শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ১৭ জুলাই, ২০২৪, ১২:৫৯ রাত
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্যায় চ্যালেঞ্জ করে কেউ পার পায়নি

 দীপক চৌধুরী

দীপক চৌধুরী: সবাই জানি, কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। কয়েকদিন ধরে আন্দোলনের নামে যা হচ্ছে এটাকে আন্দোলন বলা উচিত কী উচিত না সেই বিতর্কে যাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে এটি কার জন্য? কাদের জন্য? রাজপথ অচল করে দেওয়ার আগে অ্যম্বুলেন্সে মৃত্যুপথযাত্রী রোগী, অ্যাম্বুলেন্সে আটকে থাকা গর্ভবতী মায়ের তীব্র যন্ত্রণা বা দাফন করতে যাওয়া মরদেহ বহনকারী গাড়ি রাস্তায় আটকে পড়ার কথা কি একবারও ভেবেছি। সাধারণ মানুষের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে প্রতি পদেপদে বাধা হচ্ছে। একবারও কি ভাবছি? অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যে আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে না সে আন্দোলন কখনো পূর্ণ পরিণিতি লাভ করে না।

এবার আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করতে চাই। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সায়েন্সল্যাব মোড় ( মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই) দিয়ে ফিরছিলাম। তখন দুপুর।  দুপুর ১২টা  থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে দুইদিকের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে  গেছে। ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় দুদিকের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পথচলতি মানুষের কী ভয়ংকর বিড়ম্বনা! হেঁটেও পথ চলার মতো সুযোগ নেই। ভয় সবার। এ যেন এক ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখছে কাজে বের হওয়া মানুষ। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজের কয়েকশ  শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়কে অবস্থান  নেন। মেরুল বাড্ডা ও বসুন্ধরায়  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ চলছিল। শুধু রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে নয়। রাজধানীর বাইরে সারাদেশে এ আন্দোলন ছড়ানো হয়েছে। দেশ অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা যেন। টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় দেখা যাচ্ছেÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কোটা সংস্কারের এ আন্দেলনে ঢাবি এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের গভীররাতের মিছিল নানা রকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। উচ্চশিক্ষায় নারী কোটা ১০ শতাংশ।  ১৫ জুলাই নয়টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও রাতভর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার এ সুযোগে ‘সুযোগ সন্ধানী’ অপরাধীরা নানা ধরনের সুযোগ নেবে। কেন ওদের হাতে এ সুযোগ তুলে দেওয়া হবে? কার স্বার্থে? 

কোটা সংস্কারের বিষয়টি এখন আদালতের হাতে। চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা করতে হবে। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার আমিও চাই। আমরা সবাই চাই। কিন্তু কেন  সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবো না? এ অচলাবস্থায় চাল, কৃষিপণ্যসহ সবজি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বহনকারী ট্রাক ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। পণ্যের দাম বাড়াটায় কিছুদিন ধরেই জনমনে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। সবজির দোকানে বা মুদি দোকানের সামনে গেলে যে বাক্যটি প্রায়ই শুনতে হয়Ñ জিনিসপত্রের দাম এতো কেন? অন্যদিকে, একটি চক্রান্তকারী মহল ‘আগুনে ঘি ঢালার মতো’ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে চলছে। 
আমরা সবাই জানি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছেন, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি পুড়েছে, সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়  দেওয়ার কারণে হাজার হাজার সাধারণ বউ-ঝি, শিশু-বৃদ্ধ, মা-বাবাকে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া কখনো কোনো সরকার ফিরেও তাকায়নি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দিকে! 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে, মহান স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন আয়োজন করছে। এটা রাজাকারদের সহ্য হচ্ছে না। যারা শহীদ হলেন, তাদেরকে হারিয়ে তাদের পরিবার, নাতি-পুতিরা কতটা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার প্রাণপণ লড়াই করেছে তা কি আমরা জানি? প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনের ভেতর রাজাকার সন্তান না থাকলে ‘রাজাকার’ স্লোগান হয় কীভাবে? রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের চরিত্র কী এটা তো অনেকেই জানে। এদের বৈশিষ্ট্য কী দেশবাসী জানেন! ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়Ñ রাজনীতির নামে এমন নিকৃষ্ট কৌশল এদেশে প্রয়োগ সহজ করে গেছেন একজন। তিনি বিএনপি নামক দলটির জনক জিয়াউর রহমান। কীভাবে রাজনীতিতে অপকৌশল প্রবেশ করাতে হয়, কীভাবে রাজনীতিকে ‘ডিফিকাল্ট’ করতে হয় আর কীভাবে রাজনীতিতে ‘৭১-এর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তা শিখিয়ে গেছেন।  ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আজম ঢাকায় ফিরে আসেন জিয়ার পরামর্শে। সেই যে আসা এরপর জিয়াউর রহমানের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই করতে হয়নি তার। শুরু করা হয় কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দেশ থেকে  নির্মূল করা যাবে সেই পরিকল্পনা। কে না জানে জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার কথা।     

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দেওয়াকে অত্যন্ত দুঃকজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও লাগে না।’ অত্যন্ত যুক্তিসংগত কথা। মানুষ এটা মনে করে যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে যারা এখনো চিনতে পারেনি তারা বাংলাদেশের ইতিহাস পাঠ করুক। জনগণের কাছে এখন পরিষ্কার যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। এ কারণেই তারা গ্রেনেড মেরেছিল ২১ আগস্ট, ২০০৪-এ। এখন, ইহজগতের ইতিহাসের কুখ্যাত লোকেরা নিক্ষিপ্ত কারাগারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭১-এর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার করেছেন ও করছেন। আমরা জানি, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করার পূর্বেই ঘাতকদের বুলেট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবন কেড়ে নিলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো  তৈরিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট, ১৯৭৩  সেই উদ্যোগেরই ফসল। ২০২৪-এ এসেও এদেশীয় যারা লাফালাফি করছেন, তাদের লজ্জা থাকা উচিৎ যে, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের দলে ভিড়িয়ে মন্ত্রী-উপদেষ্টা করার পরও গণতন্ত্রÑ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা মানে জাতির সঙ্গে মশকরা করা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি নানানরকম কৌশলে যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের রক্ষা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়প্রত্যয় ও অঙ্গীকারের কারণে তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার      

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়