শরিফুল হাসান: ভয় দেখিয়ে গুলি করে তারুণ্যকে থামানো যায় না। তারুণ্যকে দাবি রাখা যায় না। এর চেয়ে সমস্যার সমাধান জরুরি। সরকারকে বলবো, ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় প্রকাশ করেছে, তাতে সমস্যার সমাধান কিন্তু খুব সহজ হয়ে গেছে। কারণ আদালত বলেছে, সরকার চাইলে এখন কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। আর কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারবে। দেখেন, শক্তি দিয়ে তারুণ্যকে থামানোর চেষ্টা কখনোই ভালো কাজ নয়। মনে রাখবেন, নানাভাবে বাঁধা দেওয়ার পরেও তারুণ্য ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করেছিল। ওই সময় কিন্তু কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের দাবি করেছিলো শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তরুণরা তখন বলেছিল, কোটা ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। এমনকি তাঁরা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মেনে নিতে রাজি ছিলেন। ওই সময়ে কোটা ২০ শতাংশ রাখা হলেও সমস্যা ছিলো না।
তবে সরকার পুরোপুরি কোটা বাতিল করে দেয়, যেটি ছিলো অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। আমি তখন লিখেছিলাম কোটা সংস্কার না করে বাতিল করলে ভবিষ্যতে সংকট তৈরি হবে। হলোও তাই। সেই কোর্টে গড়ালো বল। ফের শুরু হলো আন্দোলন। এবার শিক্ষার্থীরা সব ধরনের কোটা বাতিল চাইলো। আন্দোলনকারীরা এখন সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে আইন পাস করার এক দফা দাবি জানাচ্ছেন। আমি এই ৫ শতাংশের সাথে একমত। কোটা এর বেশি হওয়া উচিত নয়। গত এক যুগে আমি আমার অসংখ্য রিপোর্ট আর লেখায় দেখিয়েছি কোটার কারণে কীভাবে মেধাবীরা বঞ্চিত হয়। এই বঞ্চনা বন্ধ করা জরুরি। কাজেই সরকারকে বলবো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিন। ৫ শতাংশের জায়গায় আলোচনা করে ১০, ১৫ বা ২০ শতাংশ কোটা হতে পারে। বাকি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মেধায় নিয়োগ হতে পারে।
সরকার চাইলে এখন নিজেরা সরাসরি আদেশ দিয়ে বা সংসদে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে। তা না করে পিটিয়ে ভয় দেখিয়ে গুলি চালিয়ে তরুণদের আন্দোলন থামানোর চেষ্টা একেবারেই ভুল চেষ্টা যেটা আজ বিকেলে হয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, এই কয়দিন যেভাবে শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন সেভাবেই সমাধান করুন। এই এক কোটা নিয়ে দিনের পর দিন বছরের পর বছর সংকট চলতে দেওয়া উচিত নয়। আর হ্যাঁ সংবিধানে সবার জন্য সমান সুযোগের কথা বলা আছে তেমনি ২৯ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবেই অনগ্রসর নাগরিকদের জন্য বিশেষ বিধানের নীতি আছে। সেই অনগ্রসরদের জন্য ৫ থেকে ২০ শতাংশ কোটা রাখা যেতেই পারে। এক্ষেত্রে কারা অনগ্রসর নাগরিক সেটি চিহিৃত করা জরুরি। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এগুলো ঠিক করা যেতে পারে। আর কখনো না কখনো এই কোটা পুরোপুরি শেষ করতেই হবে। আন্দোলনকারীরি বলছে, শুধু কর্মকর্তা নয় সব ধরনের নিয়োগে কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে। আসলেই তাই। কারণ কর্মচারী নিয়োগে প্রায় শতভাগ কোটা। এই বৈষম্য দূর করা জরুরি।
আবারো বলছি, বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ যে রায় প্রকাশ করেছেন তাতে কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। ওই রায়ে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে কোটা রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে সরকার চাইলে কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। তার মানে এখানে কতো শতাংশ কোটা থাকবে সেটা সরকারেই নির্ধারণ করতে পারবে। আবার কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথাও বলেছে সরকার। এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোটার পদে প্রার্থী পাওয়া না গেলে যদি মেধা থেকে দেওয়া হয় আমার ধারণা তাতে মেধা কোটা ৯০ শতাংশ হয়ে যাবে। দিনশেষে তাতে কোটা নয়, মেধার জয় হবে। আমার মনে হয় আদালতের এই রায় মেনে সরকার এখন দ্রুতই কোটার সমস্যা সমাধান করতে পারবে। এমনকি তরুণদের দাবি অনুযায়ী সংসদে আইন পাস করাও অসম্ভব নয়। নির্বাহী আদেশেও এটি বাস্তবায়ন সম্ভব। কাজেই আশা করছি দেশের স্বার্থে জনভোগান্তি দূর করতে এবং তারুণ্যের স্বার্থে দ্রুত কোটা সমস্যার সমাধান করবে সরকার। লেখক: কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :