শিরোনাম
◈ শীতকাল এবার কেমন হবে-জানালেন আবহাওয়াবিদরা ◈ লুৎফুজ্জামান বাবর গুরুতর অসুস্থ, মেডিকেল বোর্ড গঠন ◈ আইপিএলে মোস্তাফিজ ২ কোটি, সাকিব-মিরাজ কত…? ◈ পার্বত্য অঞ্চল আমাদের দেশের একটি বিরাট সম্পদ, সেখানকার শান্তির জন্য যা দরকার তাই করা হবে: সেনাপ্রধান (ভিডিও) ◈ ট্রাম্পের ঘোষণায় শঙ্কায় ১০ লাখ ভারতীয় : ‘জন্মসূত্রে আমেরিকান নাগরিকত্ব নয়’ ◈ বাংলাদেশ শিল্পকলার সামনে দু'পক্ষের হাতাহাতি, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ অফিসে শুয়ে থাকে হাগু করে এইটা কেমন কথা, পরিস্কার করতে বললেন শেখ হাসিনা! ◈ আত্মগোপনে থাকা কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক এমপি বাহারের ছবি ভাইরাল ◈ রাখাইনে অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ায় দুর্ভিক্ষ ভয়াল হাতছানি: জাতিসংঘ ◈ ‘আমি দলের সমস্ত নেতাকর্মীদের ফেলে পালিয়ে যাই’, বিএনপির শোভাযাত্রায় ‘খাঁচায় বন্দি শেখ হাসিনা’

প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৩ রাত
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাওড় অবগাহন।।

নাসির উদ্দিন, ফেইসবুক থেকে : "আমি হগলতারে খইচি, ইতারা অনেক বড় অবিচার অইব। তোরা গুমাইছ না। খোন সময় খিতা লাগে,  দিতাম অইব। ফেটো বোক লাগি যাইতঅ ফারে।" কথাগুলো হাউস বোটের গাইড আশিক নূরের। রাতে বোটের কাউকে ঘুমাতে দেয়নি সে। আন্দাজ যে ভুল ছিলনা, সেই প্রমাণও আছে। পাউবো কর্মকর্তা নূরুল আমিন, মাঝরাতে বাবুর্চিকে ডেকে ডিম সিদ্ধ করে খেয়েছেন। বলছিলেন ক্ষিধেয় অস্থির হওয়ার কথা।

এই বন্ধুদের সবাই জীবন শতাব্দীর চতুর্থ প্রান্তিকে। দুয়েকজনের সেঞ্চুরি বাকি মাত্র সোয়া একহাত (দশক)। আচরণে বয়সের পার্থক্য নেই। খুনসুটি শিশুতোষ বা তারুণ্যের গণ্ডিতেই থাকে। প্রৌঢ়ত্ব কেবল রাজনৈতিক বা ফিলসফিক্যাল ইস্যুতে। মজাচ্ছলে মাঝেমধ্যেই জুনিয়র ফ্রেন্ড সম্বোধন করি। রাজনৈতিক ইস্যুতে চিন্তার বৈপরীত্যের বোঝা বহন করতে হয় ধানমন্ডি লেকের প্লাস্টিকের টেবিলগুলোকে। যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে রেগেমেগে নিজেরাই কাঁপতে থাকেন। ক্লান্ত হলে সিনিয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেই, রেফারির ভূমিকা পালন করে। প্রতিবাদ বা ভুল শুদ্ধ বিবেচনা না করেই অবোধ শিশুর মতো মেনে নেয়। নানা কারণে প্রায়শই অনুপস্থিত থাকি। নিজের রুটিনের কারণেও সময়মত উপস্থিত হতে পারিনা। এনিয়ে অনুযোগ শুনতে হয়। প্রতিনিয়ত এই মানুষদের ভালোবাসায় মুগ্ধ আমি। জড়িয়ে আছি অন্যরকম এক মায়ার বাঁধনে। 

প্রায় প্রতি বছরই দূরে কোথাও ঘুরিয়ে আনার বায়না থাকে। এবার সিদ্ধান্ত ছিলো টাঙ্গুয়ার হাওড়। দু'টি পূর্ণিমা ঢেকে গিয়েছিল; রাজনীতি আর মেঘে। অগত্যা কার্তিকের কৃষ্ণপক্ষেই ছুটে গিয়েছি প্রকৃতির কাছে। সঙ্গী সাড়ে সাত দশক অতিক্রম করা ৬ যুবক। যাদের জন্ম ফোর্ড গাড়ির দ্বিতীয় প্রজন্মের সময়ে। একেবারে যেন সুবোধ ঘোষের অযান্ত্রিক উপন্যাস। বিমলের, সাবেক আমলের অক্ষয় ফোর্ড ট্যাক্সির বিবরণ। প্রাগৈতিহাসিক গঠন,.. সর্বাঙ্গে দীনতার ছাপ। ... তালিমারা হুড, সামনের আর্শিটা ভাঙা, তোবড়ানো বনেট, কালিঝুলি মাখা পর্দা আর চারটে চাকায় পট্টি লাগানো টায়ার। এক অপূর্ব শ্রী। কিন্তু বেলা শেষে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া। 

সেদিন পূবের লালিমাকে পথরেখা করে বের হয়েছিলাম। খাসিয়া পাহাড়ের শেকড়ে যখন পৌঁছেছি পরের লালিমার মাত্র দশ কদম বাকি। দুয়েকবার গাড়ির ওজন কমাতে নামতে হয়েছে। আবার ওজন বাড়ানোর কাজও করেছি। এছাড়া টানা চৌদ্দ ঘন্টায় এই লক্কর ঝক্কর প্রাগৈতিহাসিক ফোর্ড গাড়িগুলো দিব্যি সুস্থ ছিল। কোথাও ইঞ্জিন ঠান্ডার প্রয়োজন পড়েনি। আমি অভিভূত। প্রাচীন ফোর্ডগুলোর প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর এখন।

পরদিন ভোরে নীলাদ্রি লেকের তীর ধরে হেঁটে চলে যাই খাসিয়া পাহাড়ের নোম্যান্স ল্যান্ড অব্দি। অপরূপ এক সকালের সান্নিধ্যে প্রকৃতিতে আমরা ক্লান্তিহীন সাঁতার কাটি। এবড়ো থেবড়ো রাস্তা মাড়িয়ে টেকেরঘাট ঝর্ণা ছাড়িয়ে জয় বাংলা বাজার। সেখানে তখনো সকাল নামেনি। আমাদের উদ্দেশ্য হাওড়ের হাঁস আর হরেকরকম মাছ। অসংখ্য দোকানের বড়ো বাজার। এদিক ওদিক অলস ঘুরেফিরে গাভির দুধের চায়ের সন্ধান পাওয়া গেলো। সাথে মেদহীন অতৈলাক্ত পরোটা। উদ্দেশ্য বাজারে হাঁস মাছেদের জন্য অপেক্ষার প্রহরকে বিরক্তিহীন করা। হাঁস মাছ নিয়ে হাউজ বোটে ফিরে আসি দ্রুতই। আরেকদফা পরিপাটি হয়ে সকালের অমৃত ডিম খিচুড়ি বেগুনভাজায় তৃপ্ত হই। সবচেয়ে উত্তেজক ছিল নৌকায় তৈরী চা। 

তারপর চলে দীর্ঘ টাঙ্গুয়া যাত্রা। অপরূপ ধরাধামের আলিঙ্গনে কখন যে বেলা গড়াতে থাকে বুঝিনি। জয়পুর ভোলাবাড়ি শীলংপুর তিন বাড়ির তিনগ্রাম। এর কোল ঘেঁষা ওয়াচ-টাওয়ার থেকে দর্শন সীমা পরখ করি। এরপর হাওড়ের পানিতে মাখামাখি করে নেই। ততক্ষণে শান্ত মন আনন্দে প্রফুল্ল। হাওড়ের বুকে শেষবার পরিপাটি হয়ে টাঙ্গুয়া থেকে চলে আসি মাটিয়ান হাওড়ে। রোদ পানির কার্পেটে নৌকা নোঙ্গর করে চলে বাতাসে অবগাহন। নরম নির্মল বাতাসে এখানেই চলে খাবারের পালা। 

খাবারের পর্বটির বর্ণনা দেয়া কঠিন। সেই পান্ডিত্য আমার নেই। ভাষার ওপর অগাধ দখল ছাড়া এর বর্ণনা তুলে ধরা অসম্ভব। পুটি ভাজা, পাঁচমিশালি, বোয়াল আর কাকিলা মাছের চর্চরীর স্বাদ সত্যিই অপূর্ব। চেয়েছি সেই স্বাদ যেন জিহ্বায় আজীবন থেকে যায়। কিন্তু হাঁস এসে সবকিছুকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো। এমন রান্না হয়তো কালেভদ্রেই সম্ভব। 

আলুভর্তা থেকে ডাল, কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো? প্রতিটি যেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা স্বাদের সর্বোচ্চ মান নিয়ন্ত্রণ করে তৈরী। মানুষের পক্ষে প্রতিটি খাবারের সর্বোচ্চ তৃপ্তির স্বাদ এমনভাবে বহাল রাখায় আমরা অভিভূত। এজন্য খাবার শেষ হতেই বাবুর্চি দেলোয়ারকে স্পেশাল ধন্যবাদ পর্ব হলো। সে-ও নিশ্চয়ই এটা ভুলতে চাইবে না দীর্ঘদিন। আমাদের পক্ষেও মেঘদূতের বাবুর্চি দেলোয়ারকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। শুধু কি দেলোয়ার? গাইড আশিক নুর, সুকানি আহসান কবির আর মাত্র ১৮ বছরের চালক সজীবের সীমাহীন ভদ্রতা ভুলবো কিভাবে? ভালো থেকো তোমরা সবাই। আর এই আয়োজনে ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম (তপন), তার বন্ধু তাহিরপুরের উজ্জ্বলকে বিশেষ ধন্যবাদ। হাউজ বোট মেঘদূতের সেবা বেঁচে থাক অনন্তকাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়