শিরোনাম
◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল ◈ এবার ভয়ংকর সেই আয়নাঘর নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ◈ নির্বাচনের সময় নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল ◈ পরীক্ষা দিতে এসে আটক রাবি ছাত্রলীগের ২ নেতা ◈ বিশ্বের ১১০ কোটি তীব্র দরিদ্র মানুষের মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি থাকেন ভারতেই!  ◈ দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে বরের ওপর সাবেক স্ত্রীর হামলা ◈ এবার শাহবাগে বিক্ষোভ করছে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা : চাকরি জাতীয়করণের দাবি ◈ স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ আবার ফিরেছেন বাংলাদেশ দলে ◈ দক্ষিণখানে পুলিশের পোশাক,নকল পিস্তলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০১ আগস্ট, ২০২৪, ০৪:২৯ সকাল
আপডেট : ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোটা মুভমেন্ট কেন্দ্র করে ম্যাসাকার কোনো সরকারবিরোধী মুভমেন্ট ছিলো না, এটা ছিলো রাষ্ট্রবিরোধী মুভমেন্ট

শোয়েব সর্বনাম

শোয়েব সর্বনাম: এবারের ম্যাসিভ এটাকের প্রধান অস্ত্র ছিলো গুজব। প্রথম গুজবটা ছিলো, শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলছেন! এই গুজবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে আন্দোলনটা শিক্ষার্থিদের হাত থেকে সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যায়। দ্বিতীয় গুজবটা হচ্ছে শেখ হাসিনা পলায়ে গেছেন! এই গুজবের পর শুরু হয় কিলিং। টোটালি অর্গানাইজড একটা এটাক ছিলো। বিটিভির নিজস্ব ঠিকাদার একটা টিম নিয়ে বিটিভির সেনসিটিভ জায়গাগুলাতে এটাক করে। মেট্রোরেলের শুধু পাওয়াত স্টেশনটা জ্বালায়ে দেওয়া হয়। স্টেশনের আর কোথাও জ্বালায় নাই। এইগুলা পাবলিক বা মব করে নাই, মব কখনো এত অর্গানাইজড কাজ করে না। 

এক পুলিশ অফিসারকে হত্যা করার জন্য নারায়নগঞ্জের পিআইবি অফিসে গিয়ে হামলা করা হইছে। সেখানে তাকে না পেয়ে বনশ্রীতে তার বাসার সামনে গিয়ে কোপায় মেরে ফেলছে। এই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পাবলিক বা মব করে না। আর এই গুজবগুলার পাবলিসিটি করছে একটা পেইড ডিজিটাল টিম। মাত্র কয়েক হাজার আইডি ইউজ করা হইছে, রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট পেলেই ওয়ানকে শেয়ার করে দিছে। পাবলিক তখনি কনফিজড হয়ে যায়। বেছে বেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলাতে এটাক করছে। রাষ্ট্রের পক্ষে কেউ কথা বললেই তার পোস্টে কমেন্ট ব্যবহার করা হইছে চারটা। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, চাটা ও দালাল। পেইড কিছু আইডি আছে, সবার পোস্টে একই কমেন্টগুলা করে যাচ্ছিল। 

আওয়ামী লীগের লোকেরাও এদের জামায়াত, রাজাকার ইত্যাদি বলা শুরু করছিলো। কিন্তু কিছু পেইড বুদ্ধিজীবী তাদের প্রতিহত করে, জামায়াত-রাজাকার বলা যাবে না। যেহেতু শিক্ষার্থীদের পক্ষে ওরা। পেইড বুদ্ধিজীবীরা দুইটা কাজ করছে। প্রথমটা হচ্ছে রাজাকার গুজবের পক্ষে প্রবল প্রচারণা চালাইছে। যারাই গুজব ধরে ফেলছে, বেছে বেছে তাদের পোস্টে গিয়ে কমেন্ট করে কনফিউজ করছে। দ্বিতীয়ত, পেইডগুলাকে জামাতি ও রাজাকার বলা হলে তার বিরোধিতা করে পোস্ট দিছে। সেইগুলা কয়েকমিনিটে ওয়ানকে টুকে শেয়ার করে সাপোর্ট দিছে গুজবকারীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, চাটা, দালাল ইত্যাদি কমেন্টগুলাকে সাপোর্ট করে গেছে। শেখ হাসিনা পালায় গেছেনÑ এই গুজবের পরের থ্রেটটা ছিলো তাদের কথামতো পোস্ট না দিলেই সে আওয়ামী লীগ, তারে ধরে পিটায় মারা হবে। বামপন্থীগুলা নারীদের বলছে রেপ করে দেবে; যার যা স্বভাব। আমি শুধু এদের স্ক্রিনশট রাখছি। যাইহোক, প্রকাশ্যে এই থ্রেটগুলা দেশপ্রেমিক মানুষদের আত্মবিশ্বাস নাড়ায়ে দেয়। এরপর তালিকা করে করে সেলিব্রেটি ও ইন্টেলেকচুয়ালদের বিরুদ্ধে প্রচারণা হইছে। আপনের লেখা পড়ব না, আপনের সিনেমা দেখব না আপনে আমাদের পক্ষে না লিখলেই আপনি চাটা ও দালালÑ এসব পাবলিসিটিও অনেককে বিভ্রান্ত করছে। এইটা এখনো চলতেছে। 

কোটা মুভমেন্ট কেন্দ্র করে এই ম্যাসাকার কোনো সরকারবিরোধী মুভমেন্ট ছিলো না, এইটা ছিলো রাষ্ট্রবিরোধী মুভমেন্ট। পরিষ্কার দুই ভাগে ভাগ করা হইছে, হয় তুমি রাষ্ট্র ধ্বংসের পক্ষে, নাইলে দালাল। সরকার এই ম্যাসাকার সামাল দিতে পারে নাই এইটা পরিষ্কার। এইটা সামাল দিছে রাষ্ট্রের সিস্টেম। রাষ্ট্র নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অনেকগুলা উইপন প্রস্তুত রাখে, তার একটা হচ্ছে সেনাবাহিনী। যখন রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ আসে, তখন রাষ্ট্র সেগুলা ব্যবহার করে। এই আন্দোলনের সরকারপতনের কোনো টেন্ডেন্সি ছিলো না, এর লক্ষ্যই ছিলো রাষ্ট্রের পতন। এইটা খুচরা পলিটিক্যাল পোলাপানের কাজ না, এইটা রাষ্ট্রের শত্রুদের কাজ। তারা একটা মাঝারি অঙ্কের ফান্ড এইখানে ইনভেস্ট করে। তাতে কাজ হইছে। ফলে, এই ফান্ড নিয়মিত আসবে। ফলে আমরা আর সহজেই দুই সপ্তাহ আগের বাংলাদেশে ফেরত যেতে পারতেছি না। এখন চোরাগোপ্তা হামলা শুরু হবে, টার্গেট কিলিং ইত্যাদি চলতে থাকবে বছরের পর বছর ধরে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার বা ক্ষমতায় যেই থাকুক, রাষ্ট্রের শত্রু কিন্তু ইতোমধ্যে ঢুকে পরছে। এই ম্যাসাকারটা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না। আমি মনে করি, নিজেদের রাষ্ট্র নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। এর জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। কোনো যুদ্ধে যাবার দরকার নাই, কোনো বিপ্লবের দরকার নাই, কোনো আওয়ামী লীগের দরকার নাই। বিভেদ বাদ দিতে হবে। দুই দিয়ে ভাগ করা বন্ধ করতে হবে। 

তুমি দালাল, তুমি লীগ, তুমি জামায়াতÑ এরকম বিভেদ যারাই করতে আসবে তাদের ব্যপারে অতি সতর্ক থাকতে হবে। যারাই দুই দিয়া ভাগ করতে আসবে তাদেরই ব্লক। এদের সংখ্যা খুবই অল্প, যেহেতু পেইড, দুইদিন টানা ব্লক করলেই এরা অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। আর সন্দেহ করতে হবে দুই নম্বরদের। দুই নাম্বার চেনা খুব সহজ, এরা সব বিকৃত করে দেয়। প্রথমে হাসিনার কমেন্ট বিকৃত করছে। দেখলাম রাজীব আশরাফের বিখ্যাত লিরিক বিকৃত করে লাল ব্যাকগ্রাউন্ডে ডিপি দিয়ে রাখছে, ফুলগুলো সব লাল হলো কেন? অথচ রাজীবের লাইনটা ছিলো, ফুলগুলো সব লাল না হয়ে নীল হলো কেন। এই ছোট ছোট বিকৃত প্রচারণা দুই নাম্বারির প্রধান অস্ত্র। এরাই গুজব বানায়। 

শেখ হাসিনা পলাইছেন, বেগম খালেদা জিয়া মরে গেছেনÑ এইগুলা যারা বলতেছে তারা কারা? আপনি আওয়ামী করেন, বিএনপি করেনÑ যা খুশি তাই করেন, সবার আগে আপনার বাংলাদেশের হতে হবে। সবার উপরে রাষ্ট্র, যেটা আশ্রয়, যা আপনার অস্তিত্ব। দল-মত অনেক পরের ব্যপার। এই দেশ আমার, এই দেশ আমাদের, দেশটা আমাদের বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্টির- এইটাই আমাদের জাতীয় ঐক্য। তারা যেভাবে দেশটা আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছে, আমরা তার চেয়েও সমৃদ্ধ করে আমাদের পরের প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যাব। কোনো শত্রুর হাতে নয়। লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়