দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় দেশ শাসন করা আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে গেল বছরের ৫ আগস্ট। জনরোষের মুখে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ একরকম পালিয়েই বেঁচেছেন আওয়ামী নেতাকর্মীরা। হাতেগোনা কয়েকজন তৎকালীন মন্ত্রী-এমপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দলটির সিংহভাগ নেতাকর্মী। আর বাকিরা ইউরোপ-আমেরিকায়।
ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে শুধু সোশ্যাল মিডিয়াকেই রাজপথ জ্ঞান করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাত-দিন ফেইসবুক-ইউটিউব আর এক্সে ক্লান্তিহীন গুজব ছড়িয়ে রাজপথে আন্দোলনের কাজটা সেরে নিচ্ছেন তারা। দলটির চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়ালরা পর্যন্ত এ কাজে সমানভাবে সরব।
২৩ মার্চ রোববার রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্ট করে একটি গুজব ছড়াতে তৎপর হয়ে পড়েন আওয়ামী নেতাকর্মী। এসব পোস্টে আকারে-ইঙ্গিতে বোঝানো হয়, রাত পোহালেই চট করে দেশে ঢুকে শাসনভার গ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা।
শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের সংকলক অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী চিকিৎসক আবুল হাসনাত মিল্টন রোববার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ‘খেলা শেষ। ধন্যবাদ বাংলাদেশ! চিয়ার্স বন্ধুরা!’
আওয়ামীপন্থী অনলাইন এক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘যাক, হয়তো সকালের মধ্যে একটা সুখবর পাবো! ইনশাআল্লাহ...।’
এসব গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ‘চার্বাক উত্তরাধুনিক’ নামের একটি আইডি। এখান থেকে গতরাতে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, ‘ব্রেকিং নিউজ: সেনাপ্রধান এবং ১৮ সদস্যের একটি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কি যেকোনো সময় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হতে চলেছে?’
এ ছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামীপন্থী শত শত পেইজ থেকে একযোগে নিয়মিত নানামুখী সরকারবিরোধী ও গণঅভ্যুত্থানবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হলেও কোনো কিছুতেই কোনো কাজ না হওয়ায় আবার ফেসবুকেই নিজেদের হতাশা প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ছড়িয়ে পড়া এসব গুজবের ব্যাপারে ‘সুষুপ্ত’ নামের একজন লিখেছেন : কাল সারারাত ধরে যারা ফেবুতে গুজব ছড়িয়েছে, কিছু একটা ঘটতে চলেছে, পুরো সেনাবাহিনী ঢাকা ঘিরে ফেলেছে, সমন্বয়করা সবাই ঢাকা ছাড়ছে... তারা এখন গভীর ঘুমে। এই ফাঁকে যারা রাত জেগে গুজবে তাল দেননি তাদেরকে বলি, বোঝান, এই গুজববাজদের বোঝান, এইসব রটিয়ে কি এদের ফেলে দেওয়া যাবে? যাবে না। উল্টো নিজের গ্রহণযোগ্যতা তারা হারাচ্ছে।...’
সোমবার ভোর হতেই বিশিষ্ট সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের হাসির ইমোজি দিয়ে স্ট্যাটাস দেন, ‘শুভ সকাল, জরুরি অবস্থা কত দূর।’
নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পর্যায়ের একজন যুবলীগ নেতা জানান, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ইনস্ট্রাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের দল ও অঙ্গসংগঠনের অনেকগুলো গ্রুপ রয়েছে, এসব গ্রুপে তাদের সিনিয়র ও কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন পোস্ট শেয়ার করেন। কর্মীদের ওপরও এসব পোস্ট শেয়ার করার নির্দেশনা রয়েছে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের অর্থে পুষ্টরা এখনও গুজব-অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। তারা এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছে না।
উপদেষ্টা বলেন, বিগত সময়ে প্রচুর অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য প্রচার হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার সময় যখন অর্থনীতি টালমাটাল হয়েছে, তখন রাসেল ভাইপারের গল্প, ৫ আগস্টের পরে ডাকাত-ডাকাত বলে অপপ্রচার করে মানুষকে ভিন্নধারায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে। যাচাই না করে এসব প্রচার করেছে গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব সঠিক তথ্য তুলে ধরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে সমাজে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। কিছু সংবাদ শুধু ভিউ বাড়ানোর জন্যই প্রকাশিত হয়। এতে প্রকৃত সত্য আড়ালে থেকে যায়।