শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২৪, ০৫:২২ বিকাল
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাতি হত্যা কি তাহলে বন্ধ করা যাবে না?

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র: বাংলাদেশে যে হাতিটি দেখা যায় এটিকে এশিয়ান এলিফ্যান্ট বলে। এই এশিয়ান এলিফ্যান্ট ১৩টি দেশে দেখা যায়। বন বিভাগের তথ্য মতে ২০০৪ সাল থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত হাতি হত্যা করা হয়েছে ১১৮টি। আরেকটি তথ্য অনুযায়ী হাতি মানব দ্বন্দ্বে ২৩৬ জন মানুষ মারা গেছে। আইইউসিএন এর তথ্য অনুয়ায়ী বাংলাদেশে তিন ধরণের হাতি দেখা যায়। কিছু হাতি তাদের আবাসস্থলে বাস করে। কিছু হাতি পরিব্রাজন করে। কিছু হাতি পোষ মানা। বন্য হাতি যারা তারা তাদের আবাসস্থলে বাস করে, তাদের সংখ্যা ২৬৮। পরিব্রাজনকারী হাতির সংখ্যা ৯৩। পোষ মানা হাতির সংখ্যা ৯৬। বিজ্ঞানীদের মতে বাংলাদেশে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ৫০০ এর মত হাতি ছিল।

সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী এই হাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৮ থেকে ৩২৭ এ। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ২৬৩টি, যার ৫৫ ভাগই কক্সবাজার এলাকার। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ছাড়াও মানব হাতি সংষর্ষের ঘটনা ঘটে শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গায়।

প্রতি বছর শ্রীলংকায় ২০০ হাতি হত্যার কবলে পড়ে। ভারতে মানুষ হাতি সংঘর্ষে মারা পড়ে বছরে ১০০ হাতি। কেনিয়াতেও এই সংখ্যা বছরে ১২০ এর বেশি। ডব্লইডব্লইএফ এবং এউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের প্রতিবেদন অনুযায়ী মানুষ -বন্যপ্রাণী দ্বন্দ্ব পৃথিবীর অনেক প্রজাতির টিকে থাকার জন্য এখন হুমকিস্বরূপ। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এসবের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে বন্য বিড়াল প্রজাতির ওপর। এদের ওপর প্রভাব ৭৫% এরও বেশি। এছাড়া  সামুদ্রিক মাংসাশী প্রাণী এবং হাতির  ওপরও এসবের ক্ষতিকারক প্রভাব বেশ দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২ টি হাতি চলাচলের জায়গা রয়েছে। কিন্তু এই রাস্তাগুলো হাতি চলাচলের উপযুক্ত না। হাতি বেঁচে থাকার জন্য এই পরিব্রাজনের রাস্তাগুলো খুবই গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু দিন দিন এসব জায়গা সংকুচিত হচ্ছে।

অনেক দেশেই মানুষ হাতি বিচরণ ক্ষেত্রে বসবাস করে। তাদেরকে বন্যপ্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয় জমি, খাদ্য, পানি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে। এই সমস্ত মানুষ হাতির বিচরণ এলাকা কতটুকু বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী কোথায় বিচরণ করে এসব নিয়ে অসচেতন। ক্রমশ হাতি বসবাসের এলাকায় নতুন গ্রাম, খামার, শহর, বড় রাস্তা, শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। হাতির যাতায়াতের পথে বেড়া দেয়া হচ্ছে। বন ভূমি কৃষি  ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে। হাতিরা নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে এ কারণে। পানি ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ বড় বড় বিপদের মুখে পড়ছে।

হাতি তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী। এটি দিনে ১৫০ কিলোগ্রাম ঘাস এবং ১৯০ লিটার পানি পান করে। এজন্যে তাকে খাদ্য ও পানীয়ের জন্য বড় একটা এলাকা ঘুরে বেড়াতে হয়। একটি বড় পুরুষ হাতি ওজনে ৬৮০০ কিলোগ্রাম হয়। যা অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের থেকে একশ গুণ বেশি ভারি। যখন হাতি নিজেকে হুমকির মুখে পড়েছে মনে করে তখন সে মানুষকে আঘাত বা হত্যা করে, ঘরবাড়ি ও সম্পদ বিনষ্ট করে। হাতির কবলে পড়ে অনেক কিছুরই ক্ষতি হয়ে থাকে। ভারতেই প্রতি বছর ৫ লাখ পরিবারের হাতির কারণে শস্যের ক্ষতি হয়েছে। ফলে এই সমস্ত পরিবার প্রচণ্ড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাবে পড়ে।

২০২১ সালে দেওয়া আইইউসিএনর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গত ১৭ বছরে ৯০টি হাতি হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালে হত্যা করা হয় ১১টি হাতি। কোনভাবেই এই হত্যা কমানো যাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী হাতি হত্যাকারীর শাস্তি জামিনঅযোগ্য, দুই থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত অর্থদণ্ড। তবে আত্মরক্ষার্থে এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু এইসব বিধানের কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। সম্প্রতি এক সেমিনারে বাংলাদেশে নভেম্বর মাসেই চট্টগ্রাম ও শেরপুরে ৮টি হাতি হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। এগুলো হয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, না হয় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা হয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে হাতি বাংলাদেশে বিলুপ্ত হতে বাধ্য। তাই এই মুহূর্তে হাতি হত্যা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। লেখক: শিক্ষক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়