শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০২:৪২ রাত
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পর্যবেক্ষণ

অন্তর্বর্তী সরকারের আসন্ন দিনগুলোয় চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে

আসন্ন দিনগুলোয় দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। সংস্থাটির গতকাল প্রকাশিত ‘ওয়াচ লিস্ট ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ: দ্য ডিলেমা অব আ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন’ শিরোনামে দেয়া পর্যবেক্ষণে এ কথা বলা হয়। এতে উঠে আসে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যে জনসমর্থন পেয়েছিল, সেটি কমতে শুরু করেছে। চাপে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনগণের সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা নিয়েও সংগ্রাম করতে হচ্ছে সরকারকে। সামনের দিনগুলোয় সরকারের চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে।

আইসিজি মনে করছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় যত এগোচ্ছে, প্রতিশ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের চাপ তত বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও এর সদস্য দেশগুলোর বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত।

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা রক্ষার পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখছে আইসিজি। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনা সরকারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে অবিচল সমর্থন দিয়ে গেছে ভারত। এ কারণে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে, যা স্থিতিশীলতা রক্ষার পথে প্রতিবন্ধক। এছাড়া সরকারের বোঝাকে বাড়িয়ে তুলছে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে অস্থিরতার বিষয়টিও প্রভাব ফেলছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে আইসিজির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, উচ্চপর্যায়ের সফর আয়োজন করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থনেও ইইউর গুরুত্ব দেয়া উচিত, যাতে জনমানসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ভাবমূর্তি রক্ষা পায়। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বিরাজমান চাপ প্রশমনেও ইইউর কাজ করা উচিত।

ক্রাইসিস গ্রুপের এ পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সংস্থাটির মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট থমাস কিয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমার সময় এখন পুরোপুরি শেষ। রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দরকষাকষি করায় এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় এ বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে। জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণেও অন্তর্বর্তী সরকার চাপে রয়েছে, যা মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যবস্থাপনার উত্তরাধিকার। আর অর্থনীতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চলমান প্রচেষ্টার সুফল বাস্তবে পেতে বাংলাদেশের জনগণের আরো সময় লাগবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এখনো টানাপড়েন রয়েছে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরও অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’

কিয়ান আরো বলেন, ‘এর পরও আগামী বছর বাংলাদেশের সামনে দেশটির জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং এটিকে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক করার একটি বিরল সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনগুলো কয়েকশ প্রস্তাব সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিতে শুরু করেছে। এদিকে নির্বাচনী রাজনীতিতে বাংলাদেশের জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।’

আইসিজির পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ইইউর উচিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সমর্থনের জন্য প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারবে ইইউ।

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানোর পদক্ষেপ নিয়ে সংস্থাটির বক্তব্য হলো এর জন্য বাংলাদেশকে অতিরিক্ত রাজস্ব সহযোগিতা, বিদেশী বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি ও পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতেও অর্থনীতির বিস্তার ঘটানো, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করা এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশের বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনা জারি রাখাসহ বেশকিছু বিষয়ে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইউরোপের প্রভাবকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

এর পাশাপাশি ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও ইইউকে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশের সংস্কারের প্রতি সমর্থনে ভারতকে উৎসাহ প্রদান করা। দুটি দেশের মধ্যে বিরাজমান অবিশ্বাস দূর করে সম্পর্কের উত্তরণ ঘটানোর জন্য ইইউর প্রভাবকে ব্যবহার করা উচিত। উৎস: বণিক বার্তা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়