আমিনুল ইসলাম : [২] ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবির ছাত্র আন্দোলনে নজীরবিহীন দমনপীড়নে শিশু-কিশোর, নারীসহ এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এতো ব্যাপক ও এতো রক্তবহুল কোন আন্দোলন আগে কখনো হয়নি। এই কোটা সংস্কারের দাবির ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে গিয়ে সরকার পোঁড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে।
[৩] তিনি আরো বলেন, কোন সভ্য-স্বাধীন দেশের জনতার সাথে এই ধরণের নির্মমতা চালানো যায় না। তাই অবিলম্বে গণহত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে।
[৪] সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ পঙ্গুদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি। সোমবার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ছাত্র গণজাগরণ এবং তা দমনে সরকারের বর্বরতম নৃশংসতায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
[৫] দলের সহকারি মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রেক্ষিতে সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২০১৮ সালে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মাধ্যমে সমাধাকৃত একটি বিষয়কে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সামনে আনা হলো। শিক্ষার্থীরা যখন এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামাসহ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলো, তখন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেন। প্রকারান্তরে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে অভিহিত করা হয়। সরকার দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন। ক্যাম্পাসগুলোতে একাত্তরের হানাদারদের নমুনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে হামলা করা হয়, ছাত্রী নির্যাতনসহ নির্মম সহিংসতা চালানো হয়। তৎপরবর্তীতে সেই আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়, যা এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে। দেশের সকল স্তরের সাধারণ মানুষ স্বপ্রনোদিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এই জনবিস্ফোরণ দমনে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ও দলদাস পুলিশ নির্বিচারে হামলা, গুলি ও বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়েও ব্যর্থ হয়ে হেলিকপ্টার থেকে বিষাক্ত গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলি করে বর্বরোচিত হামলার নজির স্থাপন করে।
[৬] রেজাউল করীম বলেন, তিন তিন বার জাতীয় নির্বাচনে জালিয়াতিসহ নির্বাচন ব্যবস্থাকে হত্যা করা, সর্বক্ষেত্রে মাত্রাহীন দুর্নীতি, রিজার্ভের পতনসহ আর্থিকখাতে চরম ব্যর্থতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিসহ এই সরকারের ব্যর্থতার বোঝা এতো ভারি যে, আগের কোন সরকারের ব্যর্থতার পাল্লা এতো ভারি ছিলো না। এতো ব্যর্থতা ও এতো রক্তবহুল আন্দোলনের পরেও এই সরকারের বোধোদয় হয়নি। তারা জনতার ক্ষোভের কারণ বুঝতে চেষ্টা করছে না। আবার নিজেদের সংশোধন করারও চেষ্টা করছে না।
[৭]ইসলামী আন্দোলনের আমীর আরও বলেন, আন্দোলনের বস্তুগত ক্ষতি এই সরকারের কাছে তাজাপ্রাণ শিক্ষার্থীর জীবনের চেয়ে মূল্যবান হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অকালে ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে ইট-পাথরের উন্নয়ন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ইট-সুরকির কাছে গিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেন। তার এসব নাটকীয় কান্না জাতির কাছে উপহাসের খোরাক যুগিয়েছে। অথচ তারই অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য এই আন্দোলনের অনলে ঘি ঢেলেছে।
[৮] তিনি বলেন, গত ১ জুলাই থেকে শুরু করে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন আন্দোলন তা একটি ঐতিহাসিক ছাত্র গণআন্দোলন- যা একটি অত্যাচারী-অবৈধ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতাসহ সর্বসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংগঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তারা জাতির ইতিহাসে বীর ও সংগ্রামী যোদ্ধা হিসেবে স্বরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে ন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার সংক্রান্ত যে দাবি সরকার আদালতের মাধ্যমে মেনে নিয়েছেন, এই পদক্ষেপ ছাত্র আন্দোলনের শুরুতেই গ্রহণ করলে এতো প্রাণক্ষয়, হানাহানি হত না। কিন্তু সরকার প্রধান ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক ছাত্রদের অসম্মানজনক অবজ্ঞা ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে আন্দোলনকে বিপদজনক মাত্রায় নিয়ে গেছেন।
[৯]ইসলামী আন্দোলনের নেতা বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে এই সরকারের পতনের একদফা দাবি নিয়ে ঐকমত্য রয়েছে। আমরাও সরকার পতনের একদফা দাবীতে একমত ছিলাম এবং আছি। এই জনবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনসহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণকে একতা গড়ে তোলার আহ্বান করছি। যখনই সময় আসবে তখনই সরকার পতনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে ইসলামীআন্দোলন।
আপনার মতামত লিখুন :