মাহফুজ আলম আরও বলেছেন, ‘তাঁদের আরও উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা।’ সেই ৪৭ ও’ ৭১–এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনাকে সামষ্টিক স্মৃতিতে ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা তাঁর দল ও পরিবারের সদস্যদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এটি করলেই কেবল শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর একাত্তর–পূর্ব ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন বলে তিনি মনে করেন।
আজ বুধবার ফেসবুকে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন। তাঁর স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য (ইংরেজি থেকে অনূদিত করেছেন আজকের পত্রিকা ) তুলে ধরা হলো:
পতিত শেখরা!
শেখ মুজিব ও তাঁর কন্যা (আরেক শেখ) তাঁদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র বিরাগ ও ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। পাকিস্তানি জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণ তাঁর (শেখ মুজিব) নেতৃত্বের অনুগামী হয়েছিলেন, কিন্তু একাত্তরের পর তিনি নিজেই একজন জালিম হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তাঁর সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের পর পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫–এ তাঁর মৃত্যুতে মানুষ শোক–অনুতাপ প্রকাশ করেনি।
তবে, শেখ তাঁর একাত্তর–পূর্ব ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের একাত্তর–পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই বাহাত্তরের সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল—এসবের জন্য তাঁর দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান। শেখ–কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাঁদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এর জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা–বিদ্রূপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন তিনি)। তাঁদের আরও উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা।
কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (যদিও কর্মকর্তারা সরিয়েছেন) ; যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তাঁর একাত্তর–পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তাঁর বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাঁদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন।
কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণ–অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাঁর বিচার ও সাজা হওয়া উচিত।
স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকার কারণে তাঁদের ছাড় দেওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশ কাউকে দেবতুল্য করে তোলা এবং শাসক পরিবারগুলোর মধ্যকার বিবাদ থেকে উতরে যাবেই।’ ৪৭ ও’ ৭১–এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সামষ্টিক স্মৃতিতে অম্লান থাকার দরকার!
আপনার মতামত লিখুন :