এম এইচ বাচ্চু : শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। অনেক শিক্ষার্থী বলেছেন ‘আমরা দেশে স্বাধীন করেছি’। কেউ কেউ বলেছেন স্বাধীন দেশে কোন বৈষম্য থাকবে না। তরুণ পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বয়স্কদের মধ্যেও তাদের কথাবার্তার এসেছে অনেক পরিবর্তন। তারাও তরুণদের স্বপ্ন এগিয়ে নিতে সহায্যের কথা বলেছেন।
আন্দোলনে অংশ নেয়া থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, দেয়ালে দেয়ালে রঙিন গ্রাফিতিসহ নিজ উদ্যোগে অনেক দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এসব কাজে অংশ নেয়া কয়েকজন তরুণ-তরুণী গণমাধ্যমে বলেছেন নতুন বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভাবনা।
বিবিএ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী সামিহা ফেরদৌস বলেছেন, দেশের স্বৈরাচারী সরকার দমনের জন্য আমরা যেমন যে যার জায়গা থেকে নিজেদের সাধ্যমতো কাজ করে গিয়েছি, ঠিক তেমনি সুন্দর একটি দেশের দৃষ্টান্ত তৈরি করার জন্য ছোট ছোট জায়গায়ও কাজ করে যেতে হবে। এ দেশ পরিবর্তন করতে হলে মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন করতে হবে।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ তাজওয়ার বলেছেন, কোনো হিংস্রতা নেই, দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা নেই এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা রক্ত দিয়ে এ দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেছি। এখনো আমরা সবাই শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করছি, যেন জাতি বুঝতে পারে যে ছাত্ররা দেশকে পাল্টাতে পারবে।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিবিএয়ের শিক্ষার্থী তাসনীম হাসান বলেছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। একেকজন রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন, বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তাদের হাতেই যেন গোটা দেশটা জিম্মি। এ ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি চাই না।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী,এম এম তরিকুল ইসলাম সিয়াম, বলেছেন, সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকবে এমন একটি বাংলাদেশ চাই। আমরা তরুণরা জীবনের প্রথম ভোটটি দিয়ে আমাদের নেতা নির্বাচন করতে চাই।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আইন বিভাগের শিক্ষার্থী, মরিয়ম জান্নাত আঁখি, স্বৈরাচার থেকে দেশ স্বাধীন করেছি, এবার স্বাধীন হওয়ার সময়। করতে হবে রাষ্ট্র সংস্কার। এ কাজ অনেক লম্বা। দেশ সংস্কারের জন্য সব পরিকল্পনা এক্সিকিউট করার জন্য শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দিতে হবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া তানহা বলেছেনে, আমাদের নতুন বাংলাদেশে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে যা আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত আছে। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের সমান সুযোগ-সুবিধা লাভের নিশ্চয়তা প্রদান করলে আমি আশা কর। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে সম-অধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেঁথে বসা অনিয়ম ও দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করে দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান সৈকত কলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের পাশাপাশি চাকমা, মারমা ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। কিন্তু দেখা যায় যে, সদর এলাকায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলো সুবিধাবঞ্চিত। এদরে দিকে নজর দেওয়া দরকার।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়া চাকমা বলেছেন, যদি বলি কেমন বাংলাদেশ চাই, তবে প্রথমেই শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে দেশসেরা মেধাবীদের অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়া হোক। শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার পরিবর্তন আনা জরুরী। গাছের শিকড় যদি মজবুত না হয়, সে গাছ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। সবচেয়ে দক্ষ শিক্ষকদের নিয়ে আসতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে। দেশের বাইরে থেকে যেসব মেধাবীরা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ফিরে আসতে চান তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হোক।
আপনার মতামত লিখুন :