শিরোনাম
◈ বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে ডাকাতি, ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলে উদ্ধার ◈ লিওর মা‌ঠে জয় পে‌লো না  ম্যানইউ, ড্র নি‌য়ে মাঠ ছাড়‌লো ◈ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া নুরুল আবছার আটক ◈ নিউইয়র্কে নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, শিশুসহ নিহত ৬ ◈ গোল ছিনতাইয়ের অ‌ভি‌যো‌গে রাফিনহার দু:খ প্রকাশ ◈ চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধকে আমেরিকানরা কীভাবে দেখে ◈ গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আ.লীগের নেতাকর্মীরা, তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার ◈ স্যামসাংয়ের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ কেন ভিয়েতনাম চলে গিয়েছিল? (ভিডিও) ◈ বসুন্ধরায় স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ, অতঃপর  ৮৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার! ◈ ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে: আমিরাতের রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:২০ দুপুর
আপডেট : ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২২ বছর আগে মডেল তিন্নিকে কি কেউ হত্যা করেনি? নো ওয়ান কিলড তিন্নি!

২২ বছর আগে মডেল তিন্নিকে কি কেউ হত্যা করেনি? ফাইল ছবি

মাসুদ কামাল, আজকের পত্রিকা থেকে নেয়া : এ সপ্তাহে সংবাদপত্রের প্রথম পাতা বেশ রমরমা ছিল। প্রচুর নতুন নতুন খবর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জ্বালাময়ী ভাষণ কিংবা হুমকি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র, শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, শুল্ক বাড়ার পরও মানুষের কষ্ট তেমন হবে না বলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জাদুকরি উক্তি, চারটি সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পেশ—এই সবই গুরুত্বপূর্ণ খবর। দেশ ও জাতির জন্য এতসব গুরুত্বপূর্ণ খবরের বাইরে গিয়ে ভিন্ন একটা খবর নিয়ে আমি আজ আলোচনা করতে চাই। দুদিন আগে খবরটা জানার পর থেকে আমি আসলে ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। বিষয়টি হচ্ছে—তিন্নি হত্যা মামলার রায়।

আজকের প্রজন্মের কাছে ‘তিন্নি’ নামটি সম্ভবত তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। কারণ, তিনি মারা গেছেন আজ থেকে ২২ বছর আগে। সেই সময়ে আমাদের বয়সও বর্তমানের চেয়ে ২২ বছর কম ছিল। ফলে সেই বয়সে সুন্দরী নারীর মুখ আমাদের হৃদয়কে কিছুটা হলেও বিচলিত করত। কিন্তু এত বছর পরে এসে দুদিন আগে তিন্নিসংক্রান্ত যে খবরটি পড়লাম, তাতে একজন বয়স্ক নাগরিক হিসেবে আমি যেন আরও অনেক বেশি বিচলিত হলাম।

তিন্নি মডেল ছিলেন। সেই সময়ের খুবই আলোচিত মডেল। এই জগতে পা রাখার পর খুব অল্প সময়েই অনেক বেশি আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। বলা হয়ে থাকে, তাঁর এই সাফল্যের পেছনে তাঁর স্বামীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিন বছরের সংসার তাঁদের, একটি কন্যাসন্তানও ছিল। সাফল্যের ঢেউয়ে ভাসতে থাকার সময়ে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সেই সময়ের আলোচিত ব্যক্তি গোলাম ফারুক অভির। অভি ছাত্রনেতা ছিলেন, রাজনীতিবিদ ছিলেন, সাবেক এমপি ছিলেন। ছাত্রনেতা থাকাকালে তাঁর খুব সুনাম ছিল না। এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা অভি গোপনে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে প্রচুর ঘৃণা অর্জন করেছিলেন। তারপর এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে একবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০২ সালে এই ঘটনা যখন ঘটে, অভি তখন আর সংসদ সদস্য নন। তখন তিনি ব্যবসায়ী, শিল্প-সংস্কৃতির জগতে তাঁর অবাধ যাতায়াত। এ রকম এক সময়েই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় মডেল তিন্নির। বলা হয়ে থাকে, এই সময়ে তিন্নি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভির সঙ্গে। এবং অভির প্ররোচনায় তিন্নি তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কও ছিন্ন করেন। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে তিনি গিয়ে ওঠেন অভির ফ্ল্যাটে। তিন্নি হয়তো ভেবেছিলেন, অভি তাঁকে বিয়ে করবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। নভেম্বরের ৬ তারিখে স্বামীকে ডিভোর্স দেন তিন্নি, এর ঠিক চার দিন পর তাঁর লাশ মেলে বুড়িগঙ্গায় চীন মৈত্রী সেতুর নিচে। ছয় বছর তদন্ত করে পুলিশ অভিকে আসামি করে চার্জশিট দেয়। এরপর নানা নাটকীয়তা, নানা আইনি মারপ্যাঁচ, দীর্ঘ বিলম্ব। অবশেষে দুদিন আগে বিচারিক আদালত থেকে পাওয়া গেল রায়। রায়ে বলা হলো—গোলাম ফারুক অভি নির্দোষ। খালাস দেওয়া হলো তাঁকে।

তাহলে তিন্নিকে মারল কে? তাঁকে কি কেউ হত্যা করেনি? অথবা তিন্নি কি আসলেই মারা গেছেন? যে মেয়েটির লাশ পাওয়া গেল সেতুর নিচে একটা পিলারের ওপর, সেটি কি আসলেই তিন্নির ছিল? তাঁর পরিবারের লোকেরা তো লাশ শনাক্ত করেছেন। তাহলে অভির মতো গুরুত্বপূর্ণ লোককে ফাঁসাতে সবাই মিলে ওই নাটকটা করেছে? তিন্নি যদি না মারা গিয়ে থাকে, তাহলে সে এখন কোথায়? সে কি তাহলে অন্য নামে মডেলিং করে? আমি জানি, আমার এতসব প্রশ্নকে আপনারা হাস্যকর বিবেচনা করছেন। কিন্তু আমি যদি বলি, আমার এই প্রশ্নগুলো যদি হাস্যকর হয়, তাহলে অভির খালাসপ্রাপ্তিকে আপনারা কী বলবেন?

ইদানীং আমাদের দেশের বিচারালয়গুলোতে ‘খালাস’ কিংবা ‘সকল আসামি খালাস’ এই শব্দগুলো বেশ উচ্চারিত হচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনা সব মামলা—এ রকম আরও অনেক মামলায় সবাই যেন আরামদায়ক ভঙ্গিতে খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কিছু কিছু যে আমার কাছে খুবই যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি, তা-ও নয়। আবার কিছু কিছু রায় নিয়ে ভিন্ন ধরনের পাবলিক পারসেপশনও দেখা গেছে। মানুষ কী মনে করে, তা দিয়ে অবশ্যই বিচারের রায়কে কিংবা বিচারব্যবস্থাকে বিচার করা যাবে না। সে বিবেচনায় পাবলিক পারসেপশন মোটামুটি অর্থহীন। কিন্তু পুঞ্জীভূত ‘পাবলিক পারসেপশন’ অনেক সময় পুরো ব্যবস্থাকেই উল্টে-পাল্টে দিতে পারে।

আমি বলছি না, অন্যসব রাজনৈতিক মামলার সঙ্গে অভির এই খালাসপ্রাপ্তির দারুণ কিছু মিল রয়েছে। আমি কেবল সময় এবং হুজুগের কথাটা উচ্চারণ করলাম। এসবের বিপরীতে আমার মূল প্রশ্নটা আসলে সুবিচার প্রাপ্তি নিয়ে। একটা বিচার অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। সাক্ষ্য-প্রমাণ, আলামত, আইনজীবীর যুক্তিতর্ক—এ রকম অনেক কিছুই লাগে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি দরিদ্র হয়, তাহলে সে মামলা চালাতে গিয়ে হিমশিম খায়। অপরাধী যদি ক্ষমতাধর বা অর্থবান হয়, তাহলে সে জাঁদরেল আইনজীবী ভাড়া করে যে বাদীপক্ষকে নাকানি-চুবানি খাওয়াতে পারে, এ সবই আমরা জানি। কিন্তু এতকিছুর পরও প্রশ্ন থাকে, তাহলে কি রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব থাকে না তার নাগরিককে সুবিচার প্রদানে? ঘাটতিটা কোথায়? বিচার বিভাগের দুর্বলতায়, নাকি রাষ্ট্রের সদিচ্ছায়? এ প্রশ্নগুলো সম্ভবত আগামী দিনেও উঠতে থাকবে।

শেষ করি আবার সেই তিন্নির প্রসঙ্গটি দিয়েই। এত চিন্তার মধ্যেও আমি ভাবছিলাম তিন্নির কন্যাটিকে নিয়ে। যত দূর জানি তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তিন্নির মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই কন্যাকে নিয়ে বিদেশে চলে যান তাঁর স্বামী। সেই কন্যা এখন নিশ্চয়ই ২৪ বছর বয়স্ক পরিণত মানুষ। কী চলছে এখন তাঁর মনে? তাঁর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কি আমাদের এই রাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পারে? তাঁর অনুভূতি কি রাষ্ট্রকে বিচলিত করে?

মাসুদ কামাল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়