সুপ্রীতি ধর: একজন সিঙ্গেল মা হিসেবে নানা রকম প্রতিকূল সময় পাড়ি দিয়েছি আমি। সাংবাদিকতার চাকরি, যার কোনো নির্দিষ্ট টাইম-টেবিল নেই। সম্পূর্ণভাবে গৃহ সহকারির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে আমাকে। কী ভীষণ টেনশন নিয়ে যে তখন দিন কাটতো আমার। মোবাইলের ব্যবহারও এরকম ছিল না শুরুতে। ফলে একবার বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে সারাদিনে খবর নেওয়াটাও অসম্ভব ছিল। দমবন্ধ সময় ছিল তখন। যখনই নতুন গৃহ সহকারি আসতো, টেনশন বেড়ে যেত ভয়াবহভাবে। কতদিন এমন হয়েছে যে যখনই অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি, সহকারি ঝগড়া শুরু করলো আর ব্যাগ গুছিয়ে চলেও গেলো। কী ভয়াবহ সেইসব দিন ছিল আমার। মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরলো কিনা, ঠিকমতোন সিঁড়ি বেয়ে বাসায় গেলো কিনা, ছেলেটা খেলো কিনা, কী খেলো, ঘুমালো কিনা, এসবই, একজন মায়ের যা যা চিন্তা থাকে আর কী। মনটাকে বার বার বোঝাতাম, যত যাই হোক না কেন, ওরা যেন প্রাণে বেঁচে থাকে।
আমার ঘর থেকে যদি টিভি-ফ্রিজ, আলমারি-খাট-টাকা-পয়সা সব নিয়েও যায় কেউ, আমি কিনে নিতে পারবো, কিন্তু বাচ্চাদের কিছু হলে আমি কী দিয়ে পূরণ করবো? ওরা যেন প্রাণে বাঁচে। কেন বললাম কথাগুলো? বর্তমান সময়ের সাথে মিল আছে বলেই। আমি নিশ্চিত জানি, সাঈদ, মুগ্ধসহ আরও যাদের মেরে ফেলা হয়েছে তাদের সবারই মা-বাবা-ভাই-বোন-স্ত্রী-সন্তানরা একইভাবে ভাবছে, আহা, ল্যাংড়াখোঁড়া হয়েও যদি ওরা বেঁচে থাকতো। বাঁচতো তো। এখন তো আর ফিরবে না কোনোদিন। এই কষ্ট যার কোনোদিন কিছু হারায়নি বা যারা এই প্রসেসের মধ্য দিয়ে যায়নি, তারা বুঝবে না। যদিও শুনেছি প্রকৃতিই নাকি সব ফিরিয়ে দেয়। কে জানে কাকে, কীভাবে এবং কী ফিরিয়ে দেবে প্রকৃতি। ২৭-৭-২৪।