শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০২৪, ১২:৫১ রাত
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রেম, বিয়ে এবং পরকীয়া

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [১] যেদিন থেকে বিয়ে নামের একটি জবরদখলী প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলো, সেদিন থেকেই প্রেম নামের একটি অসাধারণ রোমাঞ্চকর সুখানুভূতি মৃত্যুর দিকে যাত্রা করলো। প্রেম এখন একটি শবদেহ। [২] না, আমি বলছিনে বিয়ে কোন একক মানুষ কিংবা সব মানুষ সভা করে আনলো, এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, প্রয়োজনে। এই প্রয়োজন কথাটার মধ্যেই আছে স্বার্থ। এসেছে আসলে স্বার্থের প্রয়োজনে। বিয়ে একটি স্বার্থপর প্রতিষ্ঠান। অথচ প্রেম? 

প্রেম একটি খাঁটি অবিমিশ্র নিঃস্বার্থ প্রপঞ্চ। এখানে যা কিছু জাগ্রত হয়, তা প্রকৃতির লীলাস্বরূপিনী। তার দিক থেকে একটি স্বার্থ আছে অবশ্য, তাতে প্রেমের মহিমা কমে না, বাড়ে, কারণ এর মধ্য দিয়ে সে শুধু টেকে না, আরো অজস্র প্রেমের জন্ম দেয়। প্রেম ছাড়া প্রকৃতির টিকে থাকা অসম্ভব।

[৩] বিয়ে এসে প্রেমের উপর কালি লেপে দিতে চাইলো এবং দিলোও। সেই কালিতে কত প্রেমের বলি হলো, তার হিসাব কে রাখে! এতোদিনে প্রায় সবার জানা হয়ে গেছে বিয়ে মানেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির উত্তরাধিকার তৈরি। বংশবিস্তার যে টিকে থাকার আনন্দ, প্রেম তার ক্রিয়াত্বক লীলা, বিয়েতে এসে হয়ে পড়লো লোভের বুদবুদ। সেই বুদবুদে পৃথিবী আজ বিপর্যস্ত। বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত: শোষক শোষিত। বিভেদকারী এই প্রতিষ্ঠানের নামই কালপ্রিট 'বিয়ে'।

[৪] এই বিয়েই যৌনস্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে, অধীনস্থ করে ফেলেছে ক্ষমতার। ক্ষমতা মানেই তাকে যেভাবেই হোক দমন করা, কিনে ফেলা। ফলত বিয়ে হয়ে উঠেছে একটি কেনাবেচার হাট। ‘ফেল কড়ি মাখো তেল, ধর তক্তা মারো পেরেক’! যা ছিল উদ্দাম আনন্দ, তাই হয়ে দাঁড়ালো ক্লিশে। ফলত দেখা দিল লুকোচুরি, মিথ্যাচার এবং ফাটল। বিয়ে হয়ে দাঁড়ালো গলার ফাঁস, প্রধানত নারীর জন্য। না, আমি বলছিনে পুুরুষ এই ফাঁসে পড়ে না, পড়ে, খুব পড়ে, কারণ ততদিনে নারীও সেয়ানা হয়ে উঠেছে, দেহ কিনতে সেও ক্ষমতাবতী হয়ে উঠেছে। আসল কথা কেনার সামর্থ্য। পুঁজিবাদ নারীকে যেমন বন্দী করেছে বিয়ে নামের কারাগারে, আবার বের করেও এনেছে ঘর থেকে। এখন নারীরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে, কমে আসছে নিরঙ্কুশ পুরুষাধিপত্য। বিয়ে হয়ে উঠছে একটি সামাজিক সার্টিফিকেট। 

[৫] আসলে বিয়ে হচ্ছে প্রেমের অবদমিত রূপ। তবে যেখানেই অবদমন সেখানেই নিষ্ক্রিমণ। বিয়েতে চিড়াচ্যাপটা প্রেমের নিষ্ক্রিমণ কোথায়? প্রেমে। মতলববাজরা এর নাম দিয়েছে পরকীয়া। প্রকৃতপ্রস্তাবে  পরকীয়া বলে কোনো প্রেম নেই। কেননা প্রেম কোনো সামাজিক স্বার্থপ্রসূত ঘটনাকে স্বীকার করে না। আসলে করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তা মানবে কেন, সে বেরিয়ে পড়ে তার দেখানো পথে, যে পথ আনন্দের, যে সুখে ভাসবার। সে ভেসে যায়, মতলববাজরা তাকে ধরে আনে, পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলে, বেদম প্রহার করে। বেচারা প্রেম চোখের জল ভাসে। যে অশ্রু প্রেমের সেরা উদগীরণ, এখানে কেবলি তা তপ্ত জল। কিন্তু তাতেও প্রেম পিছে হটে না, বলে কোটি কোটি মানুষের সামনে, ক্ষমতার সামনে ‘প্রেম কিয়া তো ডার না কিয়া’।

[৬] সময় এসেছে ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে না বলার, সময় এসেছে বিয়ে নামক এক জবরদখলী প্রেমের হন্তারক প্রতিষ্ঠানকে না বলার। দারিদ্র্য, বৈষম্য, অধীনস্থতা, নিপীড়ন, হত্যা, জবরদখল  অনেক হয়েছে। এবার এমন একটি সমাজ গড়ি যেখানে থাকবে এতোদিনের অর্জিত জ্ঞান, তার সৌধ এবং মানুষ মেতে থাকবে উৎপাদন ক্রিয়ায়, শিল্পে এবং যৌনানন্দে। সন্তান হবে কাহ্লিল জিব্রান কথিত ‘পৃথিবীর সন্তান...’। লেখক: ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়