মহসিন কবির : সারা দেশে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পুরো পার্টির বদনাম হচ্ছে। যার কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে বিএনপির। আন্দোলনের আগে বিএনপি জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিলো। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্ববানে সারাদিয়ে নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে হটিয়েছে। তাতে ৪০০ জনের মত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। সেই আত্মত্যাগ ম্লান না হওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ জানিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমান।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর হামলা, দখল, অর্থ দাবি, আধিপত্য বিস্তার এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত দুই মাসে এক হাজারের বেশি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে বহিষ্কার, অব্যাহতি, পদাবনতি ও কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরও অভিযোগ আসা এখনো থামেনি।
১২ অক্টোবর ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের শাহবাগ থানাধীন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু এবং সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এই সময়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দলের পরিচয় দিয়ে কোনরকম কার্যক্রম না চালাতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের অনেকে গণমাধ্যমকে বলছেন, বিএনপির ‘অবাধ্য’ নেতা-কর্মীদের গত দুই মাসের কর্মকাণ্ড ১৫ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দলকে সমালোচনার জায়গায় নিয়ে গেছে। বিশেষ করে, একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতিতে বা ক্ষমতায় গেলে নেতা-কর্মীরা কী ধরনের আচরণ করতে পারেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নেটিশ, ৪৩৭ জনকে বহিষ্কার, ২৪ জনের পদ স্থগিত, ৩৫ জনকে সতর্ক এবং ৪ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া নেতাদের মধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা রয়েছেন।
ইতোমধ্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার ও এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও বিলকিস জাহান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিম হত্যার ঘটনায় দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিকে শোকজ করেছে বিএনপি। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপির নামে কেউ কেউ দখলদারি, চাঁদাবাজি করতে পারে। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় চার শর বেশি বহিষ্কার করেছি, অনেকের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শেরপুরে সংঘর্ষে ছাত্রদলের জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম শ্রাবণ (৩০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তার আগে ৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন কালীগঞ্জের মোক্তারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক (৬০)।
২১ আগস্ট ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কবির ভুঁইয়া (৫৫) নামে একজন নিহত হন।
এছাড়া বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ গত কয়েকদিনে চাঁদপুরে কমপক্ষে ৫০ জন, নওগাঁয় কমপক্ষে ২০ জন, জামালপুরে কমপক্ষে ৩০ জন, কুষ্টিয়ায় কমপক্ষে ১০ জন, কুমিল্লায় কমপক্ষে ৫ জন, নীলফামারীতে কমপক্ষে ১০ জন এবং গাজীপুরে কমপক্ষে ১০ আহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে সঙ্গে-সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও-কোথাও মামলা পর্যন্ত করা হয়েছে। আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :