শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৪৮ দুপুর
আপডেট : ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাঝিবিহীন নৌকা, কাণ্ডারীবিহীন আওয়ামী লীগের গন্তব্য কোথায়?

ইশরাত জাহান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি এমনভাবে কুক্ষিগত করেছিলেন আদতে দলটির রাজনীতি বলে আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না। তিনি যা বলতেন, তিনি করতেন তা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরিণত হয়েছিল। এখন তিনি নেই তার দলের নেতারাও পলাতক। দলের রাজনীতি শুরু করার কোনো লক্ষণ নেই। ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মত আওয়ামী লীগ নিজেই নিজেকে গিলে খেয়েছে। হাসিনা বিরোধীদলগুলোকে পাকিস্তানের দালাল, পেয়ারে পাকিস্তান বলে সেদেশে চলে যেতে বলতেন। ভাগ্যের পরিহাস, তারা কেউ পাকিস্তান যাননি কিন্তু তিনি ও তার দলের একাধিক নেতা ভারতেই আত্মগোপন করেছেন। মূলত আওয়ামী লীগ এভাবে ভারতীয় দলে পরিণত হয়েছে। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সবপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে রয়েছেন। খোদ দলটির প্রধান শেখ হাসিনা জন-অসন্তোষের রোষানল থেকে আত্মরক্ষায় পালিয়ে ভারতে গিয়ে উঠেছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায় রয়েছেন সে ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত সুনিদিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির বেহাল দশায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দলটির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে শীর্ষ দু’টি পদে যোগ্য ও অভিজ্ঞদের মধ্য থেকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের শুভাকাক্সক্ষী মহল।

একসময়ের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো এখন মৃত। যে গণরোষ তৈরি হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ আগামী ২০ বছরেও এই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরকে দিয়ে আর রাজনীতি হবে না। উনাদের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে যদি কিছু করা যায়।

কিন্তু কে হবেন আওয়ামী লীগের কাণ্ডারী। কে হবেন ভারপ্রাপ্ত। ভারত দলটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে এটা এখন দিবালোকের মত পরিস্কার। এ পরিস্থিতিতে সবপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে গেলেও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দলকে রাজনীতিমুখী হতে গেলে কাউকে দলটির হাল ধরতে হবে বলে মনে করেন উদারপন্থী শীর্ষ নেতাদের অংশটি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের ঘটনায় দলের মহাবিপর্যয়ের পর কিভাবে দলের পুনর্গঠন করা যায়, কিভাবে জনসম্মুখে আসা যায় সেটি নিয়ে অনলাইনসহ ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে শীর্ষ পর্যায়ে জোরালোভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। এর মধ্যে নতুন এবং পুরনো দিয়ে দল পুনর্গঠন নিয়ে ভাবছেন আওয়ামী লীগের উদারপন্থী নেতারা। কিন্তু সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন  না তারা। সম্ভবও নয়। কারণ এ দলের নীতি চূড়ান্ত হচ্ছে এবং হবে দেশের বাইরে থেকে। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। অনেকেই মনে করছেন, দেশের এমন প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব নিলে মামলা-হামলার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যে জনঅসন্তোষ তৈরি হয়েছে তাতে ঝুঁকি নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অনেক চ্যালেঞ্জ এবং কঠিন। অবশ্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে যেসব নেতার নামে বর্তমান সময়ে মামলা নেই, ক্লিন ইমেজ ও গ্রহণযোগ্য তাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব প্রদান করে দল পুনর্গঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নিতে পারে। এই আলোচনায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও মো: রশিদুল আলম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব:) ফারুক খান, সিমিন হোসেন রিমি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ প্রমুখ।

গত ৬ সেপ্টেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সদস্যসচিব করে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই বিবৃতিতে দলটির দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়ার স্বাক্ষর দেখা যায়। যদিও ওই সময় দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে বিভক্ত ও দুর্বল করার জন্য সামাজিক ও গণমাধ্যমে এ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। নেতাকর্মীদের ফাঁদে পা না দেয়ার অনুরোধ জানানো হলো। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক বিবৃতিতে বলেন, একটি মহল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তনের গুজব ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে, থাকবে ইনশা আল্লাহ।

এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ন্যাপের সহ-সম্পাদক ও বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল টানা ১৫ বছরেরও বেশি ক্ষমতায় ছিল। হঠাৎ করে এক মহাবিপর্যয় ঘটেছে এবং দলের সবপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে রয়েছেন- এটা ইতিহাসে বিরল। তিনি বলেন, এত বড় একটি দল এভাবে না থেকে খুব শিগগিরই পুনর্গঠন করা জরুরি। নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ রাখার জন্য আপাতত বিতর্কিত নয়, সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দল রিফর্ম করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনাসহ অন্য নেতারা মামলা ফেস করে যদি দেশে ফিরতে পারেন তখন তারা আবার দায়িত্ব নেবেন- এতে দোষের কিছু থাকবে না।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল বলেছেন, আওয়ামী. লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে না; গুম-খুন-দুর্নীতির বিচার হলে আ. লীগের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতির বাইরে চলে গেছে এভাবেই। রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করেছে দলটি নিজেই। সোহেল তাজ বলেন, শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাসিনা বিশ্বাসঘাতক করলেও দলটির কোনো নেতা তা নিরসনে বা পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসেন নাই কেনো। কারণ গণতান্ত্রিক কোনো পদ্ধতি দলটির মধ্যে ছিল না। অথচ হাজার হাজার নেতা হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। তাদের মত সোহেল তাজ বলেন, আমিও আস্থা রেখেছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর। শি বিট্রেইড মি, শি বিট্রেইড দ্য পার্টি, আওয়ামী লীগ, শি বিট্রেইড বাংলাদেশ। বিকজ আমরা যে দিনবদলের সনদ, যেটা আমরা মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম করব সেটা করতে হলে প্রথম ছয়মাসেই সেই চিত্র পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা তো সেদিকে যাইনি, বরং গতানুগতিক পলিটিক্যাল কালচার মেইনটেন করে আমরা সেটাকে আরও ধ্বংসের পথে…। 

সোহেল তাজ বলেন, এত হত্যা, গুম-খুনের পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। আমি হতবাক! দেশের ইতিহাসের এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঢাকার পিলখানা ট্র্যাজেডি বা বিডিআর বিদ্রোহ। এ বিষয়ে সোহেল তাজ জানিয়েছেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরামর্শ না শুনে তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন ‘আমেরিকায় বসে তুমি বেশি বুইঝো না। আমি দেখতেছি।’

এমনো হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যায় হাসিনাকে নিয়ে। তিনি যা মনে করতেন তাই করতেন। তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছেন। স্বৈরাচার এরশাদকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি যাননি। সম্ভবত ৮শ বছর আগে লক্ষণসেন যেমন প্রাসাদের পিছনের খিড়কি পালিয়ে গিয়েছিলেন হাসিনা তাকেই অনুসরণ করলেন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়