শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:৫৮ বিকাল
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনের সম্ভব্য সময় নিয়ে বিতর্ক, সন্দেহ-সংশয়ে রাজনীতিবিদরা

মোহসীন কবির : নির্বাচনের সম্ভব্য সময় নিয়ে বিতর্ক চলছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বেসরকারি টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন. ‘আমার কাছে মনে হয়, আগামী বছরের (২০২৫ সাল) মধ্যে নির্বাচন করাটা হয়তো সম্ভব হতে পারে। অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এটা প্রাইমারি অ্যাজাম্পসন (প্রাথমিক অনুমান)।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারে সাংবাদিকদের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন,  তা তাদের ব্যক্তিগত বক্তব্য। এই দুই জনের বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়। সরকার যতদিন নির্দিষ্ট করে বলবে না ততদিন নির্বাচনের সময় নির্ধারিত নয়।

নির্বাচন নিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বসানো হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গ। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র নড়বড়ই থেকে যাবে। তাই সরকার সংস্কারে গভীরভাবে কাজ করছে।”

ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেছেন, “অনেক নেতা প্রকাশ্যে বলছেন, ‘উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না।’ এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের কোনো ধরনের ক্ষমতা প্রীতি বা লোভ নেই, আমরা এসেছি অস্থায়ীভাবে।

ওই বক্তব্যের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শনিবার ফেসবুকে নির্বাচন নিয়ে ব্যাখ্যামূলক স্ট্যাটাস দেন তিনি। ওই পোস্টে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি টিভি আলোচনায় আমি বলেছি, নির্বাচন হয়তো আগামী বছরের মধ্যে সম্ভব হতে পারে, তবে এক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে। সেখানে এসব ফ্যাক্টর পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমাদের সরকারের কথা থেকে সবাই বুঝবেন যে নির্বাচনের জন্য সংস্কার ও রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলা হয়। এগুলোই সেই ফ্যাক্টর।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের কথা আমিও অনুষ্ঠানে বলেছি। আরও কিছু ফ্যাক্টর আমি অনুষ্ঠানটিতে ব্যাখ্যা করেছি, যেমন-সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি। এসব ফ্যাক্টর ঠিক থাকলে নির্বাচন হয়তো হতে পারে আগামী বছর। বলেছি এটাও আমার প্রাথমিক অনুমান। এই শর্তভিত্তিক ধারণা ও অনুমানকে কিছু গণমাধ্যম নির্বাচনের ঘোষণা হিসেবে দেখাচ্ছেন। বিনয়ের সাথে বলছি, এটা সঠিক নয়। নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ডিসিশন। এর সময় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঠিক হবে। তিনিই একমাত্র এটা ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন।’

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন রকম বক্তব্য এসেছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনমনে নানা সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে। শুক্রবার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেআরএফ) রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ আরও দায়িত্বশীল, গণভূমিকা ও কার্যকর দেখতে চায় মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণ এই সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের এই সমর্থনের মূল্য দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্র ও রাজনীতি সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে এই সরকার বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও সংস্কারের পক্ষে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। তবে, যে কোনো সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব না হলে সেই সংস্কারে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না।

শনিবার সকাল ৯টার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা আন্দোলনের ফসল। তবে সংস্কারে গিয়ে বছরের পর বছর এ সরকারকে এ দেশের জনগণ গ্রহণ করবে না। 

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমি এই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আপনার হলেন আন্দোলনের ফসল। আপনাদের দায়িত্ব হলো একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, আমরা রাজি আছি। সংস্কার করতে গিয়ে বছরের পর বছর আপনাদেরকে এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’

নায়েবে আমির আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রতি মানুষের হতাশা বাড়ছে। মানুষ যা আশা করেছিল তা আপনারা করতে পারছেন না। আপনাদের খুব ধীর-স্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতা এই জাতিকে আবার কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমরা দাবি করব অনতিবিলম্বে দ্রব্যমূল্য কমানোর দিকে নজর দিন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, এ দেশের মানুষ এখনো গণতন্ত্র বলতে ভোটকেই বোঝে। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসকেরা জনগণের এই ভোটের অধিকারকেই কেড়ে নিয়েছিল। মানুষের এই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গোটা নির্বাচনি ব্যবস্থার গুণগত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়