শিরোনাম

প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:৫২ বিকাল
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসিনার ফেরিওয়ালা যখন প্রিয়াঙ্কা

হাসিনার ফেরিওয়ালা যখন প্রিয়াঙ্কা

আর রিয়াজ : ভারতের কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সংসদে সমর্থন জানান দিতে বিশেষ ব্যাগ বহন করলেন যেদিন গাজায় ইসরায়েলিদের হত্যাকাণ্ডে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। হঠাৎ করেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে একদিন পরেই প্রিয়াঙ্কা বাংলাদেশি পতিত স্বৈরাচারী ও পলাতক হাসিনার পক্ষে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের অভিযোগ এনে একই কায়দায় ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ভারতের সংসদে ঢুকলেন। যখন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ভারতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন, সেময় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বেছে নিলেন হাসিনার পক্ষে ফেরিওয়ালা হওয়ার জন্যে। পারিবারিকভাবে মুজিব পরিবারের সঙ্গে নেহেরু পরিবারের সম্পর্কের কথা বিস্তর জানা আছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরিকদের। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কের টানে প্রিয়াঙ্কা এ কাজ করেননি। 

প্রথমত পতিত স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন. তাকে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক সমর্থন তার এ অপপ্রচারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের কয়েক কোটি মানুষকে বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রিয়াঙ্কার ভাই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এসে গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি ঘুরে ফিরে দেখে গেছেন। ড. ইউনূস সম্পর্কে ভারতবাসী বা গান্ধী পরিবারের অজানা থাকার কথা নয়। বাংলাদেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সংস্কার কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনূস। পনের বছরের স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলে গুম, খুন, ভোটের অধিকার হরণ, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনা জেনে যখন বিশ্ববাসী ঘৃণা ও বিস্ময় বোধ করছেন তখন প্রতিবেশি দেশ ভারত উল্টোরথে চলছে। ভারতের শাসক দল বিজেপি কিংবা বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে প্রিয়াঙ্কা সেই উল্টোরথেই চেপে বসেছেন। 

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন বলছে কেরালায় বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভেদকার প্রিয়াঙ্কার প্যালেস্টাইনি ব্যাগের সমালোচনা করে বলেছেন, ইসরায়েলে হামাসের নিন্দা জানাননি কংগ্রেস নেত্রী। প্রিয়াঙ্কা কার্যত দ্বৈত আচরণ ও তুষ্টির রাজনীতি হিসেবে কংগ্রেসের রাজনীতিকে ফেরি করেছেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর ভারত তেল আবিবে জনসম্পদ পাঠিয়েছে। তখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তার প্রতিবাদ জানাননি। ইসরায়েলের অস্ত্র আমদানির সময় ভারতের কোনো সমালোচনা করেননি প্রিয়াঙ্কা। 

তাই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আজব এক ব্যাগ কাঁধে নেওয়ার আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি ফেলার সময় পাননি। হয়ত হাসিনার পক্ষে ফেরিওয়ালা হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে একদিন আগে প্যালেস্টাইনি ব্যাগ নিয়ে আগাম দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন প্রিয়াঙ্কা। এটাই প্রিয়াঙ্কার দ্বৈত আচরণ ও তুষ্টির রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। 

এটা না করে প্রিয়াঙ্কা তার দেশে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া পাচারকারী পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। কারণ ভারতে মালিয়া-মোদি-চোকসিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ২২,২৮০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি)। শুধু পি কে হালদার কেনো আরো অনেকেই টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছেন ভারতে। পি কে হালদার জামিনও পেয়ে গেলেন ভারতের আদালত থেকে। স্বয়ং হাসিনা ও আদানির বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ চুক্তি প্রিয়াঙ্কার অজানা থাকার কথা নয়। ভারতের অর্থমন্ত্রী সীতারামন যেমনটি বলেছেন, ‘আর্থিক প্রতারণা প্রতিরোধী আইনের অধীনে ইডি সফলভাবে সব মিলিয়ে অন্তত ২২,২৮০ কোটি টাকার বেআইনি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সমর্থ হয়েছে। বড় মামলাগুলি থেকে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।’

বাংলাদেশের মানুষ তখন প্রতিবেশী দেশটির কাছে আশা করতেই পারে এদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ইডি কবে ফেরত পাঠাবে? ভারতের আমজনতার টাকা লুট করে যে তথাকথিত শিল্পপতিরা বিদেশে চম্পট দিয়েছেন, তাদের অসংখ্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ভুক্তভোগীদের খোয়া যাওয়া সম্পদের একটা অংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি)। হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গত ১৫ বছর এই কাজটিই করেছেন। ভারত অকাতরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন যুগিয়েছে। তখন হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের ওপর কোনো নির্যাতনের অভিযোগ তোলেনি ভারত। অতএব প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সাবধান, রাজনীতিবিদ হিসেবে সাবধান, আপনার বাংলাদেশি তকমা লাগানো ব্যাগ থেকে থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়তে পারে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়