আলম খোরশেদ: ছবিটি দেখার অপেক্ষা ছিল বেশ দীর্ঘ। সেই অপেক্ষার অবসান হল অবশেষে। ঢাকার পান্থপথে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে সবান্ধব দেখা হলো শবনম ফেরদৌসীর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ‘আজব কারখানা’। এর আগে শবনমের বানানো প্রামাণ্যচিত্রের বেশ কটাই দেখা হয়েছে আমার, যার মধ্যে ‘ইচ্ছাবসন্ত’ ও ‘জন্মসাথীর অভিঘাত’ এখনও সতেজ ও সক্রিয়। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ভিন্নধর্মী মিউজিক্যাল ট্র্যাভেল শোয়ে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে, বাংলাদেশের লোকগানের বিপুল ভান্ডার, তার কথা ও সুরের ঐশ্বর্য,সর্বোপরি সুগভীর জীবনদর্শনের সংস্পর্শে এসে একজন অতি জনপ্রিয়,তারকাতুল্য রকশিল্পীর মানসজগতের যে অভাবনীয় রূপান্তর ঘটে, এটিই এই ছবির মূল উপজীব্য। শবনম ফেরদৌসী তাঁর স্বীয় স্বীকারোক্তি অনুযায়ীই ছবিটিকে সূক্ষ্ম, জটিল, বহুমাত্রিক কোনো শৈল্পিক চলচ্চিত্রের আদল না দিয়ে একটি ‘মিডল সিনেমা’ হিসেবে নির্মাণ করতে চেয়েছেন।
সম্ভবত তাঁর এবং ছবিটির অন্যতম প্রযোজক, চলচ্চিত্রকার সামিয়া জামানের লক্ষ্য ছিল, একেবারে সর্বস্তরের জনগণ না হলেও নিদেনপক্ষে সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখার সঙ্গতি রয়েছে এমন দর্শকদের সকলেই যেন ছবিটি দেখেন এবং দেখে সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি, কিছুটা জীবনবোধ ও ভাবনার খোরাকও পেতে পারেন। উদ্দেশ্যটি অত্যন্ত মহৎ, সৎ ও বাংলাদেশের বর্তমান চলচ্চিত্র পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীও বটে। তবে ছবিমুক্তির দ্বিতীয় দিনের প্রথম প্রদর্শনীতেই আশানুরূপ দর্শক সমাগম না দেখে কিঞ্চিৎ বিস্মিতই হয়েছি, কেননা ‘আজব কারখানা’ ছবিটিকে তাঁর উদ্দিষ্ট ‘মধ্যচলচ্চিত্র’ হিসেবে নির্মাণের প্রকল্পে শবনমকে সামগ্রিক বিচারে মোটামুটি সফলই মনে হয়েছে আমার। এর বিষয়, ভাবনা, নির্মিতি, সিনেমাটোগ্রাফি, সর্বোপরি সংগীত যথেষ্ট শক্তিশালী ও আকর্ষণীয়। কিছুকিছু দৃশ্য ও সংলাপে পরিচালক খুবই সাহস ও সংস্কারমুক্তির স্বাক্ষরও রেখেছেন। খামতির মধ্যে, বোধগম্য কারণেই, প্রামাণ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্রের একটি কাঠামোগত টানাপড়েনের অস্তিত্ব পরিষ্কার টের পাওয়া যায়, অন্তত ছবির প্রথমার্ধে।
এছাড়া কিছু কিছু দৃশ্যে সংলাপের কৃত্রিমতা ও প্রধান দুয়েকটি চরিত্র বাদে বাকিদের অভিনয়ের দুর্বলতাও কখনও কখনও ছবিটির যথার্থ রসগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বইকি। কিন্তু তারপরও ছবিটি সবারই, বিশেষ করে, আমাদের স্প্রুাচীন লোকসংগীতের সমৃদ্ধ ধারাটির বিষয়ে আগ্রহীজন। পাশাপাশি ক্রমবিকাশমান নাগরিক সংগীতের শিল্পী ও ভোক্তা সম্প্রদায়। শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজ এবং সাধারণভাবেই শিল্প, সাহিত্য, সাংবাদিকতা ইত্যাদি সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষজনের দেখা উচিত বলেই মনে করি। এবং এরই সূত্র ধরে বর্তমান বাংলাদেশে এই ধরনের মিডল সিনেমা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা, বাস্তবতা, সম্ভাবনা, সংকট ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি আন্তরিক, খোলামেলা, বিশদ ও বস্তুনিষ্ঠ আলাপ, আলোচনার সূত্রপাত হওয়াটাও জরুরি বলে মনে করি। জয়তু বাংলা চলচ্চিত্র। পুনশ্চ: আমার চাটগাঁর সিনেমাপ্রেমিক বন্ধুদের বলি, ছবিটি দেরি না করে দেখে ফেলুন দ্রুত, পরে যেন আবার পস্তাতে না হয়। ‘আজব কারখানা’ চলছে ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের সিলভার স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহে, প্রতিদিন দুপুর সোয়া দুইটায় ও রাত আটটায়। শুভ দর্শন। ১৪-৭-২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :