শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল ◈ এবার ভয়ংকর সেই আয়নাঘর নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ◈ নির্বাচনের সময় নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ নজরুল

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০২৪, ০২:০৫ রাত
আপডেট : ০৮ অক্টোবর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়েন, বিএনপি-জামায়াত ধ্বংস করে

দীপক চৌধুরী

দীপক চৌধুরী: বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন তাণ্ডব চালালো ধ্বংসকারীরা। বিভিন্ন জায়গার কয়েকশ স্থানে হামলা, ভাংচুর, সংঘর্ষ, নাশকতা, জ¦ালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় প্রমাণিত হয় নাশকতাকারীদের একমাত্র ইচ্ছা ছিলÑ দেশ ধ্বংস করে দেওয়া। বিশ^বাসীর কাছে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখাতে  নির্বিচারে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছিল নাশকতাকারীরা। তারা অস্ত্র ব্যবহার করেছে। কীভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলতে পারলেন, ‘সরকার তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোর ক্ষতি সাধন করেছে।’ এটা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে? এসব কথা শোনার পর মানুষের বিএনপির ‘নিকৃষ্ট রাজনীতি’ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিটারিরা যেভাবে এই দেশের শুধু মাটি চেয়েছিল আর জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে গুলি করে, ভেঙে চুরমার করে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল; ঠিক সেরকমই এবার জনগণ নাশকতার তাণ্ডব দেখেছে। সত্য স্বীকার করতে হবেই যে, মূল উদ্দেশ্য কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল না; ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক নজিরবিহীন জ¦ালাওপোড়াও আর ভাঙচুর করা হয়েছিলো নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে। ফলে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবলীলার চূড়ান্তটা চালিয়ে দেখালো। দেখলো জাতি তাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের চরিত্র। ও  কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতার ভয়ংকরতা। পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতির এতোটাই অবনতি করা হয়েছিল যে, বাধ্য হয়ে সরকারকে কারফিউ ঘোষণা করতে হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার বাহিনী, কোস্টগার্ড নামিয়ে দেশকে স্বাভাবিক করতে হয়, দেশ রক্ষা করতে হয়, দেশের জনগণকে বাঁচাতে হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেশ নিরাপদ এটা জনগণ মানলেও বিএনপি-জামায়াত-শিবির কখনো মানতে চায়নি।

আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি। ’৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আর কয়েকলাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনময়ে আমরা সোনার বাংলা পেয়েছি। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ  শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পায় কাক্সিক্ষত মুক্তিযুদ্ধে বহুপ্রত্যাশিত বিজয়। মাতৃভূমি পেয়েছি। যে বিজয়ের মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গের আপামর জনতা পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম  দেয় বাংলাদেশ নামে নতুন এক রাষ্ট্রের। লক্ষ লক্ষ মানুষের ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে আবেগপূর্ণ পরিবেশ  সৃষ্টি হয়েছিল সারাদেশে। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আমরা কি কোনোকালে ভুলতে পারবো? অথচ এই স্বাধীন দেশের রাজধানীতে  কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কয়েকজনের মুখ থেকে আমরা শুনলাম, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রাজাকার’ স্লোগানের এই শব্দটিতেই আক্ষেপ করেছিলেন। বক্তব্য দেওয়াকালে তিনি আফসোস করেছিলেন। ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন।

এখন আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছেÑ কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই  এড়ানো যেত না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছিল প্রথমদিকে। এরপর জনমনে সাধারণ ধারণা হয় আন্দোলনকারীদের অদূরদর্শী অবস্থানই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যখন ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করা হয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালতের কথা বলা হয়েছিল, আইনের কথা বলা হয়েছিল, আইন মানার কথা বলা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের কথা বলা হয়েছিল তখন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সরকারের তরফে ইতিবাচক ঘোষণার পরও তারা থামেনি। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা না থামাতে সহিংসতাকারীরা সুযোগ নিয়েছিল। যখন সরকারের তরফ থেকে বারবার আলোচনার আহ্বান জানিয়েও  সেসব ইতিবাচক  কথা কাজে আসে নাÑ তখন সরকার কঠোর হতে বাধ্য হয়। নাশকতাকারীরা তখনই বুঝতে পারে সরকার মূলকাহিনি বুঝে গেছে, আন্দোলনের নামে যা করার পরিকল্পনা তা বুঝে ফেলছে; তখনই তারা ভিন্নপথে হাঁটতে একবিন্দু দেরি করেনি। কোটা সংস্কার বিষয়ে আন্দোলনের ছায়ায় নাশকতাকারীরা সহিংসতার রূপ দেয় সারা দেশে।  কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।

একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘জবাব  দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত’ বলে  ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা ছিল তার রাজনৈতিক কথা। ছাত্র রাজনীতি করা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পোড় খাওয়া রাজনীতিক ওবায়দুল কাদের হয়তো বুঝতেই পারেননি সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীরা পূর্ব থেকেই সিনেমার কাহিনির মতো নৃশংস ‘প্লট’ তৈরি করে রেখেছে। সন্ত্রাসীরা তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। সারা  দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণার পর সন্ত্রাসীরা সর্বোচ্চ সুযোগ নিয়েছিল। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ  ঘোষণা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার সুযোগ লাভ করে সন্ত্রাসীরা। 

সারা দেশে শিক্ষার্থী-তরুণদের রাজপথে নামিয়ে আনতে গুজব ছড়ায় বিএনপি-জঙ্গি-জামায়াত-শিবির। বিক্ষোভকারীরা পুরো বাংলাদেশ কার্যত স্থবির করার অপচেষ্টা চালায়। সন্ত্রাসীরা এ সুযোগে সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মিশে যায়।   প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা যখন  দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিলেন, তখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সংঘর্ষ, নাশকতা,  গোলা-গুলিতে  যে এতগুলো প্রাণ ঝরে  গেল, এত মানুষ আহত হলেন,  দেশজুড়ে সহিংসতায়  যে এতসব রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হলো, তার দায়  কে  নেবে? রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল, বিটিভি,  সেতুভবন, বিআরটিএ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র,  পুলিশ বুথসহ বহু স্থাপনা ও জায়গায় হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ফায়ার সার্ভিসের  গাড়ি ভাংচুর করেছে ও পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এসব দায় কার? সবাইকে মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ গড়েন আর বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিরা ধ্বংস করে। তফাৎটা কোথায়? কারণ, তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় বসতে চায়।

অমরা সবাই জানি, জামায়াত-শিবির মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-শিবির-জঙ্গি ঢুকে গেছে। আর এটাও জনগণ জানে, সরকারের  প্রতি  দেশের মানুষের সমর্থন রয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, দেশিয় অস্ত্র, বোমা, রাম-দা, দিয়ে হামলা করে বা  আত্মঘাতী জঙ্গি দিয়ে হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করা যাবে, নাশকতা করা যাবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা যাবে কিন্তু বেআইনিভাবে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে একমাত্র দায়িত্ব হবে নাশকতাকারীদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে দেশের অর্থনীতি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাটসহ সর্বত্র স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। নাশকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণ। সারাদেশের স্পর্শকাতর জায়গা গুলোয় গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করতে হবে এবং যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকারকে কঠোর অবস্থানে দেখতে চায় জনগণ। লেখক :  উপসম্পাদক- আমাদের অর্থনীতি। কলামিস্ট,  কথাসাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়