মহসিন কবির :ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতন হয়। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতে বসে প্রবাসী সরকার গঠন করবেন শেখ হাসিনা। এমন খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই এমন গুঞ্জন চলছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা ও ভারত সরকারের কর্মকর্তারা এটিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলছেন। বিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন এর কোন ভিত্তি নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ দাবি করেছেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকারের ঘোষণা দিতে চায়। তারা সেখানে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনে শোনা যায়, কুমিল্লার বিবিরবাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ফেনীর আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাকর্মীরা শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর ৩টার দিকে একটি বৈঠক করেন।
এদিন রাত সাড়ে ৮টায় কুমিল্লা নগরীর টাউনহল মাঠে আয়োজিত আরেক সমাবেশে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে জমায়াতের অপচেষ্টা করছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিবাদের দালাল যারা রয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টাকে সফল হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে কুমিল্লা থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের রূপকার খুনি শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি।
ভারত সরকারের কর্মকর্তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবিকে সম্পূর্ণ ‘গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ভারত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ভারত সরকারের একটি সূত্র বলছে, কারা বলছেন এসব কথা? তারা কি কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন? পাশের দেশে যে কেউ একটা আজগুবি কথা বললেই আমরা কেন জবাব দিতে যাবো?
এ ধরনের দাবির যে কোনও ভিত্তি নেই, সেটা অবশ্য ত্রিপুরা এবং দিল্লিতে নানা মহলে খোঁজখবর নিয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে।কারণ, প্রথমত, আওয়ামী লীগের পালিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা যদি ত্রিপুরার মাটিতে বড় মাপের কোনও সমাবেশ করতে চান, সেটা একেবারে গোপনে বা স্থানীয়দের কাউকে টের পেতে না-দিয়ে করা সম্ভব নয়।
বিবিসি বাংলাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেছেন, আমাদের নিজস্ব কানেকশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। সমাবেশ করার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগ নেতারা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, শনিবার তারা কুমিল্লার কাছে সীমান্তের এক জায়গাতে মিটিংও করার চেষ্টা করেছিল, জানাজানি হওয়ার কারণে যা পরে আর সফল হয় নাই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, এগুলো সব ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা। ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ চালাতে পারছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সিনিয়র আরেকজন নেতা বলেন, দেশে এখন জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অরাজকতা চলছে। মোটকথা, কোনোকিছুর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।
খোমেনী এহসান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকার গঠন করলে খুবই ভালো হবে, কারণ তখন দেশ স্থায়ীভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়ে যেতে পারবে। তখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সহজ হবে, মুজিবের মূর্তি ও ছবি ধ্বংস করা যাবে এবং জয়বাংলা স্লোগান দেওয়া অপরাধ গণ্য হবে। আর হ্যা, তরুণরা রাষ্ট্রদ্রোহী বিদেশী দালাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুদ্ধ এনজয়ও করবে।
সাইদুর রহমান একজন ফেসবুকে লিখেছেন, নিরপেক্ষতার আড়ালে ফ্যাসিজমকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় লিপ্ত আওয়ামী লীগ বিটের চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক জুনায়েদ খান। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মতো মূল ধারার একটি গণমাধ্যমে এই রিপোর্ট কিভাবে হয়? "প্রবাসী সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ" সম্পূর্ণ মিথ্যা বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি তৈরি করা হলো। যেখানে শেখ মুজিবের ভাইয়ের ছেলে শেখ রুবেলের বক্তব্য বলে প্রচার করা হলেও, বাস্তবে মুখ ঢেকে বক্তব্য দেয়া ওই ব্যক্তি শেখ রুবেল না। আওয়ামী লীগপন্থী জুনায়েদ খানের হীন উদ্দেশ্যের বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে সব জায়গা থেকে রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর।
প্রশ্ন হচ্ছে রিপোর্ট সরিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে কি মুক্তি দেয়া যাবে? আওয়ামী লীগের আমলে পিএমবিটের সাংবাদিকদের একটি অংশ বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন বলে খবরে এসেছে। বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মিশনে নেমেছে একটি পক্ষ। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। রাষ্ট্রবিরোধী সাংবাদিকতার জন্য ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রমানসহ নিচে কমেন্টেসে দেয়া হলো।
সাদাত হোসেন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, লজ্জাহীন আওয়ামী মাফিয়ার দেশথেকে পালিয়ে গিয়ে বিদেশে বসে প্রবাসী সরকার গঠন করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে আমরা কি আঙুল চুষবো,,।
আহসাসনুল হক নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “দেশে এখন জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অরাজকতা চলছে। মোটকথা, কোনোকিছুর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই,” একারনে কিছু ভিত্তিহীন অসত্য প্রপাগান্ডা চলছে। তার মধ্যে একটা অন্যতম ভূয়া প্রপাগান্ডা "ভারতের ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগ বিপ্লবী সরকার গঠন করছে!" প্রত্যেক জেলায়, জেলায় জনসভা করছেন, একটা জনসভা করতে হলে মিনিমাম ৫ লাখ টাকা লাগে, এসব টাকা কোথায় পেলেন, পরিস্কার না। এসব ঢাকতেই কি নতুন নতুন প্রপাগান্ডা?
শাহরিয়ার খান একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ যদি প্রবাসী সরকার গঠন করে তাহলে এটা কি সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল হবে না?????।
আহমেদ রশীদ একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকার গঠনের চেষ্টা করছে সেই সরকারের গঠন কাঠামো বা সাংবিধানিক ভিত্তি কিহবে?!!!!!।
আপনার মতামত লিখুন :