শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৩৭ দুপুর
আপডেট : ০৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কঠোর হওয়া ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপায় ছিলো না

দীপক চৌধুরী: যা কখনো কল্পনাতেও চিন্তা করা হয়নি তা-ই হয়ে গেলো দেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক নজিরবিহীন জ্বালাও-পোড়াও আর ভাঙচুর হলো। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবলীলার চূড়ান্ত দেখলো জাতি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতার ভয়ংকরতা দেখা গেলো। বাধ্য হয়ে সরকারকে একপর্যায়ে কারফিউ ঘোষণা করতে হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার বাহিনী, কোস্টগার্ড নামিয়ে দেশকে স্বাভাবিক করতে হয়েছে। এককথায় চলমান মুহূর্তের বাংলাদেশে আমরা এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি। কোনো কোনো গণমাধ্যমে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৯৬ জনের প্রাণহানির খবর প্রকাশ করা হয়েছে। কারফিউ শিথিল করা হয়েছে।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীতে কারফিউ সাত ঘণ্টা শিথিল। সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত আকারে চলছে। বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ, নাশকতা, জ্বালাও পোড়াওয়ের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযানে এখন পর্যন্ত (১৭ থেকে ২৩ জুলাই) প্রায় আড়াই হাজারের বেশি। আমরা জানি যে, এই মন্দ সময়টাকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রকারীরা ঠোঁট টিপে হাসছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে সংঘাত সহিংসতা স্মরণ করে জানান দিলো, দেশে দুর্বৃত্তরা সক্রিয় রয়েছে। আর এদেশে সবসময়ই দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় থাকে। তারা শুধু সুযোগের অপেক্ষা থাকে। এবার সেই সুযোগ পেয়ে দেশটাকে ধ্বংস করেছে।

রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল, বিটিভি,  সেতুভবন, বিআরটিএ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র,  পুলিশ বুথসহ বহু স্থাপনা ও জায়গায় হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি ভাংচুর করেছে ও পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। তাদের প্রায় ২০ জন কর্মির উপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। হামলাকারীরা পুলিশের উপর ও পুলিশের বিপুলসংখ্যক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা করেছে ও আগুন দিয়েছে।  যেটা বিস্ময়কর তা হলো, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাঁচদিন পর অর্থাৎ ২২ জুলাই যাত্রাবাড়ি এলাকা সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। এতেই বোঝা যায় কী ধরনের পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসীরা রাস্তায় নেমেছিলো।

প্রশ্ন ওঠে, কোটা সংস্কারের সঙ্গে যাত্রাবাড়ি এলাকার নাশকতা ও তাণ্ডবের কী সম্পর্ক? সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধান এলাকাটি পরিদর্শন করেন সোমবার (২২ জুলাই)। এলাকা পরিদর্শন শেষে সেখানে যে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে তা অবর্ণনীয় বলে উল্লেখ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে ধ্বংসযজ্ঞ হওয়া বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি চৌধুরী  আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে।’ এদেশের মানুষের জীবনহানি করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে তারা কী করতে চেয়েছিল এ প্রশ্নও করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী-কর্মকর্তা-কর্মচারির শ্রম-ঘামে তৈরি স্থাপনাগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য যেন সন্ত্রাসী-দুষ্টচক্র তৈরি ছিল। এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, সরকারের উদারতার সুযোগে ওরা এই নাশকতা চালিয়েছে। আরো কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার যে, পরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-ঘাম-শ্রমে তৈরি হওয়া স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।

আরো লক্ষ্যনীয়, পুলিশের স্থাপনা ঘিরেই বেশি নাশকতা চালানো হয়েছে। বোঝা যায়, যেন সকল আক্রোশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের ওপর। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে গড়ে তোলা সকল অর্জনই ভাংচুর করা হয়েছে। এগুলো যে পরিকল্পিত তা একদম জলের মতো স্বচ্ছ। মানুষের জন্য সকল উন্নয়নমূলক কাজ করে চলছেন শেখ হাসিনা এটা হামলাকারীদের অন্তর্জালার কারণ ছিল। দেশব্যাপী এসব অগ্রগতি ও উন্নতি হামলাকারীদের অপছন্দ ছিল। বিশ^ব্যাপী রাষ্ট্রনেতারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চানÑকী ম্যাজিক রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে। মেট্রোরেল কী শেখ হাসিনা নিজে যাতায়াতের জন্য বানিয়েছেন নাকি সাধারণ মানুষের জন্য? 

কাউকে খুশি করা বা কারো শত্রু হওয়ার জন্য এ লেখা নয়। বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে। গত ২২ জুলাই (সোমবার) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতির কাছে পরিষ্কার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত শিবির।’ বিএনপি-জামায়াত শিবিরের চরিত্র বোঝা গেছে তাদের সরকার আমলে। ২১ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সর্বোচ্চ আদালতে রায় হওয়ার পর মঙ্গলবার গুলশানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার  প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। মেধায় ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ, এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ থাকবে। কোটা নিয়ে এরপর কী কথা। বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে এখন একটি মহল আরো বেশি সন্ত্রাস ও নাশকতাভিত্তিক পরিস্থিতি চাঙ্গা করতে সুযোগ খুঁজছে। তাদের কাছে দেশ বড় নয়, দেশের জনগণ বড় নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ বড় নয়। তারা ক্ষমতায় পৌঁছুতে আরো রক্ত ঝরাতে চায়। মাংসের মধ্যে শাক জুড়ে দেওয়া কি বিচক্ষণতামূলক কাজ? ওদের নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের। নাশকতা ও নিষ্ঠুরতাকে সবাই ঘৃণা জানাচ্ছে।

 রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হয়েছে বলেই সন্ত্রাসীরা নরসিংদী জেলা কারাগারের অস্ত্র লুট করেছে। কারাবন্দীদের ছেড়ে দিয়েছে। সারাদেশের নাশকতা ঠেকাতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ  গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেকে হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। কয়েকজন পুলিশকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কর্তব্যপালন করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার।  বৈশি^ক সমস্যা জঙ্গি দমনের পর প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ আসলেই মেধাবী। এদেশে মেধাবী ও সাহসী পুলিশ রয়েছেÑএটা অসংখ্যবার প্রমাণিত। একসঙ্গে বোমা হামলা করে জঙ্গিবাদের হুলি  খেলা হয়েছিল বাংলাদেশে। এটাও পুলিশ রুখে দিয়েছিল শেখ হাসিনার আমলে। কারণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন। এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রশাসনের সুদক্ষতা। টানা চারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ চালাবার মতো সুযোগ্য মানুষ কোথায়? অন্যদিকে আমাদের প্রশাসন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী সরকারের দুঃশাসনকালে। প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনকে নষ্ট হতে বাধ্য করেছিল বিএনপি-জামায়াত। তাদের দুঃশাসনকালে আওয়ামী লীগের এমপি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়া, জনপ্রিয় নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ বহু এমপি-নেতা খুন হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের  চোখের সামনে তাদের এসব অপকর্ম ভাসছে এখনো।   

বিএনপি-জামায়াত মিলে ২০০১ সালে  জোট সরকার গঠন করে এবং  সেই  সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। জামায়াতের দুজন সদস্য তখন সরকারের কেবিনেট মন্ত্রী হন। দেশের জনগণ অবাক হয়ে দেখতে থাকল কিভাবে বাংলার মাটিতে’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, নিজামী-মুজাহিদরা গাড়িতে জাতীয় পতাকা হাঁকিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। ওই শাসনামলে খুন, চাঁদাবাজি, দখল, সংখ্যালঘু ধর্ষণ, বাড়িঘর লুটপাটসহ দুর্বিষহ অপরাধের অভিযোগ ভারী হতে থাকল। জোট সরকারের ক্যাডাররা সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রচণ্ড হেনস্থা করেছিল। দুর্নীতি, হাওয়াভবন, স্বজনপ্রীতি, বাংলাভাইসহ নানা কু-কীর্তি ওই সরকারের আমলে ঘটে। ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা তো দুনিয়া জেনেছে। বিএনপি-জামায়াত এক সভ্য সমাজে বীভৎস দৃশ্য উপহার দিয়েছিল জাতিকে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট জনসভায় গ্রেনেড হামলা হল। আইভী রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে পড়ল। শেখ হাসিনা সেই গর্ত থেকে, সেই ভয়াবহ অবস্থা থেকে দেশকে তুলে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের দক্ষতা আছে বলেই বর্তমান সময়ের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। প্রশাসনের উচ্চস্তরে যারা ছিলেন তারাও আন্তরিক ছিলেন বলে এই কঠিন কাজটি সম্ভব হয়েছিল। ভুলে গেলে চলবে না, বিএনপি-জামায়াত একজোট হয়ে অবরোধ-হরতাল দিয়ে দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আন্দোলনের নামে তারা বিভিন্ন সময় নাশকতা করেছে। ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজত ভয়ংকর তাণ্ডব চালিয়েছিল ঢাকাতে। জঙ্গি উৎপাদিত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের প্রশ্রয়ে-আশ্রয়ে। সেই জঙ্গি-সন্ত্রাসীরাই কারফিউতে এখন গা-ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে আছে। উপায় ছিল কি?  লেখক :  উপসম্পাদক- আমাদের অর্থনীতি, কলামিস্ট,  কথাসাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়