শিরোনাম
◈ বিএনপি কর্মী হত্যা: শেখ হাসিনার সঙ্গে হত্যা মামলার আসামি অভিনেতা ইরেশ যাকের ◈ তেজগাঁওয়ে বোবা রফিককে কুপিয়ে হত্যার মূল হত্যাকারী সাদ্দামকে গ্রেফতার  ◈ ঝটিকা মিছিল বিরোধী অভিযানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের আরও সাত সদস্য গ্রেফতার ◈ দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু ◈ বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের ধৈর্য ধরতে বললেন টাইগার‌দের প্রধান কোচ ◈ কক্সবাজারের সাবেক এমপি জাফর আলম ঢাকায় গ্রেপ্তার ◈ হার‌লে হোয়াইটওয়াশ বাংলা‌দেশ, জিত‌লে জিম্বাবু‌য়ের বিরু‌দ্ধে সি‌রিজ ড্র,  চট্টগ্রা‌মে সোমবার দ্বিতীয় টেস্ট ◈ ভারত-পাকিস্তান চাইলে মধ্যস্থতা করবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ইইউ রাষ্ট্রদূতের তিন ‘কমন প্রশ্ন’, জবাবে যা বলেছে জামায়াত ◈  পোশাক খাত আবারও দারুণ গতি পেয়েছে: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৫৮ বিকাল
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাবের ভেতর পানি আসে কোথা থেকে? গবেষণায় যা জানা গেল 

ডাব বা নারিকেলের পানি ও শাঁস খেতে আমরা বেশ পছন্দ করি। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ বাড়িতেই নারিকেল গাছ থাকে। এই গাছের সব অংশ ব্যবহারযোগ্য বলে এর চাহিদাও বেশি। তবে গাছ থাকুক আর না থাকুক, সুযোগ পেলেই ডাবের পানি খাওয়া হয় অনেকেরই। মাথায় কখনো কি প্রশ্ন জেগেছে, নারিকেল বা ডাবের ভেতর কীভাবে পানি আসে বা কীভাবে সংরক্ষিত থাকে।

ডাব বা নারিকেলের ভেতর কীভাবে পানি উৎপন্ন হয়, সেটি এক গবেষণায় দেখিয়েছেন কেনিয়ার জোমো কেনিয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও প্রযুক্তি গবেষক অধ্যাপক গ্যাস্টন আডোইও।

গবেষণায় বলা হয়, সব ধরনের নারিকেল গাছেই পানি থাকে, তবে লম্বা জাতের গাছগুলোর নারিকেলে বেশি পানি থাকে আর ছোট বা বামন জাতের গাছগুলোতে তুলনামূলক কম হয়। সাধারণত অপরিপক্ব ও কচি সবুজ নারিকেল, যেগুলোকে ডাব বলা হয় সেগুলো থেকে বেশি পানি পাওয়া যায়। নারিকেল পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর শাঁস বৃদ্ধি পায় ও পানি শাঁসের মধ্যে শোষিত হয়। পুরো পাকা বাদামি নারিকেলে পানির পরিমাণ তাই কম থাকে, আবার অনেক সময় পানি থাকেও না।

নারিকেল পানি কীভাবে তৈরি হয় তা ভালোভাবে বোঝার জন্য, এর শারীরিক গঠন বুঝে নেওয়া জরুরি। নারিকেল তিন স্তরের একটি ফল। এর তিনটি স্তর থাকে—এক্সোকার্প (অপরিপক্ব নারিকেলে দেখা সবুজ মসৃণ বাইরের স্তর), মেসোকার্প (এক্সোকার্পের নিচে অবস্থিত ফাইব্রাস খোসা) ও এন্ডোকার্প (ভিতরের কঠিন, কাঠের শেলের মতো স্তর যা ভেতরের শাঁসকে রক্ষা করে)।

এন্ডোকার্পের মধ্যে দুটি উপাদান থাকে: শাঁস (যা অপরিপক্ব নারিকেলে নরম, জেলির মতো থাকে আর পাকা হলে কঠিন হয়ে যায়) ও নারিকেলের পানি। এই পানি বীজকে পুষ্টি সরবরাহ করে ও নারিকেল ফলের বিকাশের সময় স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়। গাছের শিকড় থেকে শোষিত হয়ে গাছের ভাস্কুলার সিস্টেমের (পানি ও পুষ্টি পরিবহন ব্যবস্থা) মাধ্যমে তৈরি হয়ে পরিশোধিত রস ফলের মধ্যে পৌঁছায়।

শেকড়ের মাধ্যমে মাটির পানি শোষণ করে নারিকেল গাছ। সেই শোষিত পানি পরে গাছের কাণ্ড ও শাখা দিয়ে উপরে উঠতে থাকে ও শেষে ফলের মধ্যে চলে আসে। ফলটি এই পানি সংরক্ষণ করে, যা নারিকেলের গর্তে জমে থাকে। জমে থাকা এই পানি তার পুষ্টি উপাদানসহ শাঁসের বিকাশে সাহায্য করে।

অতএব, নারিকেল পানি বৃষ্টি বা সমুদ্রের পানি নয়, এটি গাছ দ্বারা স্বাভাবিকভাবে পরিশোধিত ও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ পরিষ্কার তরল।

এই পানির প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি আর বাকি অংশে বিভিন্ন উপাদান থাকে, যা আমাদের জন্যও উপকারী। যেমন—খনিজ (সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম) মানব স্নায়ু ও পেশিকে পুষ্টি দেয়; প্রোটিন (অ্যামিনো অ্যাসিড ও এনজাইম) গাছ ও মানুষের বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে; চিনি (ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ) পানির হালকা মিষ্টিতা তৈরি করে ও এতে অল্প পরিমাণে ভিটামিন (ভিটামিন সি ও বি ভিটামিন) থাকে।

নারিকেলে পানির পরিমাণ

অপরিপক্ব ও সবুজ নারিকেল (৬ থেকে ৮ মাস বয়সী) যা ডাব হিসেবে পরিচিত, এগুলোতে সাধারণত ৩০০ মিলিলিটার থেকে ১ লিটার পর্যন্ত পানি থাকে। আর পরিপক্ব নারিকেল (১২ মাস বা তার বেশি বয়সী) পানির পরিমাণ কম থাকে কারণ তরলটি আংশিকভাবে শাঁসে শোষিত হয়ে যায়।

অধিক বৃষ্টিপাতের এলাকায় হওয়া নারিকেলে পানি বেশি থাকে আর খরা এলাকায় ফলের মধ্যে পানি কম দেখা যায়। আবার, খনিজে পরিপূর্ণ সুস্থ মাটি উচ্চ মানের পুষ্টি সমৃদ্ধ নারিকেল পানি তৈরি করে। খনিজের অভাব বা লবণাক্ত মাটি তা নিম্নমানের নারিকেল পানি উৎপন্ন করে। আর অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত গাছ ছোট আকারের নারিকেল উৎপন্ন করে, যার মধ্যে পানি কম থাকে।

নারিকেল গাছের প্রয়োজনীয় পরিবেশ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর অঞ্চল, মধ্য আমেরিকা ও আফ্রিকার উপকূলীয় অর্থনীতিতে নারিকেল গাছ ও নারিকেল পানির বেশ প্রভাব রয়েছে। এসব এলাকায় টেকসই চাষাবাদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি ব্যবস্থাপনা (মাটি পরীক্ষণ ও জৈব সার ব্যবহার) করতে হয়, যাতে সঠিক পুষ্টির পরিমাণ বজায় থাকে, যা উচ্চমানের নারিকেল পানি উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে নারিকেল গাছ বৃদ্ধি পায়, সেখানকার তাজা পানির জলাধারকে লবণাক্ত পানির আক্রমণ থেকে রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড্রিপ সেচ ও মালচিং মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, যা নারিকেল পানি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়।

পোকামাকড় ও রোগের ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিগুলো (যেমন, নারিকেল গাছের সাথে কলা বা শিমের চাষ) ও একীভূত পোকা ব্যবস্থাপনা সুস্থ গাছ উৎপন্ন করতে সাহায্য করতে পারে, যা বড় আকারের নারিকেল ও পর্যাপ্ত পানি দেয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়