শিরোনাম
◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল ◈ এবার ভয়ংকর সেই আয়নাঘর নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ◈ নির্বাচনের সময় নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল ◈ পরীক্ষা দিতে এসে আটক রাবি ছাত্রলীগের ২ নেতা ◈ বিশ্বের ১১০ কোটি তীব্র দরিদ্র মানুষের মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি থাকেন ভারতেই!  ◈ দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে বরের ওপর সাবেক স্ত্রীর হামলা ◈ এবার শাহবাগে বিক্ষোভ করছে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা : চাকরি জাতীয়করণের দাবি ◈ স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ আবার ফিরেছেন বাংলাদেশ দলে ◈ দক্ষিণখানে পুলিশের পোশাক,নকল পিস্তলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:৩০ দুপুর
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে যে কারণে রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে হয়েছিল

পদত্যাগের পর বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বদরুদ্দোজা চৌধুরী

বিবিসি বাংলা : সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন।তিনি ঢাকার উত্তরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত সোয়া ৩টায় মারা। তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফুসফুস সংক্রমণের পর গত ২ অক্টোবর তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বদরুদ্দোজা চৌধুরী আগে থেকেই ‘স্কিমিক হার্ট ডিজিজে’ ভুগছিলেন।

রাজনীতিতে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিচিতি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে।

কিন্তু ২০০২ সালে সে দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেন তিনি। যদিও গত দুই দশকেও তার নতুন দলটি বড় সাড়া জাগাতে সফল হয়নি। তবে রাজনীতিতে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বরাবর ছিলেন আলোচিত এক চরিত্র।

বাংলাপিডিয়া বলছে, বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৭৯ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, যখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব।

সেসময় মানে ১৯৭৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া - দুই সরকারের সময়ই মন্ত্রী ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুইবার জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন। ওই সময় শপথ গ্রহণের আগে তিনি বিএনপির সকল পদ ও দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রাজনীতিতে অভিষেক ছিল নাটকীয়, কিন্তু বিএনপি থেকে তার প্রস্থান ছিল 'বিয়োগান্তক'।

বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট হবার পর এমন নাটকীয় পদত্যাগের ঘটনা আর ঘটতে দেখা যায়নি। ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদত্যাগ করেনবদরুদ্দোজা চৌধুরী। সেসময় বিএনপি সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল। তার আগে বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকে অনেক সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যথায় তাকে ইমপিচ করার হুমকি দেন তারা।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র সাত মাস সাত দিনের মাথায় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে কেন বিদায় নিতে হয়েছিল, তার নানাবিধ কারণ উল্লেখ করে তখনকার সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।

যেসব কারণের কথা ওইসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে:

* জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন না করা।

* রাষ্ট্রপতির বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা।

* বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুন্সীগঞ্জে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলে এবং সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরীর তোরণ নির্মাণ।

* রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন বক্তব্যে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' ব্যবহার না করা, কারণ 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' বিষয়টি বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ধারণ করে।

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমদকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা। অধ্যাপক আফতাব আহমদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর অনুমোদন করেছিল।

রাষ্ট্রপতি সেই ফাইলে স্বাক্ষর না করায় পরবর্তীতে আফতাব আহমদকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগমকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

* রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন 'বাংলাদেশ টেলিভিশনে' রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বেশি সময় পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন বিএনপির কিছু নেতা। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কভারেজ কমিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিটিভিকে বলা হয়েছিল - এমন খবর সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে।

* তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য এক মাস আমেরিকায় অবস্থান করে দেশে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি কোনো খোঁজ-খবর নেননি।

* দলের মনোনীত হয়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া।

* রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ব্যয় বাড়ানো।

* সেনাবাহিনীসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন রাষ্ট্রপতি।

* রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বাইরে অধিক সংখ্যক জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া।

* বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে সরকারের একটি মহল থেকে আপত্তি এলে তা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদত্যাগের পর তিনি বিএনপি কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন।

এরপর 'বিকল্পধারা বাংলাদেশ' নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। তবে দলগঠনের পর দেশজুড়ে সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত বা জনপ্রিয় করতে পারেননি তিনি। তবে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে যোগ দিয়েছিল বিকল্পধারা বাংলাদেশ। যদিও পরে সে ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

সর্বশেষ, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন যেটিতে বিএনপি অংশ নিয়েছিল, সেসময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির সাথে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় বিকল্প ধারা বাংলাদেশ।

রাজনীতিতে সক্রিয় হবার আগে থেকেই চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এছাড়া ভালো ছাত্র এবং উপস্থাপক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর কুমিল্লায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ব্রিটেনের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি এডিনবার্গ, লন্ডন ব্রোম্পটন চেস্ট ইন্সটিটিউট, লন্ডনের হ্যামার স্মিথ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণ করেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী এম.বি.বি.এস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনীতির বাইরে তিনি চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়