শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের আইনে কী আছে পুরুষদের ধর্ষণের বিষয়ে? ◈ কূটনীতিকের কানাডায় পালিয়ে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য, যা বললো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ◈ আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান, কারণ আমাদের সমুদ্র আছে : প্রধান উপদেষ্টা ◈ ছয় মাস পর জাতীয় দলে ফিরলেন এমবাপ্পে ◈ ইউএনও’র সহযোগিতায় হুইল চেয়ার পেয়ে আবেগে বললো এবার আমি স্কুলে যেতে পারবো  ◈ যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৩৮৩ জন গ্রেফতার ◈ খুরুশকুলের জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ বিশ্বে প্রথমবার স্বর্ণের দাম তিন হাজার ডলার প্রতি আউন্স ◈ নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক: ড. আবদুল মঈন খান ◈ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ নাও হতে পারে ব্রাজিলের

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০২৫, ০৪:১৬ দুপুর
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাইটানিয়ামের হৃৎপিণ্ড নিয়ে বিশ্বে এই প্রথম ১০০ দিন বাঁচলেন এক ব্যক্তি

বিশ্বের প্রথম মানুষ হিসেবে টাইটানিয়ামের তৈরি কৃত্রিম হৃদ্‌যন্ত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেন চল্লিশোর্ধ্ব অস্ট্রেলিয়ান এক ব্যক্তি। হার্ট ফেইলিওরের কারণে তার হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা জরুরি ছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে মানব হৃদ্‌যন্ত্রের কোনো দাতা না পাওয়ায় অস্থায়ীভাবে ওই কৃত্রিম হৃদ্‌যন্ত্রটি তার বুকে প্রতিস্থাপন করা হয়।

তবে যারা এর আগে এ ধরনের কৃত্রিম হৃদ্‌যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ওই ব্যক্তি তিন মাসের বেশি সময় এই যন্ত্র নিয়ে বেঁচে ছিলেন। পরে তার দেহে মানব হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সেন্ট ভিনসেন্টস হাসপাতালের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন।

'বাইভাকর' নামে পরিচিত এই যন্ত্রটি বিশ্বব্যাপী ছয়জনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তবে এক মাসের বেশি সময় এটি নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তি তিনিই প্রথম।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিক্টোরিয়ান হার্ট ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন জুলিয়ান স্মিথ বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জন সারাহ আইটকেন বলেন, "এটি একটি অবিশ্বাস উদ্ভাবন।" তবে এই যন্ত্র ব্যবহারকারীদের কর্মক্ষমতার মাত্রা এবং এর চূড়ান্ত ব্যয়ের বিষয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, "এই ধরনের গবেষণা করা সত্যিই কঠিন, কারণ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এতে জড়িত অস্ত্রোপচারও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।"

এই সাম্প্রতিক সাফল্য গবেষকদের বাস্তব পরিবেশে এই যন্ত্রের সঙ্গে মানুষের খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া বোঝার সুযোগ করে দেবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এবং হার্ট ফেইলিওর বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট জোসেফ রজার্স। 

সব ক্ষেত্রেই, রোগীর জন্য একজন দাতা না পাওয়া জন্য বাইভাকর অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কিছু কার্ডিওলজিস্ট মনে করেন, এটি ভবিষ্যতে এমন ব্যক্তিদের জন্য স্থায়ী বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, যারা বয়স বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের জন্য উপযুক্ত নন। যদিও এই ধারণাটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হার্ট ফেইলিওরের মতো সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে মাত্র ৪,৫০০টি হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল, যার অন্যতম কারণ দাতার স্বল্পতা।

সাসপেন্ডেড রোটর: বাইভাকর উদ্ভাবন করেছেন বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশলী ড্যানিয়েল টিমস। তিনি এই ডিভাইসের নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোম্পানিটির অফিস রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে এবং অস্ট্রেলিয়ার সাউথপোর্টে।

এই ডিভাইসটি একটি সম্পূর্ণ হৃদ্‌যন্ত্রের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাম্প করে রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে। এতে ম্যাগনেটিকালি সাসপেন্ডেড রোটর ব্যবহার করা হয়েছে। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে নিয়মিত পালসে রক্ত সরবরাহ করে।

আর এ ডিভাইসটিতে বাইরে থেকে একটি কর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এটি একটি পোর্টেবল কন্ট্রোলারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এ কন্ট্রোলারটি দিনের বেলায় ব্যাটারিতে চলে এবং রাতে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে চলে।

অনেক কৃত্রিম যান্ত্রিক হৃদ্‌যন্ত্রের ডিভাইস হৃৎপিণ্ডের বাম পাশে বসানো হয় এবং এর সঙ্গে একটি থলে যুক্ত থাকে যার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ করে সারাদেহে রক্ত প্রবাহের কাজ করা হয়। এই থলেটি প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ কোটি বার সংকুচিত হয় রক্ত পাম্প করার জন্য। তবে এই ডিভাইসগুলোর অনেক অংশ থাকে এবং সেগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।

কিন্তু বাইভাকরে মাত্র একটিই অংশ রয়েছে। যার কারণে যান্ত্রিক ত্রুটিও কম দেখা দেয় বলে মনে করেন রজার্স।

যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা : বাইভাকর প্রতিস্থাপন করা অস্ট্রেলিয়ান ব্যক্তির দেহে গত নভেম্বরে ছয় ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে টাইটানিয়ামের তৈরি কৃত্রিম হৃদ্‌যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি হাসপাতালের কাছেই একটি একটি বাসায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। মার্চে তিনি একজন দাতার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে রজার্সের নেতৃত্বে পরিচালিত পরীক্ষায়, গত বছর ৪০-৫০ বছর বয়সী পাঁচজন ব্যক্তি বাইভাকরের একটি পুরোনো সংস্করণ ব্যবহার করেন। এই ডিভাইস তাদের হাসপাতালের ভেতরে এক মাস পর্যন্ত সচল রাখে, তবে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য এটি তৈরি করা হয়নি। পরবর্তীতে এই পাঁচজনই দাতা হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। রজার্স আগামী এপ্রিল মাসে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করছেন।

এরপর থেকে বাইভাকর দল ডিভাইসটির কার্যকারিতা উন্নত করেছে এবং ব্যর্থতার ঝুঁকি কমিয়েছে বলে জানিয়েছেন টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ও বাইভাকরের প্রধান চিকিৎসাবিষয়ক কর্মকর্তা উইলিয়াম কোহেন।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) আরও ১৫ জন রোগীর ওপর পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। তবে সারাহ আইটকেন বলেন, এটি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠতে এখনো বহু ধাপ বাকি।

এছাড়া, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এফডিএ প্রথমবারের মতো শূকর-অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। প্রযুক্তিটি দাতা অঙ্গের বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় একটি সম্ভাব্য প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়