯ সালে দুদকের মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দেওয়ার কথা বলে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ নেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। যে অর্থ লেনদেন হয় সিঙ্গাপুরে এবং সেখানেই  মামুনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা রাখা হয়। সেখান থেকে  প্রায় ৪ কোটি টাকা তারেক রহমান খরচ করেছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারেক রহমানের বিরুদ্ধ এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে জানায় আদালত।

২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঘোষিত এ রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়, তারেক রহমান অর্থপাচারে জড়িত নন। নিম্ন আদালতের খালাসের পরই হাইকোর্ট সাজা দেয় তারেক রহমানকে। যা বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে বিরল। নিম্ন আদালতে তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া বিচার মোতাহার হোসেন পরে সরকারি হেনস্তার শিকার হন। যা স্পষ্ট করে বিচারকদের ওপর চাপ ছিল, তারেক রহমানকে সাজা দিতে। 

হাওয়া ভবন এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা 

হাওয়া ভবন সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে একুশে আগস্টের  গ্রেনেড হামলার ঘটনায়। এ মামলায় তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায়ে বলা হয়,  বনানীর হাওয়া ভবন ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির ৫/এ সড়কের ৬১ নম্বর সরকারি বাসভবনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়। হাওয়া ভবনে তারেক রহমান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

রায়ে বলা হয়েছে, ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরের এমপি শাহ মোফাজ্জাল হোসেন কায়কোবাদ তাকে এবং অন্যদের হাওয়া ভবনে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। হামলায় সহযোগিতা চাইলে তারেক রহমান অন্য আসামিদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা আয়োজনের সংবাদ জানার পর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত  হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। মুফতি হান্নান, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুলের গাড়িতে করে মাওলানা রশীদসহ অন্যরা হাওয়া ভবনে যান। সেখানে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান সেখানে আসেন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সহায়তা চাওয়া হয়। তারেক রহমান তখন বলেন, তাদের আর আসার দরকার নেই। লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করার কথা বলেন। সব প্রকার সহায়তা দেবেন লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টু। ওই বছরের ১৮ আগস্ট মুফতি হান্নান, আহসান উল্লাহ কাজল, মাওলানা আবু তাহের আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির বাসভবনে যান। সেখানে পিন্টু, বাবর, মাওলানা তাজউদ্দিন, আরিফ কমিশনার ও হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ উপস্থিত ছিলেন। পিন্টু, বাবর, কমিশনার আরিফ ও হানিফ তাদের সব প্রকার সহায়তা করবেন বলে জানান।

একুশ আগস্টের পুরা মামলার ভিত্তি মুফতি হান্নানের জবানবন্দি। কারণ, ওয়ান ইলাভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেওয়া অভিযোগপত্রেও তারেক রহমানের নাম ছিল না। এমন কী তিনি মামলার আসামিও ছিলেন না। ২০১০ সালে অধিকর তদন্তের নামের পরের বছরে ৩ জুলাই অভিযোগপত্রে মুফতি হান্নানের জবাববন্দির ভিত্তিতে যুক্ত হয় তারেক রহমান এবং অন্য রাজনীতিকদের নাম। কিন্তু মুফতি হান্নান ওয়ান ইলাভেনের সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাতে তারেক রহমান বা বিএনপির বিষয়ে কিছুই বলেননি। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুফতি হান্নানের এক জবানবন্দিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পুরো দৃশ্যপট বদলে দিয়েছিল।

তবে মুফতি হান্নানের সে জবানবন্দি 'জোর করে' নেয়া হয়েছিল বলে বরাবরই দাবি করেছেন তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীরা।

মুফতি হান্নান ৩৪৭ দিন রিমান্ডে থাকার পর  স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে ২০১১ সালেই তিনি এই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, তাকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। সংবিধানের ৩৫(৪) অনুযায়ী, ‘কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না’। মুফতি হান্নানের ক্ষেত্রে তাই করা হয়েছে। 

নিম্ন আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহার স্বাভাবিক নিত্যদিনের বিষয়। কিন্তু মুফতি হান্নানের আবেদন করে জবানবন্দি প্রত্যাহার করা হয়নি। তা করা হলে, তারেক রহমানকে এই মামলায় জড়ানোর সুযোগই থাকত না। 

নিম্ন আদালত জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করলে, মুফতি হান্নান হাই কোর্টে যান। আশ্চর্যজনকভাবে হাই কোর্ট তার আবেদন খারিজ করে ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল। সেদিন তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনজুর কাদের বলেছিলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট পরে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। মুফতি হান্নান এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অস্বীকার করে ওই সাক্ষ্য বিচার প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে বিচারিক আদালতে দুটি আবেদন করেন। সেখানে উভয় আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নান ২০০৭ সালে একটি জবানবন্দি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করছে, তিনি ২০১১ সালে আরেকটি জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া মুফতি হান্নান এ বিচারকের কাছে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। হত্যা মামলায় কোনো জবানবন্দি তিনি দেননি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তার ওই জবানবন্দি হত্যা মামলায় ব্যবহার করছে। ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দেন। 

২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার সাক্ষ্যের বৈধতা নিয়ে আসামি পক্ষের আবেদন খারিজ করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়