এম এইচ বাচ্চু : পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, ছাত্রসমাজের আন্দোলনের ফলে দেশের রাজনৈতিতে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। সবাই পজিটিভ চিন্তা করছে। সেই সঙ্গে দেশ পুনর্গঠনে যৌক্তিক সময় দিতে চার রাজনীতিবিদরা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ৭৮ শতাংশ ভোটার নির্বাচনী সুশাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, একটি নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঘোষিত অন্তর্বর্তী সরকারের মূল্য লক্ষ হবে দেশের সর্বস্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করা। এই পরিস্থিতিতে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্রহণ করতে হবে বহুমুখী পদক্ষেপ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো ভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, দেশ বিদেশে থেকে নানা রকম উস্কানীতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দিবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে তাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লক্ষ্য-কোটি জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফসল উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সকলের কাছে হয়ত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষে গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার ওপর দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, এই সরকার সফল হলে দেশের মানুষের জন্য ভালো হবে। আর যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের মানুষকে ভুগতে হবে। তাই সরকারকে সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা করা উচিত।
‘দেশে বেকারত্ব মহামারি নিরসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাত দফা প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নুরুল হক এ কথা বলেন। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে এ সভা হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এক বছরের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান তিনি। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত শিক্ষক সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো বেশি সময় নেবেন না। বেশি সময় নিলে ক্ষমতার স্বাদ বাড়ে। এক বছরের মধ্যে সব সংস্কার কাজ শেষ করুন। দাবি পূরণ করার জন্য উপদেষ্টা সরকার নয়। এই সরকার আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, নতুন সরকার যেন দ্রুত ক্ষমতা নিতে পারে- সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একমাসে শত শত প্রস্তাব আসছে, আসবে কিন্তু সরকারকে ঠিক করতে হবে, এই সময়ে দেশ ও দেশের জনগণের মৌলিক প্রয়োজন কী? সেটা নির্ধারণ না করলে সঠিকভাবে আপনারা আগাতে পারবেন না। কোনও বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ না।
দেশকে যারা আবার পুরোনো ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় ফেরত নিতে চায়, তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে দেওয়ার কথা বলেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। এক মাস একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেছেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেঙ্গলী মিডিয়াম হাইস্কুলে এক অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, যে মানুষ সব মানুষের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জীবন দিতে পর্যন্ত কুণ্ঠাবোধ করেননি, তাঁরা জাতির জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতরে অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন। এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায় তাঁদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া। আর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাসহ প্রত্যেকের বিচার করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :